নির্বাচিত ২৫ কবিতা ।। তাপস চক্রবর্তী
নির্বাচিত ২৫ কবিতা ।। তাপস  চক্রবর্তী
মৃত্যুগন্ধা

আমার আশপাশে বিস্তর আবর্জনার স্তুপ

স্তুতির আগুনে

ধুপ হয়ে জ্বলছে স্নান শেষের হলুদশাড়ি

 

কখনো কখনো চড়ুই পাখি হয়ে বসছে

চুপচাপ অস্তরাগে

অস্তিত্বের পাঠ নিতে নিতে বাড়েদেনা

 

রোজকার যত্ন-আত্তিতে সংসার আমার

 

দুটো ছেলেমেয়ে খেলে যায় রোজ রোজ

রোদ রোদ উঠানে

ছাতিম গাছের আড়ালে ফোটে অলকানন্দা

 

বাবার শেষ কথা ছিলো

একটা জীবনএকটা- তো মৃত্যুগন্ধা

 

কেউ এখনো হেঁটে যায় স্মৃতির বিগত পথে

আহ্ ফুলের নিঃশ্বাসের সাথে খেলেছে মন

এপথ ওপথ

 

অথচ বেহুদা সময় নিয়ে কথা বলে কেউ

কেউ নাম দেয়, আমিও নাকি মৃত্যুগন্ধা

ক্রোধ

 

 

শিস্ দিয়ে পাখি নীলিমায় উড়ে যেতেই

এইতো সেদিন

ধর্মের রঙিন বর্ম অনায়াসে পড়ে নিলো মানুষ

 

অথচ তপতীর মিছিলে শুভ্র কপোত

ঝরে পড়া পালকে

আজ নপুংসকের গন্ধ লেগে আছে বোধের বিস্তরে

 

উড়ে যাওয়া পাখির গন্ধেদুপায়া মানুষের গন্ধে

বর্ণ ভেদে কন্যাশ্রমে

রূপোলী মাছের গন্ধে বিছানায় তপোভঙ্গ

 

এদিকে ওদিকে তামাটে বালির বাঁধ ভেঙে আসে

কাঁকড়াবিছে

যেখানে আজ ঋতুবতী মানুষ নেই

আছে শুধু ক্রোধ


বেলা বোস

 

অঙ্গে কখনও বাজেনি এস্রাজের সুর

তানপুরায় ভেসে যায় কাকপক্ষির বিগত সুখ

তবু আজও শয়নে স্বপনে

বেহেলার তানে খুঁজে গেছে আমার বেলা বোস

 

অথচ বর্ষায় জলময়ূরের জলতরঙ্গে ভাসে

ভাসে বাঁশির করুণ সুর

সুরে ভাসে হাওয়ায় মাছেদের স্বর

সুরে সুরে ভাসে কাঁকড়ার হর্ষ ধ্বণি

যেন তেরেকেটে তেরেকেটে তবলার বোল

 

অথচ ভরতনাট্যম শেষে আজও একেলা জাগে

আমার প্রথম প্রেম আমাদের বেলা বোস


বিপ্লব

বিপ্লব হয়তো একটা নুনগাছ...

কিংবা

পলিমার প্যাডিং

 

তোমার মতো যত মতবাদ

আগুন আগুন বিষাদ

পোড়ানো শব্দের উল্লাস

 

এসো আজ

দুয়ারে অপেক্ষা

ভুলে যাওয়ায় পারদ বিস্তর


ভাষাহীন অভিশাপে বাঁচি ষাটের ঘরে

 

নগ্নতার চৌকাঠ মাড়িয়ে কিছু একটা

খুঁজে নিলাম

কাঠগোলাপের পরত থেকে

 

খোলা বুকে হেঁটে গেছি শৈশবের দীঘিঘাটে...

