বাংলা সাহিত্যে সফল ম্যাক্সিম খুব কম দেখা যায়। সবাই চেষ্টা করে গেছেন;তাই আমিও করলাম। ইংরাজি সাহিত্যের বিশাল স্থান দখল করে আছে ম্যাক্সিম। ইংরাজি সাহিত্যে শেক্সপিয়ার, ফ্রান্সিস বেকন,আলেকজান্ডার পোপ, জর্জ ওরওয়েল,রবার্ট লি ফ্রস্ট সহ অনেকই সফল ম্যাক্সিম সাহিত্যে রচনা করে গেছেন,এঁরা অনেকই আমার খুব প্রিয়।এঁদের ম্যাক্সিম ভাবিয়ে তোলার মতো। গভীর জীবন দর্শনকে কিছু শব্দের মাঝে নিহিত রাখা বেশ কষ্ট সাধ্য বিষয়।চেষ্টাই একমাত্র সম্বল। ছোট ছোট অনেক লেখে আগে আসছি, এখন সিরিজ আকারে দিলাম।
- নিলয় গোস্বামী
পৃথিবী
এক আশ্চর্য নাট্যমঞ্চ!
জন্মের পর থেকেই এখানে মানুষ যা করে তা অভিনয়, কখনো জেনে-কখনো না জেনে।
ফাঁদ
.
বাঘ আটকাতে পারলে হাম্বড়ামি মানায়; চামচিকা আটকেও তাই করে।
.
বৃত্ত
কান্নার বৃত্তের কোনো পরিধি থাকেনা,
রেশের দাপটে জ্যামিতিক হারে শুধু ক্ষেত্রফল বেড়ে যায়।
.
শ্মশান
নিশ্চিন্তে ঘুমানোর জায়গা।
স্লিপিংপিলরা নিজেকে উৎসর্গের মিথ্যে আশা বুকে নিয়ে জেগে থাকে এখানে;মানুষ যেমন মৃত্যুকে জয় করতে চায় মনোবলে।
.
শোক
উজাড় করে নিজেকে বিলিয়ে যায় অযাচিত ভাবে;জন্মই যার শূন্যতার স্খলনে।
প্রাণীর সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ধন।
মৃত্যু
মৃত্যু একান্ত ব্যক্তিগত; কিন্তু যন্ত্রণা সামষ্টিক।
নাড়ি
মানুষের নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও আচরণের সর্বোচ্চ অংশীদার।
চেহারা ও চরিত্র পড়ে নেওয়ার শেষ আশ্রয়স্থল।
মানুষ ভালো-মন্দের অবস্থান বুঝে, ব্যক্তিকে মুল্যায়ন করতে, নিশানা লাগায় ওই এক জায়গায়ই 'নাড়ি'।
আলু
সব জায়গাতে যার বিচরণ, এমন কোনো তরকারি নেই যেখানে সে ভালোবাসা ও পণ্ডিতি ফলাতে যায়নি।অথচ মানুষ চারিত্রিক গালি আওড়ায় "তর আলুর দোষ ;তাই সব হারালি" এই বলে।
বেচারা তরকারিতে তৃপ্তি দেয় আর চরিত্রে বিড়ম্বনা ।
বেগুন
যার নামের অর্থ গুণহীন ;অথচ সে সব ঔষধি গুণে ভরপুর। মানুষ বিভিন্ন উপকার ও তৃপ্তিতে তার কাছে যায়।রসনা থেকে বাসনা ;বাজার থেকে উপযোগের বাহানায়।
হাত
যাকে আশ্রয় করে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদিত হয় ;অথচ নিজেই পরনির্ভরশীল,হুকুমের গোলাম।একেবারেই অধিকার ও অস্তিত্ব জ্ঞানহীন।
মগজ
পৃথিবীর সব রহস্যের সুতিকাগার,
আশ্চর্য সব আবিষ্কারের প্রসূতি।
ফাটলে বোঝবার উপায় নেই।
আমাশয়ের নাজুক উচ্ছিষ্টের মতো ভড়-ভড় করে বের হয়;অথচ মহিমা অপার।
হাড়
দধীচির বলিদানে আলোচনায় আসে;শেষমেশ উপকার করে থামে চিরুনি হয়ে।
তলোয়ার
ফটাসের আধিপত্যে নিজেকে বড়ো গুরুত্বহীন দেখে।শরীরের বৃদ্ধ চামড়ায় জংধরে আছে। হালাকু খান আর টিপু সুলতানের জন্য রোজ রোজ চোখের জল ঝরায়,মোমবাতি জ্বালায় দহনে।
কচুপাতা
বড়ই অভাগা,জলটুকুই ধরে রাখতে পারেনা;
জনগণের গলা না ধরার আস্থা কী ভাবে ধরে রাখবে!
চোখ
বন্ধ করলেই এর গুরুত্ব বোঝা যায়;
খোলা থাকলেই গরমিল।
পথ
শুধু নিরাপদ গন্তব্যেই পৌঁছায় না ;ধ্বংসের দিকেও নিয়ে যায়। পথিকের চিন্তার সীমানায় জন্ম নেয় পথ -আর পায়ে পায়ে বেড়ে যায় তার শরীর।
আগুন
কাণ্ডজ্ঞানহীন!
মন থেকে শুরু করে ধন- সব কিছুর পরিণতি ছাই করে ছাড়ে। অবস্থান নিরিখে পরিণাম নির্ধারণ করতে জানেনা।
বিশ্বাস
জগতের প্রাণীকুল কেউ বিশ্বাসকে -অবিশ্বাস করে থাকতে পারেনি।
উদাহরণ :সাপ চাষি।উভয়ই বিশ্বাস করে বাঁচে নির্ভয়ে।
ফসিল
বৃত্তান্তের মহাকাব্য,ক্ষুদ্রতেই যে সমগ্র রচে।