তিনটি কবিতা । শামীম আহমদ
বুদ্ধিমান হাসেনা
আজ সফেদ শাড়ী কেনো কবিতা
তাহলে আমি কি খুব শীঘ্রির মরে যাবো ?
চেয়ে দেখো ঐ দূর আকাশে
একটি সরু চাঁদ লিখেছিলাম কাল
এখনও পূর্ণতা পায়নি
তবুও পুরোটা আকাশ ভাসছে বন্যায় ,আলোর ।
আকাশ পরীগণ সাজিয়ে রেখেছে সপিংমল
আর লিখে রেখেছে
এখানে শুধু হাসি বিক্রি হয় ...
বুদ্ধিমানের প্রবেশ নিষেধ ,কারণ বুদ্ধিমান হাসেনা
বোকারা সারাজীবন হাসি উড়িয়ে যায়
বুকের সমুদ্র থেকে ঠোঁটের তীর পর্যন্ত
হা হা হা ...
অবিশ্রান্ত কান্নার ঢেউ
(এই কবিতাটি উৎসর্গ করলাম সিলেটের বানবাসী মানুষকে )
বুকভাঙা পুরানো কবরের মতো
ভেঙে গেলো হাওরী বাঁধ
বাওরি বাতাস এসে
উড়িয়ে নিলো কৃষাণীর পুষ্পিত হাসি
বড় অসহায় আজ বন্যাপারের মানুষ
আমরা সবাই বানবাসী ।
গোয়াইনঘাট থেকে সুনামগঞ্জ
আর সুরমার অববাহিকা থেকে মনুর শেষ পর্যন্ত
একহাত মাটি নেই কোথায় দাঁড়াবে মানুষ ।
শুধু জল আর জল থৈ থৈ কান্নার রোল -
আকাশে বাতাশে ,জলে কান পেতে শুনি ছোট্ট শিশুর চিৎকার ,
ও আম্মাগো আমারে বাছাও
ও আব্বারেবা আমারে ফানিয়ে নিলোগো রেবা আমারে তুলো ,,
মা আর বাবা নির্বাক কিংকর্তব্যবিমূঢ়
কেবলই উপরের দিকে চেয়ে বিড়বিড় পাগলের প্রলাপ বকে আর আল্লারে কয় আমার ধনরে বাছাও ও আল্লা
ভগবানরে কয় ও ভগবান তুমি অন্তহীন দয়ার সাগর ।
বানের জল !
মনে হয় যেনো আকাশের রূদ্ধ কপাট ভেঙে
ধেয়ে আসা সৌরস্রোতশ্বিনী প্রমত্তা উত্তাল ,
বোনের শক্ত মুষ্টি খুলে ভাইকে ছোঁ মেরে উড়িয়ে নিলো ক্ষুধার্ত ঈগলের মতো ! বোনের নির্লিপ্ত
চোখে লুহাওয়ার দিকভ্রান্ত আর্তনাদ ,
সারিসারি লাশ ,একখণ্ড শুকনো মাটিও নেই
কোথায় দাফন হবে কে জানে কখন !
শ্মশানে শ্মশানে শুনি বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মিছিল!
নাড়ির বন্ধন খুলে লক্ষ্মীন্দরের মতো ভাসিয়ে দেয় মা তাঁর বুকের মানিক ,হায়রে নিয়তি তুমি বড্ড নিষ্ঠুর ।
সলিলে সমাধি আজ বৃহত্তর সিলেট
জলে জলে ছয়লাপ বিস্তীর্ণ সোনালী উদ্যান ।
ক্রোশ ক্রোশ জলাশয় জুড়ে উঠে অবিশ্রান্ত কান্নার ঢেউ ,
যে ঢলে প্লাবন এলো সে জল হিন্দু না মুসলিম কে জানে ,আমি শুধু জানি অগণন মানুষের আর্তনাদে থরথর কাঁপছে ঈশ্বরের বুক ...
সৌরমাতাল
দৃষ্টি লাফাতে থাকে।হাঁড়ের ফসফেট থেকে
জেগে ওঠে মৃত ক্যালিওগ্রাফিতে আঁকা
প্রাগৈতিহাসিক ভ্রুণ ! আমরা জড়িয়ে পড়ি
বিতণ্ডায়,
মানবতা পথ হারায় । সাপের খোলসের মতো
পুরাতন আস্তিন ফেলে নবরূপে হয় জাগরণ
এ জাগরণ যেনো
শুক্রাণুর অদম্য নিস্ফল প্রতিযোগিতার নাম ।
দীর্ঘ মন্থন শেষে ভৃগুর সন্যাসকাল ভাঙে
অতঃপর ,
রক্তমদিরায় সাজে নীশিতের জলসাঘর
নরসুন্দর ক্ষৌরকর্ম ফেলে সমস্বরে তুলে কোরাস
রাত্রি বিলাসীনি ,জলনটির মাংসল নিতম্ব পথে
কেউ কেউ খুঁজে নেয় স্বর্গের সরুপথ !
আর আমি সূর্যের অশ্রু পান করে হই সৌরমাতাল।
নেশাতুর চোখে দেখি দিগ্বিদিক উড়ছে টিকি আর পাঞ্জাবি ।