জানি আজন্ম অভিশাপ চেপে ধরেছে টুটি

তাই ভাষাহীন অভিশাপে বাঁচি ষাটের ঘরে

 

জানি চলে যাবো একদিন মাটির কোলে

তবু ফণিমনসার দীর্ঘশ্বাস লেগে থাকে

জোনাকির বুকে


তোমাকে

অনেকদিন কেউ ডাকেনি

স্বনামে বেনামে

গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে

বলেনি বসুন এখানে

 

মাঝে মাঝে মনে হয়কেউ নেই আশপাশে

যেমনটা আঁধার

পাড়ভাঙা নদীরা যেমন

 

তবুও

নিজের অজান্তেই খুঁজে নিই

খুঁজে নিয়েছি তোমাকে


তন্ময় সুখ

 

ত্রিকোণমিতি ছুঁয়ে আসে নদীর বাঁক

হয়তো

কারো কারো চৌত্রমাস

 

ফাল্গুনী পূর্ণিমায় উসকোখুসকো ঠোঁট

লিপ জেলের সয়লাবে তন্ময় সুখ

 

যেমন

শুকনো উঠোনে রোদস্কেলে বিঁধে যাওয়া মুখ

 

বর্ণিল আলোকসজ্জায় ভিজে আসে চাঁদ

এন্ড্রোয়েট মনোপলি

নদীর জলে ভাসেকারো কারো সর্বনাশ


বাবা

 

বাবাবা + বা = আলতো করে ছুঁয়ে দেওয়া বিকেল

সন্ধ্যে

কিম্বা আঁধারের সম্মিলন

 

আবিরের পোষ্টারের লিংক...

প্রথম শোনা সিনেমার খবর

কবিতার মতো শরীর বেঁধে রাখা নিয়মের পয়গাম

 

বাবারা ধূলোর মতো কাদামাটির সংসারে____

ভাটির শহরে একেলা/ একবেলা খেয়ে পথে নামা

বিভোর কিতাব

যেমন নামতার মতে গুনে যাওয়াএক একে এক

 

কবরে জেগে ওঠা কৃষ্ণচূড়া/স্মৃতির ছবি

পুত্র ঠোঁটে জড়িয়ে নেওয়া জরুরী বর্ণমালা


বিছানা বিলাস

 

ধরো শূন্যএটা ওটা

আর্য কিংবা অনার্য

তবু জেনে নিও জলের তোড়ে চোখ ভিজে

এও কঠিন সত্য

 

শূন্যপুরে জন্মবৃত্তান্ত রক্তের দাগে মানচিত্র

সংবিধান খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কবির কবিতা হয়

তাও শূন্য

যেমন তোমার শূন্য বছরের হাপিত্যেশ

 

কবি চাইলেই আগামী মহান বধুবার

হাসতে পারে খুনধরা চওড়া ঠোঁটে

যেখানে

ফুটে উঠবে সন্দেহ ভরা বিছানাবিলাস


একুশ

 

একুশের সংখ্যা নির্বাচন> ফেব্রুয়ারী

কিম্বা আট ফাল্গুন

↓↓

বললে, ভুলে যেও

খসড়া পত্রের কুশলাদি বিনিময়ে

 

প্রভাত ফেরি হয়ে শিউলির দোলাচল

যেমন

পলাশ রাতের আঁধার

 

আমিও আজকালযীশু হই

যীশুতে ক্রুশবিদ্ধ ক্রস চিহ্নটি মুছে যেতেই

বীজগণিত সূত্রে বললাম, কবিদের তৃতীয় চোখে

স্থির হও

শুন্যতার হাপিত্যেশ


পুরোন কাপড়

 

খাদি কিম্বা মসলিন যাবতীয় বিষাদ ভুলে

চল তুমি আমি হই

লিলামের গাঁট বাঁধা পুরোন কাপড়...

 

যেমনটা কলারের আস্তিনে তেল চুপসে উঠা

থাটি ফাইভ কটন সিক্সটি ফাইভ পলিয়েস্টার

আহ্ তুষের আগুনে পোহা শীতের সকাল

 

যেমনটা রঙিন শার্ট বুকপকেটের বিগত ক্ষত...

যেমনি ছিল বক্সবন্দি স্মৃতির গহন

দু'হাতে লেগে থাকা মনমালিন্য

 

চল সব ভুলেঅনাবাদি মাঠ ভুলে...

চল ওয়েস্টবক্সে আজ ঘুমিয়ে পড়ি

স্কেল টানা কাপড়ীয় হিসেবের অন্ত্যমিলে...

