নীহার লিখনের গুচ্ছকবিতা
নীহার লিখনের গুচ্ছকবিতা

শামুকের তুষার
~

ঘর এক বিষন্নতার নাম, বিকালে সেখানে আমরা বসে থাকি, দুপাটি ফুল আর পালিত খরগোশের ভীতু চোখের সীমায়,সূর্য্য ডোবার আগে রেলিংয়ে আধভেঁজা কিছু কাপড়ে জড়িয়ে থাকে যার গান, যাপন ও রক্তবিবিধ, তার বাসিন্দারা মালি অথবা ফুলচাষের বিগত বীজতলা,কীটদষ্ট পাতার ঝোঁপে ব্যাকুল বিলাপ, পাশেই মাটির টবের লাইনে গোলাপের পাঁপড়ি, মনে হয় সুগন্ধিতে ছিটিয়ে রেখেছে ক্লেশাবহ অর্থ ও নিগূঢ়

চুমু এক বিনীত জাবর, উদ্যত ওষ্ঠ যাকে বোঝে না কেন সে হারিয়ে যায় গ্লিসারিন-দিনে, সবিশেষ এক শীতের পুকুর যা হেলেঞ্চা লতায়, যার স্মৃতিরা আদতে কোন শিয়ালের গন্ধের মতোই, কুয়াশায় শোনা যায় কাতর হাঁকের আওয়াজ

চোখ, আসলে ফটোগ্রাফ অথবা সাগর, আরেকটা চোখ এসে যাতে আতিপাতি করে যায় হারানো আলোয়, খোঁজে পুরানা জাহাজ, যেখানে কোনো পুরান নাবিক, নীল অথবা গভীর কালো জলের কোটরে অধোবদনে মিশে থাকে অজস্র শামুকের তুষারে

দূরে
~

একটা কথাই বলি, দূরে চলে যাও
কাছ থেকে কিছুই দেখে না চোখ
নুয়ে আসা আকাশ আদতে যা দেখা গেলো এতোদিন
তাকে ভেদ করে চলে গেছে মামুলি পাখিও

নৈঋতে তোমার জন্যে, কিংবা ইশানে
কেউ কি বলেছিলো, দাঁড়িয়েছি,এই যে আমার একটা হাত খোলা রেখে, বাড়িয়ে

নিরন্নকালে, এইসব হেমন্ত গান, ঝুনঝুনি বাতাস
রোদ চকমকি
এক ডাবিং মুভিটা ভিন্ন ভাষায়, চেপে রাখে না কি সব মিহিন চি... চি... সমূহ ব্যাথার
অলিন্দে হাত রেখে যদি তা বুঝা যায় এমার্জেন্সী চলে যাওয়া ভালো, মখশ খেলায়ই যদি কেউ পারিজাত বুঝে নিতে পারে, তবে তারো অধিক কোনো ফুলে তার চলে যেতে হয়

দূরে যাওয়া ছাড়া, আসলে কে আর পেরেছে খুব কাছে যেতে

সরিসৃপ সন্ধ্যা
~

এই যে সরিসৃপ সন্ধ্যাটা আবারো ডুবে গেলো
কোথায় গেলো, কোথায় যায়, গন্তব্য কী তার?

দমিত হতে হতে একদিন মানুষও কি উঁকি দিতে চায় গন্তব্য নেই এমন কোথাও, ওখানে কি আছে কোনো ভিসুভিয়াস কিংবা কোনো নিরাভরনের শন গাছ?

দেখতে ইচ্ছে করে না? এই যে মন মন করে, মন খারাপের কথা লিখে রেখে চলে গেছে এতো এতো জীবন্ত জন, তারা আসলে কি এতো কাতরতা ভেবেছিলো হলুদ রঙে? সময়,কুড়াল মাছের মতো একটা শরীরে কিভাবে মিশে যায় সমগ্র জলে?

একটা সূর্যকেই কতোবার প্রদক্ষিণ শেষে বলো তোমার পৃথিবীটা আমার হবে?

সম্মতি
~

যখন ভেবেছি এও এক গভীরতাই
অভিমুখ বদলে যাচ্ছে মুখের নিরিখে
সহজাত বৃন্তের পুষ্প ও মেঘেরা যেমন

সংবেদ থেকে চিরদিন দূরেই লাগে সংবিধান
মেনে নিয়ে তৈরি করেছি জমি নীল চাষাবাদে
স্মৃতি অবসরে ভেবে রেখেছি একটা শম্বুক গতির বন, হরিণ সমূহ, সামান্য একটু কুটির জিরাবার

ভেবেছি এইসব কেবলই এক খুব সম্মোহন
রক্ত-মজ্জা ঘিরে তুমুল এক নিস্পৃহতার

দেখেছি তোমার পেখমে কোনো সুনীল ময়ুর
বৃষ্টি নামার পরে শিকড় বাকড়ে থাকে সব কোলাহল
তখন আর সম্মতির অপেক্ষায় থাকি নি যাবার
বুঝেছি কালিদাস মরে যায় প্রতি বরষায়

তোমার বাড়ির ছাদে
~

তোমার বাড়ির ছাদে
একটা কি যেন পাখি বসে থাকে জলের ট্যাংকটি ধরে আমার পাজলের দুপুরে

কতোকি জীবন মিশকালো হয়ে এলো
হিজিবিজি নিয়ে এগুতে এগুতে আমার
পুরানা দিনের হিন্দি গান
ব্রায়ান এডামসের সিক্সটি নাইনের সামার

তুমি হয়তো মাইক্রো একটা ন্যাপে এখন রয়েছো ঘরে
তোমার একটা ঘর চিরদিন গোছানোই
আরো একটা কিছুটা অন্দরে

আমারতো খুব টই টই ছিলো আবিষ্কারের মতো
প্রতিটা দুপুর
আজো আছে ঠিক সেরকমই স্থির
প্লাস্টিকের ওই ট্যাংকটার মতো কোণে
একলা পাখিটা বসে থাকে যেইখানে


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান