প্রতিক্রিয়াহীন
'মেঘদূত' - পড়তে পড়তে
প্রতিক্রিয়াহীন মনের শুষ্কতা লক্ষ্য করি
শীতের রোদে মা আমলকী মেলে দিত অতি যত্নে
বুঝতে পারি,
শুকনা কিছুতে দুঃখ জমে না অতি সহজে।
প্রেম
না, কোন জোর জবরদস্তি নয়
যেতে চাইলে চলে যেতেই পারো,
যদি থাকতে চাও,
দুধভাতের থালা ধুয়ে খাওয়া জলের মতো
না দুঃখ না আনন্দ
শুধু স্বস্তি হয়ে থাকো।
বাঁধন
একবার চলে যেতে দাও
দেখবে আমার থেকেও আমার কবিতা
তোমায় অধিক আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছে ।
সহজিয়া পরাণ
ছিপি হারানো হে পুরোনো কলম,
অন্ধকারের প্রতিধ্বনিকে সর্বভুক মেনে নিয়েও
শেষবারের মতো এঁকে দাও
ব্যাখ্যা বিশ্লেষণহীন একটা সহজিয়া পরাণ।
ভ্রান্তি
জীবন, সঙ্গী করেছে ভাঙা মাস্তুল
আর আমি তুমি ও আমরা
বিচিত্র বর্ণের ফাঁকি এঁকে
শুধু
স্কচবাইট দিয়ে ঘষে তুলি
হাঁড়ির গলার ফেনের দাগ।
প্রত্যাখ্যান
চন্দন চর্চিত তোমার শুদ্ধ প্রত্যাখ্যান
আমায় শূন্যতার সওয়ার করায়
সেখানে শিল্পগঠনের কোন তাগিদ নেই
আছে এক ঘুমন্ত উনুন
আর জলের উপর ভাসতে থাকা গাছেদের মৃত ছায়া।
কলম
যদিও ঔচিত্যকে ঝুলিয়ে রাখি
গাছের সর্বোচ্চ ডালে
তবুও জুতোর বাক্স যখন
পুতুলের সুখী গৃহকোণ
তখন ঘোমটাহীনা কলমকেই
নির্দ্বিধায় বের করি সুধীমহলে।
নীরোগ ইচ্ছে
আমার পাঁজর হাতড়ে
কৃত্রিম আকাশের ব্যান্ডেজ খুলে
উড়িয়ে দিই নীরোগ ইচ্ছে
তুমি ফালতু কবিতা বলে
ছিঁড়ে কুটিকুটি কর।
ক্ষতের পদাবলী
তোমার কাছে থাক
পুনর্মুদ্রিত জমায়েত রোদ
আর আমার কাছে -
আগুনখেকো ক্ষতের পদাবলী।
ছোঁয়া
আগুনের ছ্যাঁকা লাগলে
আঙুল যেভাবে হয়ে ওঠে
আরো জোরালো
বল, ততটুকু ছুঁতে পারবে কি আমায়?
চাকা
মধ্যরাত
জানি ঘুমহীন তোমার চোখ
বাইরে ক্লান্তিকর জ্যোৎস্না
শুধু ক্ষয়ে যাওয়া দৃশ্যরা
বুকের ভিতর চাকা হয়ে ঘুরে।
আন্ধারস্তম্ভ
প্রলয়জলে শায়িতের নাভিমূল নয়
করাল কালিকার নগ্ন বুকের মত
অন্ধকার দ্বিখণ্ডিত হও
আমি প্রবিষ্ট হব
কোনদিন এই আন্ধারস্তম্ভকে
ভেঙেচুরে তছনছ করে
পেলেও পেতে পারো
কোনএক জ্যোতির্বিদের চমৎকারী নক্ষত্র ।
পরকীয়া
আগুনের ভেতরের লাবণ্য
বিস্ফোরণের বিপরীত লিঙ্গ
চিরকাল অন্তরদহন নিয়ে
কবিকে জিইয়ে রাখে
এই পরকীয়ার কোন ভাব সম্প্রসারণ নেই।
মন্ত্র
আমি তোমার ছবি নয়
ছায়ার ভেতর বাড়িয়ে দেওয়া
তোমার হাত হতে চাই,
আমি তোমার প্রেয়সী নয়
তোমার নিত্যপূজার মন্ত্র হতে চাই।
নীরবতা
শব্দরা খুনি হয়
শব্দরাই জনক
আমি নীরবতাকে কুমারীমাতা রূপে
তাই চিরকাল আরাধনা করি।
তোমার আকাশ
অর্ধকোটি বছর আগে
অন্ধকারের উরুতে
যে পাথর পুঁতে ছিলে
তাতে আজ প্রতিধ্বনিত হয়
তোমার আকাশ।
মৃত্যুশোক
আমার মৃত্যুশোকে
ভিখারি হয়ে তুমি
ঈশ্বরের পদপ্রান্তে বসো না
বরং বাঁশিওয়ালা হয়ে লিখে যেও
একটি ফড়িংয়ের জন্মকথা ।
কবর
আমার কবরের মাপ আমিই
দুই হাতে শুধু মাটি আঁকড়ে থাকা
পেট চিরে একটা দু'টো গাছ উঠলে
পাখিরা খুশি হয় দোয়া করে
আশপাশের পিঁপড়েরা পাঠশালা খুলে
চুলের অসুখ নেমে আসলে
গাছের লেপ জড়িয়ে শুয়ে থাকে
আর পাতার দাম্পত্য পেড়িয়ে
ঈশ্বর এসে ঝাড়ু দেয় কবরের মুখ।
বিষন্ন শিল্পী
একে-অপরে আচ্ছন্ন হবার প্রত্যাশায়
আমরা বাংলা কবিতায় অপচয় করি সময়
আর বিষন্ন শিল্পীর মতো
তোমার তৃষ্ণা গলে শুধু নদী হয়ে যায়।
মুখোমুখি
আমার ঘরের বারান্দা
আর বহুদূর পাহাড়ের গায়ে
তোমার ঘরের ছোট্ট জালালা
এভাবেই আমরা মুখোমুখি বসি
লালনের গানের মতো
কৃষকের ফসলের মতো
ভালোবাসায় বেদনায়
একটা দীর্ঘ কবিতা রাজত্ব করে বুকে
তুমি যখন বাতাসে তুলো উড়ে যাওয়া দেখ
আমি তখন শুনি
একটা ফড়িং উড়ে যাওয়ার শব্দ।
ভালোবাসি
চিৎকার করে বার বার বলতে পারি
ভালোবাসি ভালোবাসি
তুমি ভীরুর মতো শুধু
ফিসফিস করো কানে
কারুকার্যময় মদের গ্লাসে
তোমার ফিসফিসে আমি সুর বাঁধি।
অদ্ভুত অন্ধকার
একটা অদ্ভুত অন্ধকার
অক্টোপাসের মতো শাখা প্রশাখা বিস্তৃত
তার গায়ে ফুটে আছে অজস্র জোনাকি
ঘ্রাণ ছড়ায় অন্ধকার -
এক্কেবারে অন্য দেশ!
এক ফুটফুটে বালক
সে ঘ্রাণ মেখে নেয়
তার বোতাম খোলা একবুক জমিতে ।
সৌন্দর্যলিপ্সা
এক নক্ষত্রশূন্য আকাশ
আর আমার স্বেচ্ছা নির্বাসন
হাজারমুখওয়ালা অন্ধকারের মাথায়
তুমি স্থাপন করো এক একটি জোনাকি
আমি ঘ্রাণ পাই তোমার
ভয়ংকর সৌন্দর্যলিপ্সার।
ভুলে গেছ বহুকাল
তোমার পাশে শুয়ে আছে যে নারী
সে আসলে মৃত
যে তোমাকে ভালোবাসে
সে ঝুলে আছে গাছের ডালে
যে গাছে জল দিতে
তুমি ভুলে গেছ বহুকাল।
প্রেমিক শহর
যে শহর তার প্রেমিকার গায়ে
মাখিয়ে দিয়েছিল প্রাচীন ঔজ্জ্বল্য
সে আজ সান্ত্বনা খুঁজে চলে,,,