 

দেখো কেরোলিন শার্টের বোতাম খসে

টুংটাং শব্দ যেন ঝর্ণার জলতরঙ্গ

অথচ হান্ডেট পারসেন্ট কটন শার্টের হাতলে

লেগে থাকে মার্কসীয় শ্রেনি সংগ্রাম

 

কেউ কেউ এখনও নগ্নদেড় গজ কাপড়ে...

বারো হাতের মগ্নতায় কাটে কারো কারো দুপুর

অথচ কে বুঝে গনতন্ত্র সাম্যের সমতট

কে বুঝেছে গতরের ঘামে কত পেটের দায়!


নাবালক

 

নাবালকের জোড়াপা

হাঁট হাঁটি

মাটির বুকে বিঁধে আছে দশ আঙুলীয় ছাপ

 

অথচ জ্যোতিষশাস্ত্রে রাহুদশা

কর্মে বধির শনি...

মতিতে বৃহস্পতিধর্মে লা জবাব

 

অথচ এখনও কেউ কেউ

নাবালক

কেউ কেউ একেলা হাঁটে রাষ্ট্র গাধার পিছে

 

অথচ আমার স্বপ্নে বিভ্রম...

দেখি সাবানের ফেনায় ঢেকে গেছে বিবস্র দেহ

 


 

কাঁচ ভ্রূণ

 

মোটা কাঁচ ভেঙে জন্ম নেয়

ভ্রূণ

ভাসে রক্ত মাংশাল ছবি

 

এক সন্ধ্যায় ভ্রূণেরা জোড়া পায়ে হাঁটে

জোড়া চোখে কাঁদে

সূর্যের আলোয় হেসে উঠেখিলখিলিয়ে...

 

অথচ

পয়গম্বর রোদেরা ছায়ায় বসে

গোনে গণিকার গনিমৎ...

 

আহ সমাজ সংসার!

তবু মোটা কাঁচ ভেঙে আসে

ভ্রূণের মহাকাব্য

 


 

তুমি শুধু তুমি

 

বৃক্ষটা গান ধরে

     যে গানটা ছিলো তোমার

নদিটা সুর তোলে

       যে সুরটা ছিলো তোমার

ঘাসটা তাল বোলে

     যে তালটা ছিলো তোমার

 

গানটা তালটা সুরটা শুধু খোঁজে লয়

         ছন্দটা শুধু তোমার

                    জেনো আমার কিছু নয়

 


 

তুমিই শুধু পৃথিবীর ভালো

 

তুমি বললে;

একটু শান্ত হয়ে বোসো,

আমি বোসলাম

          শ্মশানের নিরবতায়

 

তুমি বললে;

এবার সোজা হয়ে ওঠো,

আমি উঠালাম

           বৃক্ষের দৃঢ়তায়

 

তুমি বললে;

রাত হয়েছে এবার ঘুমোও,

আমি ঘুমালাম

        পাথরের আবদ্ধতায়

 

বসা ওঠা ঘুমানো বৃক্ষ এবং শ্মশানের আলো

পাথরটা নুড়ির মতো গান তোলে--

                   তুমিই শুধু পৃথিবীর ভালো

 


 

মনে পড়ে

 

এই মৃত্তিকার ঋণ

আমার বাহুডোরে

মনে পড়ে...

 

কোনো নদীর প্রাণে

          প্রতীক্ষায়

        বৃক্ষের ছায়ায়

 

জানি ফিরবো না

     পথ ধরে

     বছর হাজারে

 

খুঁজে নেবো না

তোমার আঁচল

            কাজল

 

জানি লিখবো না

পত্রে বনলতায়

         কবিতায়

 

তোমার মৃত্তিকার ঋণ

আমার বাহুডোরে

মনে পড়ে


ফুলের গন্ধ

শেষাংশের শেষ শব্দ লিখে গেছি

পাথরে

গত বসন্তে...

