জদ্দন বাই
জদ্দন বাই, তোমার মুজরাতে টানবে না আমাকে?
আমি শতাব্দী পেরিয়ে যাবো রঙমহলের বেলোয়ারি সাজে-
নেকাবে সচকিত চপল চাহুনি সুরায় হবো বুঁদ
মেহফিল ভাঙলেই তবে উঠবো তাকিয়া ছেড়ে।
শুনেছো এই শতাব্দীর গান কিন্নরকণ্ঠা নারী?
বাতাসের দূষণ বেয়ে কানে এসে বাজে
কিভাবে মিলাই বলো-
কাঁকন সজ্জিত হাতে রতনচুড় চমক
টারসেলে ঝুটি উড়া কারচুপি ঝুনায়
আঙ্গুলের চপল মুদ্রার ঝিকিমিকি বাহার
পায়েলের রুণুঝুণু কেঁপে ওঠা মাটি
মারহাবা! মারহাবা!! আবেগ আপ্রাণ
যন্ত্রের কন্ঠ ছেড়ে অকৃত্রিম তানে
মেলাবো তোমায় মেলবো আমি
আমি শতাব্দী পেরিয়ে যাবো
পাগল প্রেমিক হয়ে ভুলে জাত-কুল
সারেঙ্গীর তানে ভেসে আসা অন্তস্থ কান্না
সগৌরবে লুকাতে যে হাসি গানে
যাবোতা, নেবে না তোমার সকরুণ মুজরায়!
নিঃসম্বল
নিঃশেষে নিঃস্ব করে গেল যে ভ্রমরা
তার গানের সূত্র খুঁজছি
ধরো আজ চাঁদ নেই ; বাতাসটাও দেমাগী হয়ে
গুমোট ধরে আছে ; অন্ধকার থেকে দু'একটা
রতিকামী ব্যাঙ নববর্ষার জলে ডাকছে
নগরের বৈদ্যুতিক আলোর নিচে
নাচছে বিভ্রান্ত কিছু পোকা
তাদের মতো আমিও ছুটছি জুজুর সন্ধানে
ভ্রমরার তালে তাল মেলাতে আমি বসে আছি
জৈবিক ফুলের নিচে-
কোনদিক থেকে কে এসেছিলো তার সুলুক
সন্ধানে নামমাত্র পথে বসে থাকা
আসলে চোখ সর্বত্রগামী হতে পারে না
তার সম্মুখ থাকে-
পেছনে যে গান ধরে শুনিয়ে গেল অবিমিশ্র সুর
তার সুতিকালয়ে আমি অমৃত খুঁজছি।
ফিরবো
যদি সচেতন আলো ফেলো
অবচেতন মনে
তবে ফিরবো
ঘাটে ঘাটেই জল খেয়ে ফিরবো।
যে ফেরে না সে ফেরার
তাকে খুঁজো না খাটে, বাসরে
বাসর অন্ধগলি
মহল্লার কষ্টগুলি সেখানে জমে
কাঁদে, তারপর নাইয়র যায়
অন্য উঠোনে
সেখানে আর আলো জ্বলে না
সচেতন আলোর মতো
যদি কিছু ফেলো
তবে ভাঙবে হাট
হাটে হাটেই সওদা করে
ফিরবো।
গুহা মানব
ফিরেছি অন্ধগুহায়
গুহা মানবী সম্মত হও
আগুন ঢালা চোখে বলো 'স্বাগতম'
এখানে বাতাসের খবর আসে না
পীড়নপ্রিয় বৃষ্টিও দেয় না ঝাট
বদ্ধ ঘরে দু'জনে নিজস্ব শ্বসনের শব্দ তুলে
জৈবিক গুহার তকমা দাও-
ভেষজের রঙ মেখে তৈরি করো গুহাচিত্র
প্রণয়ের মাঝখানে ধুকপুকে হৃদপিন্ডের ছবি
বিগলিত দেহের পিনোন্নত ভেদ রেখাগুলো
বাইসনের শিঙের ওপর তেজী সূর্যের দগদগে
যৌবন... কামার্দ্র বীণাপাণির শৃঙ্ঘারের
ঝংকার।
আসমুদ্রহিমাচল ভূকম্পনের যজবায় সম্মত হও
ফিরেছি অন্ধ গুহায় ত্রিকাল অতিক্রমে
গুহা মানব তকমায় ; মানবী সম্মত হও!
চাঁদ সম্ভার
আমার ঘর হতে যেটুকুন চাঁদ দেখা যায়
সে টুকুই আমার
সম্ভবতঃ পৃথিবীর সকলেই
চাঁদের ভাগ পায় না!
কেউ আলো পেয়ে পথ হাঁটাই সার ভেবে নেয়
কেউ কেউ অভেদ জ্ঞানে অন্ধকারের আয়োজনেই ঘুম যায়-
যারা জোছনা পেয়ে খুশি
অভিসারে ব্যাকুল হয়ে ছুটে
তবুও অতিশয় ফাঁকা বেহিসেবে পাওয়া
মুদ্রার মতো ভাঙাতে কারো চাঁদে কার্পণ্য নেই
চাঁদের আকাশ থেকে ধারকর্জ করে বায়ু এনে
শ্বাস নেবার বিলাসিতাও কেউ কেউ ভাবে
তবুও মন থেকে সম্ভবতঃ
চাঁদের ভাগ সকলে পায় না
যেমন মা চাঁদ-সোনা মূল্যমানে সন্তানকে শুধায়
তখন আমার ঘরের গবাক্ষে যেটুকুই চাঁদ দেখা যায়
সেটুকুই আমার!