কবি : নাজনীন সীমন
মৃত্যু সংবাদের এ কাল সে কাল
মৃত্যু সংবাদগুলো ভীষণ ম্যাড়ম্যাড়ে এখন এখানে
অনাায়াসে বলে ফেলি মারা গেছেন সে, তিনি, তারা।
মানবতা ঝুলে থাকে ইদানীং শিফন শাড়ী বা
স্বনির্বাচিত ফিনফিনে জর্জেটের রঙিন আঁচল
আর উন্মাদ উন্মত্ত সময়ের খাঁজে খাঁজে
প্রিয় মাটিতে রক্তের ছোপ, বাতাসে পোড়া মানব মাংসের গন্ধ
শুঁকে শুঁকে শিখরে পৌঁছুতে চায় অতৃপ্ত ডাকিনী
নখে দাঁতে খামচে খুবলে নেয় তরতাজা শরীর,
ধারালো দাঁতে রক্ত পিপাসা মেটায় কণ্ঠনালী ফুটো করে
গুমোট বাতাসে দম বন্ধ হলেও আনন্দ আমাদের: "ছুঁতে পারেনি আগুন"
প্রিয় জনপদ ধূসর এখন, ক্রমাগত পুড়ছে বাতাস,
বেঁচে থাকার সামান্য সম্ভাবনা
তবু,
মানবতার বিষাক্ত আমসত্ত্ব রোজ দিন নির্ভুল শুকোই ঝকঝকে সোনালী রোদ্দুরে
এই আমরাই।
লাটাই এখন আমার হাতে
কষ্ট ছিলো তখন যেমন, তেমনি আছে প্রবল রকম
অনেক হাসি, নতুন পাতা
ছিন্ন সুতো, ভিন্ন খাতা
উল্টো দিকে হাঁটা শুরু, হোক না যতোই গভীর জখম।
খুব সকালে যেই ছবিটি দুলিয়ে দিতো সুখ বাতাসে
ভুল সময়ে, হঠাৎ কেমন
সমস্তটা মুছে দিয়ে
চললো এখন উজান বেয়ে, একলা রেখে হা হুতাশে।
ছোট্ট ডিঙি, মধ্য সাগর, উথাল পাথাল মনের গহীন
চৌ প্রহরে, পথ হারালে
ভগ্ন হৃদয়, শুষ্ক পাতা
উল্টে গেলে চিন্তা রেখা, বদলানো যায় তা কোনো দিন?
যাক না যেমন যাচ্ছে সময়, ভাসুক সবাই স্রোতের সাথে
শূন্য ঘরে যেমন করে
ঘড়ির কাঁটা তীক্ষ্ন স্বরে
জানান দিতো তার চলাচল, প্রখর দুপুর কিংবা রাতে
তেমনি করে চলবে সময়, সুখের লাটাই আমার হাতে।
সন্তর্পণে সন্ধ্যা
সন্তর্পণে সন্ধ্যা নামলো অকস্মাৎ পরিচিত উঠোনে
আকাশের বলিরেখা সুস্পষ্ট হলেও ময়ূরের পেখম খোলার ঢের দেরী—
এইতো জীবন আমাদের; নিজেকে সেঁধিয়ে দেয়া চেনা শিকলে
যদিও কারোরই প্রস্তুতি ছিলোনা, তবু আকস্মিকই…
অভ্যস্ত জনপদে নিতান্ত আনাড়ী পদচারণা কারো কারো,
অব্যক্ত প্রতিশ্রুতির চোরাগলি ধরে হেঁটেছিলাম অনন্ত পথ
খাঁ খাঁ শূন্যতায় প্রিয় দীঘল চোখের ছায়া বুকে করেই।
তথাপি ছেদ টানলে তুমিই। হাঁ-করা অজগরের মতো
স্বার্থপর সময় নির্বিঘ্নে গিলে খেলো প্রশস্ত সুখের ঘের আমার।
বিধ্বস্ত জানি আমি প্রতিকূলতা পরাস্ত করে চলার অমোঘ সূত্র;
উদ্ভ্রান্ত সময় তবু অপেক্ষায় অচেনা স্পর্শের; বারংবার প্রবল হাতছানিতে
