ধর্ম, বিজ্ঞান আর যাদু - তন্ময় আলমগীর
ধর্ম, বিজ্ঞান আর যাদু -   তন্ময় আলমগীর

ধরা যাক, আকাশে মেঘের চিহ্ন নেই। অনাবৃষ্টির আশঙ্কা। বৃষ্টি না হলে ফসল ফলবে না।

ফসল না ফললে মানুষ বাঁচবে না।

তাহলে উপায়?

উপায়ের ধরণ তিন রকমের হতে পারে।

সেই তিনটি ধরণের ব্যাপারে সম্যক ধারণা নিতে পারলে ধর্ম, বিজ্ঞান আর যাদু বিশ্বাসের সন্ধান পাওয়া যাবে।

ধর্ম

একজন বলল, হে সৃষ্টিকর্তা! রক্ষা করো। সে প্রার্থণা করল, মান্নত করল। মিনতি জানাল দেবতার পায়ে, সৃষ্টিকর্তার কাছে। তার বিশ্বাস এতে দেবতার করুণা জাগবে, সৃষ্টিকর্তা খুশি হবেন। তার মনে করুণা জাগলে বৃষ্টি পাওয়া যাবে। কেননা বৃষ্টি যে হয় তা তারই ইচ্ছায়। এই লোকটির নাম হলো ধার্মিক। এই লোকটি যে কথায় বিশ্বাস করে তার নাম হলো ধর্ম। ধর্মের মূল কথা হলো, দুনিয়া চলে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়। তার ইচ্ছা ছাড়া কোথাও কোন ঘটনাই ঘটতে পারে না। মিনতি করে, মান্নত করে, উপাসনা করে তার মন পাওয়া যায়।

বিজ্ঞান

আর একজন মানুষ হয়তো বেরিয়ে আসবে তার গবেষণা থেকে। বলবে, অনেক পরীক্ষা করে আর অনেক মাথা খাটিয়ে বৃষ্টি হবার নিয়ম আবিষ্কার করেছি। এই নিয়মগুলোর ওপর নির্ভর করেই এমন ব্যবস্থা করা যায়, যাতে আকাশে মেঘ জমিয়ে বৃষ্টি বর্ষণে বাধ্য করা যায়। লোকটি হয়তো অনেকরকম যন্ত্রপাতিও বানিয়েছে। তারই সাহায্যে সে আকাশে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করবে। এই লোকটির নাম হলো বৈজ্ঞানিক। যে কথায় তার বিশ্বাস তার হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের মূল কথা হলো, দুনিয়াটা নিয়মের রাজ্য। এখানে যে কোন ঘটনাই ঘুটুক না কেন, তা নির্দিষ্ট নিয়মের দরুন ঘটে। কারোর ইচ্ছে-অনিচ্ছের ওপর কোন ঘটনাই নির্ভর করে না। প্রকৃতির নিয়মকে ঠিকমতো জানতে পারলে সেগুলির দরকার মতো পরিবর্তন করা যায়।

এই দুজন লোকের কথাতেই আমরা বেশ সহজেই বুঝতে পারি ধর্ম কী আর বিজ্ঞান কী। কিন্তু প্রাচীন মানুষ এই দু রকমের এক রকম কথাও বুঝতে শিখেনি। তাদের মনে যে বিশ্বাস তা হলো, না ধর্ম, না বিজ্ঞান। তাহলে কী সেটা?

যাদু-টোনা, কুসংস্কার

বৃষ্টির জন্য প্রাচীন মানুষ হয়তো মাদল বাজিয়ে ডাক দিতো দলের বাকি সবাইকে। তারপর সবাই মিলে আকাশের দিকে পানির ছিটে ছড়াতে ছড়াতে বৃষ্টির একটা নকল করবার চেষ্টা করতো। দলবেঁধে গান শুরু করতো। গানের তালে তালে নাচতোও। ওরা ভাবতো, এইভাবে নাচ-গান করে নকল বৃষ্টির আয়োজন করলে আসল বৃষ্টিকেও আয়ত্তে আনা যাবে। এরই নাম হলো কুসংস্কার। অন্য অর্থে যাদু-টোনাও বটে। এই কুসংস্কার বা যাদু টোনা বিশ্বাস দু রকমের হতে পারে।

এক

শত্রুর চুল, নখ বা কাপড়ের খুঁট কেটে এনে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হতো। বিশ্বাসটা হলো, শত্রুর অংশটা পুড়িয়ে দিতে পারলে শত্রুও পুড়ে খাক হয়ে যাবে। এ হলো কন্টেজিয়াস ম্যাজিক।

দুই

শত্রুর একটা মূর্তি তৈরী করা হতো। মোমের অথবা কুশের মূর্তি। যাকে বলে কুশপত্তলি। তারপর মূর্তিটির গায়ে তীর বিঁধিয়ে কিংবা পুড়িয়ে ফেলে কল্পনা করা হতো যে, এইভাবে শত্রুর গায়ে তীর মারার একটা তুলেই বা শত্রুকে দ্বগ্ধ করবার একটা নকল তুলে আসল শত্রুকেও সত্যি সত্যিই বিনাশ করা যাবে। একে বলা হয় ইমিটেটিভ ম্যাজিক। প্রাচীন যুগের আরেকটি নিদর্শন হলো, চিত্রকলা। এই চিত্রকলার মূলেও ছিল যাদু-টোনার বিশ্বাস। ছবি এঁকে শিকারের একটা নকল তোলা হতো। আর মনে মনে বিশ্বাস করা হতো যে, এইভাবে ছবির প্রাণীর গায়ে ছবির বাণ বিঁধিয়ে দিয়ে আসল প্রাণীকেও বাণ মারবার কাজ সফল হয়ে যাবে। লেখক তন্ময় আলমগীর সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ০১৯১৪৩২২০৯৩


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান