কবি : তোফায়েল হোসেন
অপ্রকাশিত রায়
অন্ধকার পরিপাটি- দোলহীন লাউয়ের ডগা,
কথিত সূর্যের আলোতে নিস্প্রান সবুজ পাতা।সালোকসংশ্লেষণ জীববিজ্ঞানের পাতায়
আঁকা, হুলোবিড়ালের পৈশাচিক গোঁফে হননের লিপ্সা, ঝলসানো মুখ, মৃতপ্রায়
নেংটি ইঁদুরের সন্তানেরা নিয়তির বেওয়ারিশ ঠিকাদার খননপ্রিয়, জিঘাংসু।
পানশালা-জলসাঘর কখনো ড্রইং কাম ডাইনিং,
ডাইনীর দেয়ালে ঝুলে সারিসারি মস্তকহীন খুলি।
ক্ষুধার্ত মুখ ছিড়ে খায় ভাটিয়ালী সুর, গান, বাদ্য,
অগোপনীয় ও অপ্রকাশিত রায় পড়ে ছায়া মঞ্চে, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত খণ্ডিত জাতীয়তা ও বিভ্রম রাষ্ট্র।।
ভালোবাসা দিলে
ভালবাসা দিলে বেঁচে যায় গাছ, নদী, নারী, মাছ
রণাঙ্গনের সৈনিক হয়ে উঠে অশ্বের চেয়েও তেজস্বী, অদম্য অপ্রতিরোধ্য। ঘর বাঁচে, পর বাঁচে, বাঁচে সভ্যতা।
ভালোবাসা দিলে বেঁচে থাকে- ষোড়শী চাঁদ, পূর্ণিমারাত, পাখির কলরোল, বাতাসের নাঁচ। খাঁখাঁ মরুভুমিতে ফুল ফোটে, মৌমাছিরা ফুলেফুলে নেচে বেড়ায়, পাতার ফাঁকে আনন্দে মেতে উঠে টুনটুনিটাও।
ভালোবাসা দিলে সরে যায়- সকল অশুভ, অযাচিত কালো, ঘোর অমানিশা, নিষিদ্ধ প্রহর। থেমে যায় অবাধ্য ঢেউ, চৈত্রের দাহ, কালবৈশাখী ঝড়, অন্ধকারের গান।
ভালোবাসা দিলে কলম কথা বলে। প্রতিটি সকাল আসে জানালা দিয়ে নির্মল সুখের সাথে। দোয়েলের শীষ, মোরগের ডাক, পাখিদের কিচিরমিচির সব সব সবই হয়ে যায় পবিত্র আত্মার।
ভালবাসা কমে গেলে- যোজনযোজন দুরে সরে যায় যার হাতে প্রাণ থাকে- সেও। স্বার্থপর হয় চাঁদ, তারা, পৃথিবী, সুন্দরী রমনী ও মাধবীরাত। সরে যায় ক্যালেন্ডারে পাতা। মরে যায় শনি থেকে শুক্র, পূর্ব থেকে পশ্চিম, গোলাপের কলি, ডাহুকের বিরহী ডাক, কোকিলের কুহুতান।
এবার ভালোবাসবো সব কিছু ভুলে ভেঙেচুরে একাকার করে। একাকী এবং নিভৃতে, হাঁটু গেড়ে।।
আংটি ও বাহক
এ এক নিরুত্তাপ এবং শীৎকারহীন প্রেম!
কুমারীর স্তন ও সুমিষ্ট সুরার বীভৎস উল্লাসে
একপাল শেয়াল ছিড়ে খায় গৌর সকাল।
হিংস্র যন্তুর ফুসফুসে ভরা সাদা মানুষের বুক,
তারাই সর্বেসর্বা স্বীকৃত প্রেমিক, প্রেমিকই বটে!
আঙুলের আংটি জানে বাহকের কর্মস্খলন,
অমৃতের কত স্বাদ বুড়ো আঙুলে কে জানে?
সবুজ কি জানে লাল এর বুকে কত কষ্ট?
কত স্বপ্ন জীবন্মৃত ও কতক আজীবন মুক্ত?
বিবির নিতম্বের ছাল তুলে ঘরোয়া প্রেম,
শকুনের চোখ চেটেপুটে খায় পোয়াতি ঠোঁট
নির্লিপ্ত চোখে দেখি সাধু শুয়োরের বাচ্চা!
আশ্চর্য এই দেখে-
শুয়োরের বাচ্চাগুলোও গর্বিত শুয়োরের বাচ্চা!
ওয়াশিং মেশিন
একদিকে জল আরেকদিকে শুকনো বিস্তীর্ণ ভূমি
পৃথিবীর পথগুলো আবাদী জমির আইলের মত,
নদী-নালা সুতোঁর মত ; গর্তে লুকায় শিং আর বাইম।
কাঁকড়ার নজর কানি বগের। লোহা কাটার মেশিনে
হৃদয়ও কাটে- এস্কুভেটারে ভাঙে কংক্রিটের বিল্ডিং।
মেট্রোরেলের লেবারের চিকচিকে ঘামে নির্মিত স্বর্গে বসা
একদল দাতাল শুয়োর ও শুয়োরদের বাচ্চারা।
একবেলা খাবার ও প্যারাসিটামলের জন্য যারা বেশ্যা হয়
তাদের হিসেব হয়, অথচ মাগুর মাছ নিয়ে সবাই নিশ্চুপ!
পরাণমাঝির ত্রয়োদশী মেয়েটার বুক ফুলে ঝুলে যায়,
দুইটাকার লোভে রাইতে বেগার খাটে,
পেট ফুলে মাটির কলসির মত হয়, আর শালার পুরুষ-
নিমপাতার জলে গা ধুয়ে নিস্পাপ ও সাধকও হয় বটে!
সত্যি বললে- এই বিস্তীর্ণ আকাশতল এক বেশ্যালয়,
পুরুষগুলো একেকটা আস্ত বান্দরের মত বেজন্মা,
প্রার্থনালয়গুলো যেন একেকটা ওয়াশিং মেশিন,
হঠাৎ করে একদিন শুনি 'আমরাও মানুষ', বেশ্যা কিংবা
স্খলিত নই, তিন স্বীকারোক্তি সেই 'লোকটা ভাল ছিল'।।