পিছু ফিরে তাকানো আজানুলম্বিত হতাশার প্রকাণ্ড ছায়া
জমাট বাঁধা অনুভূতি
জমাট বাঁধা অনুভূতির হুড়কো খুলে অকস্মাৎই
কালো ধোঁয়ায় চোখ বুজে যায়,
অন্ধকারের গুমোট গন্ধে গোটা শরীর গুলিয়ে ওঠে
আহ্লাদের স্বপ্নরা সব পচে গলে খুব কদাকার।
ছন্নছাড়া মনের ভিতর বাবুই পাখির চঞ্চলতা
পাখনা দুটো ছেঁটে দেয়া নিখুঁত হাতে,
শৃঙ্খলিত এই সমাজে কে-ই বা কবে উড়তে পারে
গাইতে পারে মনের মতো,
যে গান শুনে মধ্য রাতে
প্রিয় শরীর দুলে ওঠে মাতাল নেশায়
এবং ভাসায় প্রবল স্রোতে।
সঞ্জীবনীর কৌটোখানি খুব গোপনে উঠিয়ে রেখে
মৃতের মতো মানুষ হাঁটে,
সারে সারে ওরা এখন বন্য শুয়োর এবং দাঁতাল,
ডুগডুগিটা বগলদাবা, বানর করেন নৃত্য সাধন
আস্তাকুঁড়ে সংস্কৃতির ‘স’, মর্গে আছেন শিল্পকলা।
গূঢ় গোপন সত্যগুলো খুব যতনে বুকের ভিতর
ওমে ওমে ঘুম পাড়িয়ে চিন্তাবিহীন সময় ছিলো,
দমকা হাওয়ায় উড়ে গেলে সব আবরণ
কষ্টগুলো জেগে ওঠে, যদিও তা বারণ ছিলো।
ক্ষতগুলো ভীষণ গভীর, অযাচিত হতেও পারে
তাদের কাছে,
শূন্য কোঠায় বোধের পারদ বসে আছে আজীবনই
অই যে যাদের,
কিম্বা যাদের সুখপ্রিয়তা ছাপিয়ে ওঠে আমার ডাঙা
যখন তখন উদ্যত হয় শিকল নিয়ে
বাঁধতে আমার বোধের ডালা।
চিন্তাগুলো পাঁপড় ভাজা, ভাঙতে পারে খুব সহজে
দীর্ঘদিনের স্বপ্নগুলো এলোমেলো অযতনে.
অনুভূতির তানপুরাতে লাগলে ছোঁয়া
বাজতে পারে আরাধ্য সুর
অপেক্ষাতে আছি এখন তেমন ক’টি আঙুল পাওয়ার।
নষ্ট হওয়া শব্দগুলো
ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দই বলা যায় আপন ভীষণ
যতোবার বলেছি ভালোবাসার কথা,
প্রচণ্ড চিৎকারে যখনই জানিয়েছি চাওয়া না
চাওয়ার দুস্তর তফাৎ,
যতোবার…
প্রজাপতির উড়ন্ত সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছি
পারমাণবিক সন্ত্রাসের অক্লান্ত উন্মাদনায় ছিন্ন বিচ্ছিন্ন
হয়েছে অন্তর্গত সৌন্দর্য ও অতি সূক্ষ্ণ অনুভূতির তীব্রতা
সুপ্রিয় গানের কলি ভাজতে ভাজতে মনে হয়েছে ভীষণ
ভালো লাগার মাতাল গল্প বলি তোমাকে একান্তে
সমবেদনায় আনত হয়েছি, ছুটে যেতে চেয়েছি দ্রুত বন্দরে তোমার
নোনা জলের আশ্বাস চোখে ধরেছি দু’হাত, কম্পমান কণ্ঠে করেছি আশার উচ্চারণ
ততোবারই বুঝেছি ব্যবহৃত শব্দগুলো আমার
অপচয়ের খেরো খাতায় জায়গা করে নিয়েছে কেবল।