 

এখনও লিখি আনত চোখ

ফুলের গন্ধ

লাল নীল দোপাটা

 

বিষণ্ন বিষাদে আজও খুজি

নুনের গহন হতে উঠে আসা

অমৃত সুধা


বিগত শোক

ছুঁয়ে যাওদাও  দাও

পাত্রে

নীরব পাথরে মাথা ঠুকে ঝর্নার গান

 

জানি তখনও

বর্ষার ফুল ফুটেনি ওধারেএধারে আঁধার

শঙ্খনদীর তীর ঘেঁষে

 

যদিওবা জ্যামিতির বক্সে রাখা মন

মন যেমন

উষ্ণতা খুঁজে বিহানে

 

সারারাত ভোদকায় বেঁধে রাখা গল্পরা আজও

শীত শীত কথাহীন

যদিও উঁকি দেয়া শব্দরা শ্মশানে মষান

 

বেহুদা মন আঁকে কবিতার ছক

হক কথা, ফিরে এসো আরেকবার

পায়ের ছাপে ছাপে গুণে নেবো বিগত শোক


বেলা বোস

 

আমারও একটা বেলা বোস ছিল

ঠিক তোর মতো

আদুরে টোলপরা অধর

তমাল আঁধার ভ্রু, চুলে ঠাঁই সমুদ্র উচ্ছ্বাস

 

আমার সেও একদিন হাসতো

নন্দিনী হয়ে

শ্রাবণে স্নাত হতো শঙ্খের চর

আমার সেও একদিন কথা বলতো

অঞ্জনার মতো

শিশির ভেজা উঠোন যেমন

আমার সেও একদিন মুগ্ধ হতো

পারমিতা হয়ে

পাহাড়ের ঢালে পানের বরাজ তেমন

 

মাঝে মাঝে বনলতা হয়েপাতার ভাঁজে

শিমের মাচায়

একফালি রুপোলি চাঁদ এঁকে দিতো

কতো সহজ সরল হাতে

 

এখন আমার বেলা বোসের সাজানো সংসার

শুনেছি ভীষণ সংসারী সে,

রোজ তার ভেজা চুলে সূর্য হাসে, খেলে

ঝরে পড়ে গোলাপি আকন্দ ফুল

 

জারুলের গহ্বরে লুকিয়ে পড়ে চিরচেনা

ফুল পাখি যৌবন

এখন

এখানে ওখানে যুবতী মৌমাছির ক্রন্দন

 

এখন আমার বেলা বোস হেঁটে যায় রোজ

সাভারেশহীদমিনার দেখে

অথচ

উনিশের ঘরে লুকিয়ে রাখে সতর্ক সংকেত


অকাল শ্রাবণ

 

সেদিনের রঙিন স্বপ্নগুলো ভিজে গেছে

এক অচেনা অকাল শ্রাবণে

যেমন তুমি, কিংবা তোমার জুয়ারি মন...

 

গণিতের ভেতরে গণিত যেমন স্মৃতির স্রোত

যখন ইচ্ছে ভেসে গেছোভাসিয়েছো এমন

আমার দাঁড়কাকের জীবনযাপন

 

এখনও, এখানে অবহেলায় কাঁদে

ঘুমিয়ে পড়ে

বুকের বাঁপাশ ফোটে নিমরাত...

 

অথচ ভুলে গেছিনিয়মে অনিয়মে

যে রাতে তুমি দলে গেছো, শ্যাম মন্দির হয়ে

কিছু বেভুলা বেকুব খোঁয়াড়ি মন

 

এখন, এখানে রাত শেষে অঝোরে নামে

অকাল শ্রাবণ

দেখো, এখনও এখানে হলুদ কদম ফোটে

বিরহী যুগল ঠোঁটের কোণে


জল

 

মুই খালি জীবন দ্যাহি গাঙের জলে

বাড়ির পূবের কান্দারে নাও বান্ধা য্যানো

মরণের ভিটে মাটি

জনমের আড়কাঠআটখাট

 

জল জীবন য্যানো সবি মোর পাঁজর ছুঁইছুঁই

য্যানো জোকপোড়া জখম যেমন

বুহের এপাশে ছোপছোপ কাদামাটি

ওপাশে রেখেছে ছাতিম গাছের আড়াল

ক্ষুধার মন্ত্রে রাইতবিরাতে চোক্ষে ভাসে না

এখন মনসাপুরাণ

ভাসে রুপোলি জল আর শুধু মাছ মাছ আর মাছ

তারি সাথে মিশে যায় দূরের নীল আকাশ

 

মাছের আঁশে মাঝে মাঝে স্বপ্নের মতো ভাসে

বেনীমাধবের মাছের আড়ত শাপলা মাছের লেজ

সোনালি ধানের গোলা

আর মান্দাসার ঘাট হয়ে বেঁকে গ্যাছে গেঁয়ো পথ

পথের শেষে জব্বার আলি দেয় হুঙ্কার

দিতে হবে দাদন সমেত বাদবাকি জীবন

 

হায় জীবন!

