নীহার লিখন এর তিনটি কবিতা
চক্রবাক
চাঁদের অনেক উপমা রয়েছে, তাই ভেবেছি নতুন কিছু তাকে নিয়ে, নিদেন পক্ষের কোনো অনিত্যের গায়ে
একবার পরিপুষ্ট তাঁর দেহে ভাবতে চাইছি মন্বন্তর কোনো, রিক্ত-জীর্ণ মানুষের আহাজারি ও কান্নার সংস্রব ছাপিয়ে হাসছে বাতাসি কিন্নরী আলোর জবান, রশ্মির ঝিলিকে বাঁশের ঝুরঝুর বেড়ার মতন জীবনের উপকন্ঠগুলোতে কেউ টোকা দিয়ে ভাঙছে লাজের বাড়িঘর; দূরে কোনো বিষন্ন মানুষের বাঁশির নির্ঘূম রাত, হাস্নাহেনার গন্ধে, শিশুরা কাঁদছে, ঘনীয়মান রাতে পোকা ডেকে যাচ্ছে দাদার দীর্ঘশ্বাসের বাতাসের মতো
তোমাকে ধরে রাখার সমস্ত ইচ্ছায় পৃথিবীতে জং ধরেছে সব কিছুতে, তবু প্রেম পড়ে আছে, মানুষের নিয়তির রূপ ধরে কোনো দোলনচাপায়, তাঁর গন্ধের বর্শায় বিদ্ধ হচ্ছে সে নিজেই; যেন এক চক্রবাক, যার প্রস্থ ও দৈর্ঘে হাসছে সংসার আর এ দুনিয়ার সব অভিপ্রায়
আমি ও সে বহূদিন একত্রে থেকে ডুবে গ্যাছি, জল নেমে গেলে কেউ আর কারোরই মুখ দেখি নাই, তারপরও আমরা দস্তখতের মতো; ভুলে গ্যাছি নিজেদের নাম সর্বস্ব স্থাবর, আর কেউ তাকে আজো সত্য করে বেঁচে আছে
পরিমিতি
যেন তরঙ্গের পেটে মাছ হয়ে মাপতে চেয়েছি ভব-সাগর, হন্তের কম্পনে, জলের নিরিখে, উপরি তলে মাত্রই কোন অতিকায় জাহাজ চলে গেলো; মৎস্যকন্যার সঙ্গীতের আবেশে সান্ধ্য এক তমসার পেটে ডুবে আছি মাউথ অর্গান, রিডিংয়ে জারিত হচ্ছে বালুঝর আর অন্ধকার, আর সলিলে প্রয়াত সব কঙ্কালরাজির পাহাড়ের ফেনারা উর্দ্ধমুখে বুদ্বুদ তুলে উদ্বায়ু মেঘ হয়ে ভেসে যাচ্ছে অন্য কোথাও, যেখানে মানুষ যেতে চেয়েছে বিধায়; যেন বহূ গ্রাম সেখানে অবাধে, কলমির শাক, আর মরিচ ফুলের পাশ ঘেঁষে প্রতিবেশীদের ঘরের দেয়াল, আড়ালে শব্দ করছে শিশুর বিকাল
এসব পরিমিতি ব্যর্থ হতে হতেই একদিন শিখে ফেলে মানুষ, ডুবে গেলে অন্ধকারেই যেরকম চোখ পায় দ্যুতি, একটা ব্যর্থতার থাকে অনেকগুলো জীবন্ত মুখ, যার অনেক বিভব, তাঁর জন্যে বাহিত হৃদয় মেলে দেই ফুলে ফুলে, নাম যপি তাঁর, করি স্তুতি
প্রভু
আদিম দূর্ভ্যেদ্য পাহাড়, তবু অন্ত্যজ ভেবে বেগুনী ফুল হই সেখানেই
প্রভুত্বপরায়ণ আমার মন, চাঁদ না উঠলেও রূপাকে কালো দেখতে শিখেছে, তিলে তিলে সে হয়েছে এমন, চোখ উপড়ে ফেললেও তাকায় না, বরং অপেক্ষা করে অন্য কোনো সত্তায় শুন্যস্থানটি পূর্ণ হয়ে যাবে, যেভাবে শীতের শুকনা ডোবাগুলো একদিন আপনাই ভরে উঠে
প্রণতির সামান্য শেকড় পাথরে ডুবিয়ে হয়েছি গাছ, তিলে তিলে জেনেছি সকল বিস্তারিত ঘটনায় কিছু নেই, প্রভু একটা চেরীর মতন তোমাকে গচ্ছিত রেখেছে আমার
আমার কাজ এখন শয়তানের থেকে দূরে থাকা, আর তাকে অন্ধের মতন ডাকা