তিনটি কবিতা । এ কে এম আব্দুল্লাহ
আমাদের গল্প
তোমার ঠোঁটের লালে ডুবে যাচ্ছে পৃথিবী এবং চুমোর গন্ধ। লালার ভেতরে
নেমে যাচ্ছে পৃথিবীর সিঁড়ি পাতালের দিকে। যেভাবে পাহাড় থেকে নেমে গেছে
আদমের পদচিহ্ন।সেখান থেকে হয়ত আমরা আবার শুরু করবো আমাদের গল্প। এখানে
অনেকেই আসে। কথা বলে—অপারেশন টোয়লাইট, হিটব্যাক কিংবা
অপারেশন ম্যাক্সিমাস সহ নানা বিষয় নিয়ে।
কলসি কাকে যুবতীরাও আসে। কিরণমালা শাড়ির আঁচল কোমরে প্যাচিয়ে ডুবে
যাওয়া সিঁড়িতে দাঁড়ায়। জল ভরে। তারা নিজেদের মধ্যে কথা-বার্তা বলে।
আমাদের চারপাশে জলেরঢেউ সে কথাবার্তা লিখে রাখে তাদের নোটবুকে।
এভাবে একদিন পৃথিবী— ব্যার্থতার আঁচল গুটিয়ে ঢুকে পড়ে পুরোনো খাপের ভেতর।
তারপর, গাছের গুড়িতে যেভাবে গজিয়ে ওঠে নতুন গাছ ; আমরাও সেভাবে গজিয়ে উঠবো জলের ভেতর থেকে। সঙ্গে নিয়ে এক পৃথিবী নতুন গল্প।
বিস্ময়বৃক্ষ
একদিন বসন্ত এলে পাহাড়ের বুকে— আমরা মিলিত হলাম পর্বতচুড়ায়। আকাশের
পবিত্র জ্যোৎস্না মেখে চারপাশে শুরু হলো ফুলের নাঙা উৎসব। ছুটে যাওয়া
নক্ষত্রবৃন্তের-কষ দেহে ল্যাপটে আমরা ঘুমিয়ে গেলে— রমণীদের হাতে হাতে
অঙ্কিত হলো গাঢ় মেহেদীর আলপনা। বুকের ঘন সৌরভে কুয়াশার
মতো ঢেকে গেলো পুরো পৃথিবী। আর আমাদের মিলনে জন্ম নিল সূর্য এবং সাগর।
সময়ের হাত ধরে নাড়িকাটা উৎসবে একদিন বিচ্ছিন্ন হলো রাত আর দিন।আর
চোখের ক্লান্তি ভোরের ডানায় উড়ে গেলে,দেখি— নূহের মহাপ্লাবনের শেষপৃষ্ঠার
মতো চারদিকে পড়ে আছে— ছিন্ন-ভিন্ন বিছানা, চুড়ির টুকরো,ভাঙা আবেগপাত্র...
পাশ ফিরে তাকাই।দেখি— তুমি সেজদারত ঈশ্বরের খোঁজে।
গৃহযাত্রা
জান্নাত থেকে নেমে এলো যে মাটির পুতুল ; সে ভুলে গেলো ফিরে যাবার পথ। এখন কোস্টায় বসে জীবনপেয়ালায় পান করে হটচকলেটের বুদবুদ।
বহুযুগ কেটে গেলো ঘুমে। যে ঘুমের ভেতর ভাঙলো পর্বত, নূহার তান্নুর।
ফেটে গেলো আকাশের বিশাল দুয়ার। সে এখন ভাসমান খড়ের মতো—ঘুরপাক খায় কুইয়ারা
জলকুণ্ডলীর ভেতর।
ক্ষত-বিক্ষত অদৃশ্য ভাবনা— ফ্রেমের মতো ঝুলে আছে দেয়ালে,দ্বিধান্বিত।
নি:স্বজীবন সীমান্তে এখন চেয়ে থাকে মুখপানে। মায়ার পাঁজর ছিঁড়ে অবশেষে
পরাজিত সৈনিক।