মিথ্যা জনম মোর, ঠিক য্যানো বিষ্ণুর ছেঁড়াজাল

শঙ্খের জল আর জুয়াচুরিতে কাটে প্রহর প্রহর

মনে হয় সবি মিথ্যাসবি আইজ বেসামাল

 

আমন চাষ শেষে বরষার মওসুমে মনে হয়,

দ্যাশ কান্দে মানুষের লাহান

শীতের রাইতে বাজার দরে ভাসে মাইয়া মানুষ...

জোয়ারের জলের ভাসে জনম না পাওয়া জীবন


ঘটিফুল

 

ঘটিফুল ঝরে পড়তেই

তোমার কথা মনে পড়লো...

 

রোজ রোজ বিকেলে

যেমন ফোটে আমার উঠোনে অলকানন্দা

তোমার কায়াহীন গর্ভে

 

জানি,

তুমিও নদীর মতো উচ্ছলিত

রুপালী মন্বন্তরে

 

আমিও জেগে থাকি

উনিশের বাদবাকি গল্পে


আফরোজা

 

পঞ্চেন্দ্রিয় ছুঁয়ে আসে খরস্রোতা কুয়াশার নদী

ইথারে উথারে ভাসে রুপচাঁদা আর কোরালস্মৃতি

 

অথচ বিগত ধারদেনায় নিউটন আর আমি

আপেল সংসারে আজ

মগ্নতার পাঠে নীরব কিছু কাঠগোলাপ...

 

আলাপের আগুন গান যেমন পোড়া কাঠকয়লায়

কর্ণের বিষাদ বাণে মগ্ন মহাভারত

জানি নদীর স্রোতও তেমন রুপোলি ইলিশের ডিম

 

আরও একবার ফিরে এসো আফরোজা

দ্রৌপদী মগ্ন কবিতায়...

দেখো পাখির মিছিল ঘেঁষে চরের মতো জেগে উঠছে

অবশিষ্ট বত্রিশ পাঁজর


ছেঁড়া কাপড়ের দীর্ঘ সংসার


 

আজ প্রাথর্না করি মদের গ্লাসে নামুক ঈশ্বর

নেমে আসা পথ ধরে

উদ্বেলিত হোক এটা-সেটা ফুল পাপড়ি

কিংবা জুয়ার বোর্ডের ম্যাসেঞ্জার

 

হঠাৎ ফুলের গান থামিয়ে কে জানি বললো

দরজার ওপাশ থেকে, আপনার ঈশ্বর বলাটা

বড্ড ভুল ছিল...

 

আমিও মানি জীবনটাইতো একটা ভুল

যেমনটা সনাতনের মেয়ে বুলবুলি

কাঠখালির সুবর্ণা

আরো যারা, যাদের ছেঁড়া কাপড়ের দীর্ঘ সংসার

 

অংক কষা জীবন রেখে মদের গ্লাসে কান পেতে শুনি,

স্বয়ং লুক্রেতিউসের মাতাল কণ্ঠ, উনি বললেন

ভুল বলা ভালো, অতএব ভুল বলাতেই দীর্ঘ হোক

তোমার আমার বাদবাকি জীবন


আমিও খুঁজি পথ

 

শহুরের রাতে নর্দমা থেকে উঠে আসে

এক

দুই

কিংবা তিনের সংমিশ্রণে

থলথলে ইঁদুরের শরীর

 

এপাশে ওপাশে ছোপ-ছোপ আঁধার আর আলো

মিউ বিড়ালের সম্পর্ক ঘুরে আসে রাষ্ট্র বরাবর

প্রযত্নে আমিও খুঁজি পথ হাজাররকম

 

কাস্তে-হাতুড়ি হয়ে আজ আস্তো ফুলকপি

তন্ত্র-মন্ত্র বিষাদে ব্যালাটে দেখি,

রাষ্ট্রের মতো অভাগার সংসার

চারিদিকে ক্ষুধার স্রোত, কাঁদছে বালবাচ্চা

 

তবুও মাঝে মাঝে স্বপ্নের মতো

বাতাসের ঘ্রাণ সুরে বাঁধা টাকার টঙ্কা


ঈশ্বরও একটা দুঃখের নাম

 


 

কপাট খুলেই আজকাল দুঃখ বাড়ে

 

ঘুমিয়ে থাকা স্বপ্নরা যেমন

আস্তো একটা কোলবালিশ ছোপ ছোপ লালার দাগ

আর রজবতী কুশন

 

অথচ

ভাতের থালায় ঈশ্বর

গুনে গেছে শিখণ্ডীকথা

 

জানি ঈশ্বরও একটা দুঃখের নাম

তুমিও যেমন



মৃত পোকাদের পুরোনো প্রেম

 

আদিম প্রেমে নয়নবীন হয়ে আরও একবার

ইভানের পথ ছুঁয়ে ইভ ফিরে আসো

প্রেমের মঞ্জরিতে কথামৃত্যু জীবনের সন্ধিক্ষণে

 

মৌমাছির পত্রালাপে আমলকি ফুলে

জিউস জাগুক

সত্য মিথ্যার বেহেশতে

 

শার্টের হাতলে লেগে থাকা মাছের ঝোল...

করমর্দনে

তেল হলুদ মরিচের ঘ্রাণ

 

নোনাভাতে রাতভর ঝমঝম শাপলামাছ

সর্ষে তেলে ইলিশেরডিম

ঈশ্বর ঘুমোলে নাক ডাকে যেমন

 

ফুসফুস শ্বাসের কষ্টজ্বরের ঘোর

নিকোটিন দাগ যেমন

মৃত পোকাদের পুরোনো প্রেম

 

লাল পিঁপড়ের সারিতে অসহায় গিরিগিটী

স্বর্গ মর্ত্যের হিসেবে আরশোলা

বাঁশতত্ত্বে বানর খেলে যায়আহ্ জীবন এমনি


গোলাপজলের নির্বোধ সংসার

আমার কোনো বৃক্ষ নেই

আকাশও নেই

কস্মিনকালে লতা-পাতাও ছিলো না

আমার বাপদাদার

 

সুনন্দার বিল ঘেঁষে ছিলো মাটির দোতালা ঘর

দক্ষিণের জানালা,

মৃত পাখির করোটি, ডিমের খোসা

চোচালা টিনের চাল

ওখানেই বসে পড়েছি একদিন

আমাকে ছুঁয়ে যাওয়া তোমার প্রথম প্রেমের পাঠ

 

শ্রাবনে টুপটাপ ঝরে পড়তো বিদিশার জল

কাকের পালক

ডোবায় খেলতো ডানকিনি মাছ ব্যাঙের ছানা

 

তক্তপোষে ছারপোকাজেগেছি সারারাত

যদিওবা রক্ত শুষে নেয়নি কখনও

নির্বোধ প্রেমিকার শরীর

 

মশকের গুনগুনানি রূপকথার নকশীকাঁথা,

লাভ ক্যাণ্ডি

উনিশের অবাধ্য ক্যালিগুলা

অথচ বৃক্ষের ডালে লটকে থাকাটাই নাকি জীবন!

বেহুদাই নাবিস্কো চকোলেট

উজানের মাছের মতোএতোটাই আজ হাঁসফাঁস

 

আজ মরলে কাল শোকসভা

ম্যানুকার্ড জুড়ে থাকছে

মোরগপোলাও মাছের কালিয়া

মাখন কিসমিস উপযোগ্য বাহারি খাবার

 

যে তৃষা জাগিলে তোমা ছাড়া করে...

সে তৃষা...

আহ্

মাইক্রোফোন জুড়ে বিষাদের হাওয়া বইছে

উত্তরে

তোষামোদি নানাবিধ উপহার ভরছে

কাঠের খাটিয়া

এখানে ওখানে শুধু তুমি আমিআমি তুমি

আমাদের গোলাপজলের নির্বোধ সংসার


পায়ের ছাপ


মৃত্যু অনেকটা বিপরীত শব্দের মতো

আমি তুমি তুমি আমি আমি তুমি সে

মশগুল ফাঁকা উঠোনে

 

অথচ ছাল তোলা মানব বৃক্ষে

এখানে ওখানে খেলে যায় অনায়াসে

লাল পিঁপড়ের সারি

 

মাটির গন্ধ বৃষ্টির ঘ্রাণে ভালোবাসা আজন্ম...

