কবি : নাসরিন সিমি
আজ কবিতার দিন
আজ কবিতার দিন
তুমি কবিতা লিখলে আমি পাখি হই
তোমার বারান্দায় শিষ দিতে দিতে ভিজি
একমুঠো ওমে চোখের ভেতরে রাজহাঁস দেখি
পলাতকা জীবন দুটো বছর বেশি বাঁচতে চায়
তুমি কবিতা লিখলে আমি মেঘ হই
সাদা সাদা পেঁজা তুলোর মতো জমাট শুভ্রমেঘ
ভেসে ভেসে খুঁজেফিরি পরীদের স্নানের ঘাট
একদিন তোমার সাথে খুব ভিজবো জলে
স্নানঘরের জল ঝরবে ফোঁটায় ফোঁটায়
প্রতিটি লোমকূপে শিহরিত স্পর্শে অধিগ্রহণ
করতে করতে নিজেকে সম্রাজ্ঞী মনে হয়।
ঈশ্বর বন্দনা ( ফণী কে উৎসর্গ করে লেখা)
জেগে আছি ঝড়ো বাতাসের তোলপাড়ে
উড়িয়ে নিচ্ছে ঘুম, মশারি আর দেয়ালে
ঝোলানো ক্যালেন্ডারের দাগ দেয়া পাতা
বাইরে ঝরোঝরো বেহায়া বৃষ্টির দেমাগে
তার ঢলোঢলো যৌবনের ছিনালিপনায়
উড়িয়ে নিচ্ছে বৃক্ষের ধজভঙ্গ ডালপালা
যৌবনবতী সাগরে ডুবে যায় মৃত্তিকা মন
দূরে কোথাও ফুটেছ আছে লাল কৃষ্ণচূড়া
ভিজে ভিজে একাকার হয়ে যায় সঙ্গমে
বাতাসে কাঁপে তোমার শহুরে অট্টালিকা
ঘুমিয়ে আছো তুমি কতো দূরের বিছানায়
বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছি বাতাসের নৃত্যে
শো শো মেঘের কান্নার শব্দ শুনতে পাই
ইন্দ্রের বজ্র নিয়ে প্রস্তুত মেঘে ঢাকা আকাশ
লুকিয়ে রেখেছে তার সমস্ত নক্ষত্র ও চন্দ্র
বাজছে দামামা আসছে যুদ্ধংদেহি বাতাস
প্রলংকারী যুদ্ধের পক্ষে প্রকৃতি ও মানুষ
আমি বন্দনায় বলি ইবাদতে বলি এই যুদ্ধে
হে ঈশ্বর তুমি আজ মানুষের পাশে থাকো।
( ঘূর্ণিঝড় ফণী অতিক্রম করার সময় লেখা
রাত তিনটা পনেরো)
কিউপিডের তীর
শূন্যতাকে ঘিরে কয়েক ফোঁটা নোনা জল
আর প্রেমটাকে বিষাদময় কিউপিডের তীর
রক্তক্ষরিত হৃদয় স্থিরবিন্দুতে নিমজ্জিত হলে
পাখিটা ডানা মেলে এসে থামে রেইনট্রি বৃক্ষে
ঝরঝর শব্দের ঘোর লাগা বৃষ্টির কোলাহল
কেটে যায় কতগুলো প্রেমময় ওষ্ঠের কাঁপুনি
তখন পৃথিবীর অচেনা কোথাও লুকিয়ে যেতে
যেমন তোমার বুকের ভেতর খুব ইচ্ছে করে।
পাঁজরে ঘূর্ণিঝড়ের শো শো শব্দ টের পায়না
কোথাও আবহাওয়া সতর্কতা কোন সংকেত
শুধু আমি টের পাই কতটুকু উড়ে গেছে ঝড়ে
কতটুকু জুড়ে রয়েছে কিউপিডের তীর বেঁধে।
সর্বনাম
ঠোঁট জুড়ে বিশাল গোলাপ এঁকে দিতে ইচ্ছে করে
এই রাতে আমার লিপস্টিকের রঙে রাঙিয়ে
তোমার ধোয়া ওঠা ওষ্ঠের কাঁপুনি থামিয়ে দিতে
থেমে যায় সব সাগর নদীর ঢেউ আর তীব্র দহন
বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবাসা সহ্য হয়না
জীবনের মাঝপথে এসে তবুও তোমাকে আজ
আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি প্রিয়তম
যতোটুকু দূরে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলে ঠেলে
পায়ে পায়ে ততোটাই এসেছি কাছিমের মতো
দুঃখগুলো রূপান্তরিত আজ কবিতার বইয়ে
তোমার বিষাদের দিনের তপ্তরোদে পোড়া ঘাম
আমার আঁচল শুষে নেয় কী অবলীলায়
সর্বনাম তোমাকে জপতে জপতে আজ আমি
ঈশ্বরের নাম ভুলে গেছি, মন্দির গির্জা প্যাগোডা
সব অন্তরে ধারণ করে তোমার ইবাদত করি।
চাঁদ ও অন্ধকারের কাব্য
বারান্দায় ঠা ঠা রোদ্দুরের ছায়ায় কেমন
নারিকেল পাতার সাথে লুকোচুরি খেলছে
পাতার দুলুনিতে ভেসে আসে বাতাসের গান
দূরে কোথাও ঠোঁটে আছে বাতাবিলেবু ফুল
এ সময়ে যেন ভীষণ গরমে খুব একা লাগে
তুমি কী লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে ঘামছো
হাতের মুঠোয় ধরা মোবাইল গ্যালারিতে চোখ
তোমার ছবিগুলো খুব যতœ করে রেখে দিয়েছি
গুগল ড্রাইভ এ নয় আমার বুকের হৃদমাঝারে।
প্রিয়তম আরো একবার নষ্ট হবার কষ্ট নিয়ে
তোমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে চাই হু হু করে
এখন আর ঘুম কাতুরে নই আমি যেমন ছিলাম
মাঝ রাতে ডিঙ্গি নৌকার মতো বাঁকা চাঁদ দেখি
আকাশে কি অসহায়ের মতো ভেসে বেড়ায়
অমাবস্যার ও পূর্ণিমার বিবাদ মেটাতে মেটাতে
আমার মতো চাঁদটার জীবনও দুর্বিষহ হয়ে গেছে
কারণ আমি ও চাঁদ সমবয়সী মধ্যবিত্ত জীবনের
মাঝপথে এসে আটকে গেছি পৃথিবীর নিয়মে।