কবি - তাপস চক্রবর্তী
একবার শুধু
একবার শুধু-- একবার আমি ফিরে যেতে চাই
চিরচেনা রুদ্র বৈশাখের কাছে,
একবার শুধু-- একবার আমি মেলে ধরতে চাই
অ আ করা বিভ্রম স্মৃতির পাতা।
তারপর
তছনছ হোক হৃদপিণ্ড, বুকের গহন--
মননের যাবতীয় ফুলস্টপ,
তছরুপ হোক লাল হলুদ গোলাপ
মনময় সবুজ বাগান
হাহাকার করুক মরুর তপ্ত বালুকণা।
ক্ষতি কি!
অতএব বাথরুম খোলা থাকুক,
নিরথর্ক আলো জ্বলুক ঘরময়।
উঠোনে নেচে উঠুক শান্তির পায়রা...
জোড়া শালিক।
তবুও শাওয়ার চলুক ওটা বন্ধ করো না---
সুগন্ধি শাবানের ফেনারা জমে উঠুক--বার্থটবে
আমিও বসে থাকি তুষার ও বুনো তুলোর আরাধনায়।
সুযোগ বুঝে তুমি ধুয়ে নিও-- যত্নে অযত্নে
যন্ত্রনার রক্তমাখা শেল।
তবুও
আমিতো আছি পথে পথে-- রাজপথে
নিয়ন আলোর সন্ধ্যায় হাজার ঝাড়বাতি তলে
ওই স্বেত চন্দ্রমল্লিকা হয়ে,
দেখো একদিন ফোটাবো-- ফোটাবোই একদিন
আমাদের কাঙ্খিত রক্তিম গোলাপ।
নিষিদ্ধ নুন হতে কতিপয় ভ্রুণ
পচনশীল শরীরে নিষিদ্ধ নুন--ঈশ্বরীয় বিয়োজন।
ঈশ্বরও নিঃসঙ্গ হতে হতে নিঃসঙ্গতায় একদিন
অহম ব্রহ্মার ভ্রুণ হয়ে জেগে ওঠে মানবতীর্থ
অতঃপর ইন্দ্রের সুচারু পাঠশালায়...
পাঠ হয় উপনিষদের ব্যবচ্ছেদ।
ব্যবচ্ছেদের উর্বর মাটিতে ধূসর অংকিত ত্রিকোণ
ত্রিকোণে এক্স ওয়াই জেড-- সঙ্গমের সংলাপ।
গণিকা সূর্য ও চন্দ্র সমকোণে বসে নিদ্রাহীন
আলো আঁধারে জাগে মন্থনের বিনীত তপস্যা...
কতিপয় ক্যাপিটালিজম কনডম বিভ্রম রাতে--
এরিস্টটলের সমাজতত্ত্বে রজঃস্বলার জমাট বাঁধা রক্ত।
রক্তে ঈশ্বর-- ঈশ্বরে রক্ত স্বয়ংভু বিমূর্ততায় রক্ত
তবুও কিছু কিছু তর্কতীর্থে রক্ত ও মাংস--
হাঁড়ের গান বাঁধে দধিচীর মন্ত্র।
যদিও হাতপাখায় ইলেক্টিক্যাল শান্তির ক্রমবিন্যাস--
তবুও বালিশে ছিন্ন রুগ্ন কতিপয় এলোকেশ
বাহুর আলিঙ্গন শেষে উপস্থিত আবির বিকেলে
জেগে উঠে একরত্তি নিয়ন আলো...
গোলাপি জরায়ু-- নিষিদ্ধ নুনের বিহ্বল কান্না
জননতন্ত্রের বাঁধা নিয়ম, অনিয়মে যদিও স্বর্গসুখ
তবুও ছুঁয়ে আসা উরু আঁধারের গান--
নিষিদ্ধ নুন হতে কতিপয় ভ্রুণ
আমাদের অস্থির সময় বাঁধে--শুধু আঙ্গুলের তান।
তোমার শরীর এবং একটি কবিতা
আজকাল এক একটা কবিতার জন্ম হয়
তোমাকে ছুঁয়ে-
তোমার শরীর ছুঁয়ে
তারপর কবিতার উল্লাসে স্তব্ধ হয় ভোরের শিশির
ভোরের পাখি
ভোরের গাছ
ভোরের ফুল ফল মেঠোপথ...
ক্রমান্বয়ে শব্দঋণ হতে হতে একদিন
ঋণখেলাপি হবো তোমার কবিতার কাছে
যেমন বুর্জোয়া বুনোফুলে নিরবে ঠোঁট রাখে
কতিপয় মৌমাছি ফুলটুসী মৌটুসী
অথচ সাম্যবাদী আরশোলার দাপাদাপিতে-
রাত নেমে আসে মাটির ঘরে, তালসারি ঝোঁপে
জোনাকপোকার ক্রন্দনে কবিতারা জাগে অহরাত্রি
কিম্বা শব্দ প্লাবণ স্বর্গমর্ত্য তোলপাড় হয় অহর্নিশ।
..
অথচ বিষ পান করেনি কেউ ভালবেসে সমুদ্রমন্থনে
নীলকণ্ঠ গণ্ডুস পেতে বিষ নিয়েছে নিজের করে-
অথচ আমি বারকয়েক তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে গেছি
নিশিথের অন্ধকারে অজানা গন্তব্যহীন পথে।
তোমার যত্নে ঠোঁট রেখেছি ঠোঁটে
ঝিঁ ঝিঁ ধরা নিরবে
নিভৃতে জলপতনের আহ্বানে
তারপর রূপকথার মতো কেউ কেউ বলেছে
তোমার চিবুক ছুঁয়ে-তোমার চোখে চোখ রেখে
অপূর্ব বেদনাহীন ভালোবাসার মর্মার্থ।
দোয়েলের ডানা ভেজা শব্দের আকুতি ছুঁয়ে
জন্ম নেয় আমার তোমার অচেনা সমুদ্রমন্থন।।
নীলকণ্ঠ এবং তুমি
হঠাৎ একটা নীলকণ্ঠ পাখি এসে বসলো-
বাঁ পাজরে লেপ্টে ছিলো একদম হৃদির কাছে
তখন আঠারোতে আমি, প্রাণ খোলা সেই আমি
আচ্ছা কতো বয়েস ছিলো তোমার?
অমনি লজ্জা আবির অধরে নামলো বর্ষা
পদ্মপুকুরের মতো ডাগর চোখে নামলো শীত
গোলাপের বনে নামলো চৈত্রের রুক্ষতা
বুকের গহনে খেলে গেলো অমৃত আশা।
হঠাৎ কে যেন বললো, পাখির ঠোঁটে ঠোঁট রেখে
বয়েসী বৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়িয়ে নতজানু লতায়
সাপের লোল নিঃশ্বাসে ঝরে যাওয়া হলুদ পাতায়
মেয়েদের বয়েস জিজ্ঞেস করতে নেই-
ওরা নদী মতো
নদীর মতো ছুটে চলে সমুদ্র মন্থনে।
ওরা আকাশের মতো
পাহাড়ের মতো অনড় অথচ সুদৃঢ়।
আমি বললাম ওসব আজগুবি কথার কথা-
বাক্যালাপ ক্ষয়ে আসে উত্তরের বিমুগ্ধ হাওয়া
তারপর কবিতার পিঠে কবিতার জন্ম হয়।
জন্ম হয় অবোধ কিশোরির বুকে পিঠে কড়িকাঠে
স্বর্গময় শব্দ তারপর শব্দরা করে নিরন্তর খেলা।
তারপর-গ্রামের মেঠো পথে পথে
নীলকণ্ঠ ফুল কুড়াতে কুড়াতে-
একদিন গ্রীষ্মের খড়রোদ্দুর-ই
জানি কাঁদাখোঁচা পাখির পালকে-ই মৃত্তিকার দহন
তবুও মনে পড়ে আবির খেলায় সকালের খুনসুঁটি।
মনে পড়ে আমার তোমার স্মৃতি-অথচ স্মৃতি মানে
দুটো পত্রের কুশল-রক্তিম শুভেচ্ছা দুটো প্রাণে
কিম্বা হাত জোড় করা তোলপাড় প্রথম মননে।
আজকাল ডুমুরের ডালে বুলবুলির তান
উৎসবে উৎসবে লালপেড়ে শাড়ির বাণ
উঠোনে দোয়েলের লুটোপুটি শিমের মচায় টুনটুনি
সবুজে ছুঁয়ে আসে কুন্দুফুলের তান।
হঠাৎ সেই ফাঁকে
একটা নীলকণ্ঠ পাখি এসে বসলো-
ভেসে আসে বিগত দিন
ভেসে যায় এইসব ঋন।।
যতি--রতির বরাবরে
আমাদের কথার রতি শেষ হতেই মৃদু স্বরে বললে,
যদি পারো একটা কমার বিপরীতে সাজিয়ে নিও
আমি তেমনটাই একদিন চেয়েছিলাম--
বিকেলের হাওয়ারা উড়ে আসুক বৃক্ষের পাতায়
ফুল আর পাখির গান হোক মৃত্তিকার সুধায়
আমি না হয় বসে থাকবো বোধিবৃক্ষের ছায়াতলে
সমাধিবৈশ্য হয়ে।
আমাদের কথার রতি শেষ হতেই মৃদু স্বরে বললে,
যদি পারো একটা কমার বিপরীতে সাজিয়ে নিও
আকাশনীলার স্বপ্নময় রুপোলী চাঁদের আলোয়
একদিন হয়ে যাবো অনায়াসে যীশুর ক্রুশ--
সটিবন ভিজে আসা জোনাকির ক্রন্দন।
তোমার ঠোঁটের অঙ্কনে সহস্র পূণ্যতীর্থ মানি
তবুও বেদনায় চিরচেনা চৌরাশিয়ার বাঁশি।
আমাদের কথার রতি শেষ হতেই মৃদু স্বরে বললে,
যদি পারো একটা কমার বিপরীতে সাজিয়ে নিও
মাঝে মাঝে তুমিও বনলতার চোখের মতো হয়ে উঠো
হাত রাখো রঙিন ধ্বজায়, নন্দিনীর স্বেত তুর্যে...
আমিও মাঝে মাঝে বিশুপাগল হয়ে উঠি---
তোমায় বলি, বাজপাখির অসমাপ্ত গল্পটা...
অথচ গল্পের সেমিকোলনরা হেসে উঠে অনয়াসে,
আমাদের কথার রতি শেষ হতেই মৃদু স্বরে বললে,
যদি পারো একটা কমার বিপরীতে সাজিয়ে নিও
অথচ ইনভাইডেট কমার মধ্যে আবদ্ধ সংসার
যেটা আজ বড় বেপরোয়া,
অনেকটা চুম্বনদৃশ্যের দীর্ঘশ্বাসরা দীর্ঘ হয়েছে
যেমনটা টোল পরা অধরে দাঁড়িয়েছে ফুলস্টপ।
এক বিন্দু আমিত্ব
এক যোজন শস্যখেত হলুদ ফুলের লাভা
এক বিন্দু আমিত্ব আমার তোমাতে বাঁধা।
কার্টিজ পেপার রংতুলিতে জল জল শুধু-ই খেলা
স্টেন পাটাতন সিঁড়ির খাজে জীবনের সারা বেলা।
এক শলা সিগারেট আমার স্বপ্ন ঠোঁটে আঁকা
এক বিন্দু আমিত্ব আজ তোমার মাঝে রাখা।
সিক্স এইচ বি পেন্সিলেতে তোমাকে আজ আঁকা
ফাইন্ডেট কলমে আমি কবি শুধু তোমাকে লেখা।
এক রাশ গোলাপ তোমার নীল চোখে দেখা
এক হাজার প্রেম নষ্ট চোখে তোমাকে লিখা।
ইটের ভাঁজে ভাঁজে খাজে কত চুন সুরকির পরত
মনে পড়ে তোমাকে তোমার রাঙানো সন্ধ্যা শরত।
একবার হাজারবার তোমাকে নিরবে ডাকা
এক বিন্দু আমিত্বে তোমাকে আমার শেখা।
কবিতার খাতা নগ্ন মগ্ন কবিতার মাঝে রাত জাগা
গল্প করা তোমার মাঝে কবিতারা আজ বড় একা।