তবু শরতে হেমন্তে পায়ের ছাপ গুনি

ঝরাপাতার মর্মরে

 

জানি আজ নয় কাল কিম্বা পরশু

আবার হবে তোমার আমার

নোনাজলে সমুদ্রমন্থন


কৃষ্ণ সন্ধ্যা


বন ওপারে সবুজ হতে দূরে বহুদূরে

যে পথ গিয়েছে হারিয়ে জীর্ণ নূপুরে

 

সেই ধুসর পথ মাড়িয়ে কেউ কখনো

আমায় ডাকেনি, 'কোথা যাস সুবোধ'

চোখের অমল ইশারায় কেউ কখনো

আমায় বলেনি, 'দাঁড়া, দাঁড়া সুবোধ'

 

কেউতো বলেনি কখনো ঘুমের ঘোরে

এপথে স্থির আজ ক্ষনিক অবসরে

 

যদি পারিস ফাগুন উচ্ছ্বাসে ছড়িয়ে দিস

সবুজ পাতা আর হলুদ প্রিয় অলকানন্দা

এখন শ্রাবণ বাতাসে করুণ রাগের স্থিতি

তাই বিবর্ণ জীবন, দেখি জীবন কৃষ্ণসন্ধ্যা


মাছের গন্ধ

 


নগরে

শহরে

রাস্তার মোড়ে এখন মাছের গন্ধ...

 

নাগরিক কোনো বিপ্লব নয়নয় বালেশ্বর

আজ কুষ্টিয়ার রোদালা দুপুর ভাসে

মাছ কাঁটালের দা

 

কেউ কেউ হাসেকেউ মশগুল মজলিসে

আবার কেউ বলে শালা বোকার হদ্দ

 

যদিও স্বদেশ নিরবতায় প্রহর গোনে

বাতাসে ভাসে মাছের গন্ধ

 

অথচ বিগত বিপ্লবে বাঁশের কেল্লা

তবুও আজ

ভাগাড়ে আমার পোয়াতির জনন


স্মরণ উৎসব মুছে গেছে গতকাল বৈঠকে


কেউ বেঁচে ওঠে> কেউ শুয়ে পড়ে সঙ্গম শেষে...

যেমন কাক বাড়ির সম্মুখে কোকিলের বসন্ত

রাত জেগে থাকা কুকুরগুলো ঘুমের ঘোরে

বিঁধেছে রঙিন স্বপ্ন

 

অনৈতিক মগ্নতা ছুঁয়ে যায়ছুঁয়ে গেছে সকালের বখাটেরোদ

যেমন কদম ফোটা বরষার অথৈজল

এখানে সর্পবিষাদএখনও অবশিষ্টাংশ থাকে

তোমার শরীরে খেলে যাওয়া নীল আঁচল

 

লোকাল বাস> কবুতরের পাখায় সমন্বয় হয়

বিষণ্ন তমাল আঁধারের

তবুও বিলিয়ে দেয় নপুংসক পুংসবন গাত্র

নরোম শরীর থেকে ক্রোধ ঝরে পড়ে বৃষ্টির শব্দ

 

স্মরণ উৎসব মুছে গেছে গতকাল বৈঠকে/

কেউ যদি মরেও বেঁচে উঠেপাঠশালার বর্ষপূর্তিতে

কবিতার খোরপোষের বৃত্তি হোক জীবনের গান


আরশোলা


বিষণ্নতার ধারদেনায় জর্জরিত

কেউ কেউ

আমিও

 

তবু নিউটন মার্কা খরপোষ শেষে একদিন

না থাক

এখন শুয়ে আছি দেখো তুমিহীন

চিরচেনা বিছানায়...

যেখানে ভাসে

রোজ রোজ অলকানন্দার জল

 

আজকাল শরীর দখল করে নিয়েছে

বিবিধ ঘুনপোকায়

গল্পের মতো কোনো একটা ফরমেট

 

চাঁদের সাথে সাথে জাগে নিঃশ্বাসের প্রদাহ

তীর ভাঙা নদীর মতো সরল সমীক্ষায়

এখানে ওখানে জাগে আরশোলার অস্তিত্ব


 

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান