নয়টি কবিতা । আবু সাঈদ তুলু
নয়টি কবিতা । আবু সাঈদ তুলু
জীবের অস্তিত্ব

 

পৃথিবীতে অনির্বাণ সত্যগুলো টিকে থাকে

ধ্বসে পড়ে সব মরীচিকা

আশাস্বপ্ন জীবনের শক্তি

অনাগত সূর্যের পথে হেঁটে চলা দিগন্ত

ভাসিয়ে রাখে জীবনকে

তবু জীবন, বিদীর্ণ বালিকা ভূমির মতো ক্ষয়িষ্ণু

পৃথিবীতে ঝড় আসে

ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় সব

তবু, পৃথিবী বয়ে চলে দৃষ্টিসীমার অগোচরে

ঠিক জীবের অস্তিত্ব

নীল দিগন্তে সূর্য ঠাঁয় দাড়ায় না।।

 

 

মনের শক্তি

 

সুরের ধ্বনি আনন্দে বাজে

বেদনা কী বিষাদময়

উষ্ণ হৃদয়ে বৃষ্টির ছোঁয়া

হৃদয় কাপাকাপি করে

নদীর ঘাটে

নদীর ধারে

সীমার পাড়ে অসীম সাহসে

দিগন্তের সূর্য তারায় তারায় হাসে

 

ভালোবাসার ঘনত্ব

 

নদীর তীরে আচড়ে পড়া ঢেউয়ের মতো

তোমার হাত আটকে ছিল আমার হাতে

জানি, আচড়ে পড়া পানি নদীতে ফিরে যাবে

শূন্য হাত শূন্যে রবে

কাশবনের বয়ে যাওয়া শুভ্র দৃষ্টিতে

ভালোবাসা জড়ানো ছিল

নদীর তীরের কাশবনের ঘনত্বের মতো

তোমার ভালোবাসা

কাশবনের নরম ঘাসে স্নিগ্ধ দুটি পা তোমার

পড়বে হয়ত শুভ্র কোনো শিশিরে

কাশবনের ঘনত্বের মতো হৃদআঙিনায়।।

 

মানব প্রজাতি

 

মানুষ বৃক্ষ নয়

কিছু দিন পৃথিবীর বুকে নড়ে চড়ে

হাঁসে কাঁদে আর সময় নষ্ট করে

দুঃখ ক্ষণস্থায়ী এক আবেগ

নদীর ধারে লুকানো গাছের পাতার মতোন

অস্তিত্বহীন এক সত্তা ঘুরে বেড়ায়

মানুষ এমন এক প্রাণী

বেঁচে থাকে এক অনিমেষ মৃত্যুর যাত্রায়।।

 

জীবনের দোল

 

বাতাসের দোল, চকিত চাহনি

অমৃতের আস্বাদন আমার জীবন নয়

আমার জীবন

ঘাসফুলনদীর দুঃখ ঝরে

পূর্ণিমার স্বচ্ছতায় আনন্দ হাসে

বৃক্ষবিহঙ্গবনলতা প্রাণের ক্ষুধায় মরে

ঘাতপ্রতিঘাতের দোলাচলে

যে জীবন আমার

মানুষ মানুষ করে কেঁদে মরে

স্বপ্নচারী আমি নই

আমিতুমি, তুমিআমি এক নশ্বর প্রজাতি

দেহ ধরিদেহ রাখি সীমাবদ্ধ ভ্যূলোকে।।

পঁচে যাই মরে যাই আর বেঁচে উঠি

আলো বাতাস আর সূর্যের ডাকে

মানুষ জন্মে মানুষ হয়ে উঠাই মানুষে

 

হাসি অথবা কান্না

 

এখন আর হাসি না

ক্ষণে ক্ষণে কাঁদি

অসীমের বেদনা যার হৃদয় ছোঁয়ে যায়

দিগন্তের হাতছানি যাকে তাড়িয়ে বেড়ায়

তার হাসির প্রত্যাশা কেন?

কদিন হলো আর কাঁদি না

মিটি মিটি সারাক্ষণ হাসি

বুকের ভেতর জমাট রাখা আনন্দ যার

সুখের তীব্রতা বারবার যার আকাশ ছোঁয়া

তার কান্নার প্রত্যাশা কেন?

আমি ভাবি বলেই আমি আছি

হাসিকান্নার অবিনশ্বর সূরের ধারায়

আনন্দদুঃখের মায়াবীয় সুখের ছায়ায়।।

 

জীবনের হিসাব

 

মায়া করে লাভ নেই

গ্রহভূমিতে কেউ কারো নয়!

মায়া ছাড়াও লাভ নেই

গ্রহভূমিতে একা বাঁচার নয়

এখানে ধ্বংসনির্মাণ একত্রে বাস করে

               

সূর্যের আলো যখন উপরে ছড়িয়ে পড়ে

সীমাহীন ভালোত্বে উঠে দাঁড়াই

অন্ধকারের কালো যখন ঘনিয়ে আসে

উদ্দাম কুটিলতায় মেতে উঠি

আসলে

নিজেকে দেখি না বলেই পৃথিবী দেখা হয় না।।

 

 

শেষ সংলাপ

 

সবই শেষ হয়

দিন ফুরায় রাত আসে দিন হয়

বিশাল জগতে কে কাহার!

নদীর জলসময়ের স্রোত

অবিরাম ধেয়ে চলে বিসর্জনে

সবই বয় সবই হারায়

কেবল জেগে থাকি আমরা

ইতিহাসের অবিনশ্বর ধারায়

একা অসহায়।।

 

 

শেষ উপলব্ধি

 

জীবন ভ্রমণের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে

হিসেব মিলাই জীবনের

নষ্ট সময়ের খাতা ছাড়া কিছুই নেই

পারতাম যেতে শিখরে উঠা সত্যে

কিংবা সমাজের সূর্য হয়ে জেগে থাকতে

নিভু নিভু এখন সলতেহীন কষ্ট জাগে

কী করা উচিত জীবনের

কী তবে কাজ মানুষের

কী তবে আশা হৃদয়ের্

ঘুমের ঘোরে বুঝি কেটে গেছে জীবন

শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে বুঝি

উদ্দেশ্যহীন স্বেচ্ছাচারে সময় কাটিয়েছি

হুংকারে যদি ফিরে যেতে চাই

কিন্তু সময় জীবন আর শক্তি যে নাই

 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান