লাইব্রেরি রঙ খেলো
লাইব্রেরি, রঙ খেলো,
শরীর, শরীর সাজিয়েছি,
প্রতিটি গাছের ডালে
ঝুলিয়েছি অব্যর্থ নিশানা,
একবার ছুঁড়ি যদি, মুহুর্তে অন্ধ হয়ে যাবে,
একবার ছুঁড়ি যদি, জানু পেতে চাও সমর্পণ,
ডালে ডালে ঝোলে শাড়ি
হলুদে হলুদ হয়ে যায়,
বনময় এ হলুদে আমাদের কি-ইবা যায় আসে?
আমরা খেলতে আসি, রঙ খেলা,
বইয়ের শরীরে
সামিল গোলাপ ফুল, চাপা পড়া পাতা
ফেলে দিয়ে রঙ দেব,
অক্ষরের চোখের নিচে জমা কালি,উৎকীর্ণ বেদনা,
সব আজ ঢেকে দেব রঙ দিয়ে, চোরাটান দিয়ে
বসন্তের নৃত্য খেলো, লাইব্রেরি-
তোমার প্রতিটি ধাপ,
ভোরের আগেই আজ ভরে আছে, হলুদ, হলুদ!
পাড়ায় লাইব্রেরি খুলল
দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি,
আলো জ্বলছে,
দেখতে পাচ্ছি
তোমার চিবুক,
ডান ও বাম পাতা
পরম আদরে ধরে আছে,
দেখা মাত্র জেনে গেছি ধর্ম কী তোমার,
জানলা ফুঁড়ে মাথা যার আকাশ ছুঁয়েছে,
সে তো পাঠক এক, আজন্ম, আগ্রাসী,
আলো দেখে পতঙ্গের মতো এগিয়েছি,
কালকেও দেখিনি যা, আজ তা স্পষ্ট হল মায়া গোধূলিতে,
মহুয়া গাছের নিচে, বাঁশপাতি পাখির ছায়ায়,
তাহলে লাইব্রেরি খুলল শেষমেশ, এই পাঠরুদ্ধ পাড়াতেও!
গার্হস্থ্য হিংসা ও লাইব্রেরি
এইসব খুব সাহায্য করে, চাল ধোয়া, চায়ের পাতা বাগানে ফেলে আসা,
ভাতের হাঁড়ির টগবগে জল, গোপন সন্তাপে চায়ের লিকার হয়ে ওঠা,
আবার নতুন সব্জি কাটা হয়, তার খোসাগুলো আবার বাগানে,
সেখানে ছোট ছোট হাল্কা সবুজ শুঁড়ে আঙ্গুল আঁকড়ে ধরার চেষ্টা-
এ সমস্ত খুব সাহায্য করে, এসব করতে করতে কান থেকে চোঁয়ানো রক্তের দাগ মুছে নেওয়া যায়,
গাঁদা পাতা থেঁতলে কপালের টাটকা দাগের ওপর লাগানো যায়,
এমনকি ফ্রিজ, ফ্রিজ খুলতে, বন্ধ করতে, আবার খুলতে গেলে বরফের কথা মনে পড়ে-
কিন্তু শুধু বোঝা যায় না, এসবের মধ্যে লাইব্রেরি কই, লাইব্রেরি কীভাবে আসতে পারে?
অনিবার্য
তারপর আমি ডায়েরি লিখতে শুরু করলাম, ডায়েরি।
কবে কোথায় গিয়েছি, কার কার সঙ্গে দেখা হল
কী কী কথা হল আমাদের,
কোথায় গল্প পড়লাম আমি, কোথায় কবিতা,
এইভাবে একের পর এক এন্ট্রি করে গেছি তারিখ সাজিয়ে সাজিয়ে,
আসলে আমি শুধু তোমার কাছেই গেছি, লাইব্রেরি,
তোমার কাছেই বসে পড়েছি, নন্দনতত্ত্ব, ফুলেদের ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস,
হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা সূত্র না মেনে কীভাবে একটা জীবন একটা জীবনের দিকে অবধারিত যাবেই-
এ তো আমাদের জানাই ছিল,
উপমহকুমা শহরের অন্ধকার লাইব্রেরির ভাঙা তাকের আড়ালে
লুকিয়ে ছিল যে বই বছরের পর বছর ধরে, তাদের কেউ না কেউ পড়বেই,
খুঁটে নেবে তাদের অক্ষরবিষাদ,
তুমিও তো জানতে লাইব্রেরি, জানতে না, বলো?
শীঘ্রপতন ও লাইব্রেরি
আমি অনেক বছর ধরে বুঝতে পারছিলাম
আমার ভেতরে কোন পাঠ তৈরি হচ্ছে না,
আমি সারাদিনে হয়তো আধখানা অক্ষর পড়লাম,
কিংবা বড়জোর ব্লার্ব,
একটা অনুচ্ছেদ পড়তে গিয়ে আমার শীঘ্রপতন হয়ে গেল,
বললে বিশ্বাস করবেন না জানি
তিনমিনিটের কম, বস্তুত তিনমিনিটও আমি কোন বইয়ের মধ্যে থাকতে পারি নি।
এমনিতে আমার যে কোনো সমস্যা হচ্ছিল তা নয়,
আমার কান দুটো একইরকম ছিল, ঝুলে পড়া,
আমার শিরদাঁড়া, রেশমি উলের,
চামড়া খুব মোটা, দুর্ভেদ্য
শুধু স্তনের নিচে একটি গোপন অশ্রুমতী নদী, কেউ জানতে পারেনি।
সেই নদীর ধারে এক আশ্চর্য দুপুরে একটা লাইব্রেরি গজাল,
আমার সমস্ত শরীর বই,
আমি আমাকে নিজেই পড়ছি, পড়ে চলি অবিরাম....