ওরা নেমেছে রাজপথে, শয়ে শয়ে, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ! ওরা জেগেছে আজ_ জাগাতে আধমরাদের। ঘুণে খাওয়া, পোকার দখলে যাওয়া বিবেককে জাগাবে বলে। ওরা আর একটা প্রাণকেও রাস্তায় ঝরে যেতে দেবেনা, ওরা দেবেনা আর কোন অনিয়মকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে। এ দেশের সোনার মাটিতে পিষে দেবে যত অনিয়ম ,উচ্ছৃঙ্খল। তাজা প্রাণের উচ্ছাসে ওরা উচ্ছসিত! রক্তে আজ আগুন লেগেছে, রুখবে এমন শক্তি কোথায় আজ!! যৌবনের উন্মাদনায় নতুনের জোয়ার এসেছে , সে জোয়ারে ভাসছে পুরো দেশ। জয়ের কেতন উড়বেই উড়বে, এগিয়ে যাও নির্ভয়ে। তোমারাই পারবে, তোমাদের হাতেই দেশ নিরাপদ, তোমাদের হাতেই বুড়ো বিবেকটাকে একটু ঝালিয়ে নিতে চাই, পাশে আছি, থাকব।
ফেসবুকের ভিডিওগুলো দেখতে দেখতে ঝিমিয়ে পড়া মনটা জেগে ওঠে ইরার। সন্ধ্যে হয়ে গেছে কখন টের পায়নি কিছুই। কাজ থেকে ফিরে এসে নিজের ঘরটাতে শুয়ে পড়েছিল ও। বাইরের জামাটাও ছাড়তে ইচ্ছে করেনি , বসে গিয়েছিল ফোনটা নিয়ে। ফেসবুকের বিভিন্ন ভিডিওগুলো দেখছিল আর ওর নেশা হয়ে যাচ্ছিলো। ঢাকার ছাত্ররা রাজপথে নেমেছে। ওদের প্রতিবাদ কোন সরকারের বিরুদ্ধে নয়, নয় কোন দলের বিরুদ্ধে। ওরা চায় বদলাতে সিস্টেম। ঢাকায় দুই বাসের প্রতিযোগিতায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রদের উপর উঠে যায় একটা বাস। দুজন শিক্ষার্থী সাথে সাথেই মারা যায়, অসুস্থ হয়ে ভর্তি হাসপাতালে অনেকে। তারই প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছে একদল দেবদূত। ওরা নির্ভীক, প্রানোচ্ছল প্রান। ' 'নিরাপদ সড়ক চাই' এটাই ওদের দাবি। ওরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রাফিকের কাজ করছে, লাইসেন্স চেক করছে সবার। লাইসেন্সবিহীন গাড়িগুলো জমা হচ্ছে একদিকে। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রাস্তায় করেছে ইমার্জেন্সি লেন। ঝড় , বৃষ্টি উপেক্ষা করে দেশকে ঢেলে সাজাতে ব্যস্ত ওরা। নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়িত হলে আমরা কি তার ফল ভোগ করব না? ইরার খুব ইচ্ছে হয় রাজপথে দেবদূতদের পাশে দাঁড়াতে, খু্ব ইচ্ছে করে পরম মমতায় ওদের মুখের মুক্তোর মত ঘামগুলো মুছে দিতে, খাবার নিয়ে গিয়ে না খেয়ে থাকা ছেলেমেয়েগুলার মুখে ভালোবেসে তুলে দিতে। কিন্তু ঢাকা থেকে অনেকটা দূরের গ্রামে থাকে ইরা। কি করে যাবে সেখানে ও। তাছাড়া অফিস থেকে ছুটিও পাবেনা, অনেকগুলো ছুটি নিয়ে ফেলেছে বছরের শুরুতেই। অস্থির লাগে ইরার। কিছুই করার নেই আমার, ভাবতেই একরাশ হতাশা এসে গ্রাস করছে ওকে।
মা
এসে, কিছু না বলেই আলোটা জালিয়ে দিল । তাকাতেই একরাশ আলো হুড়মুড় করে
চোখের ভেতর ঢুকে পড়ে ইরার। এতক্ষণ অন্ধকারে থেকে চোখটা বড্ড আরাম
পাচ্ছিলো, হঠাৎ করে এভাবে আলো জ্বালাতে মায়ের উপর বিরক্ত হলো খুব, কিন্তু
মুখে কিছু বললনা। মায়ের সাথে রাগ দেখাতে চায়না ইরা । মা অল্পতেই খুব কষ্ট
পায়, ইরার বাবা মারা গেছে সেই ১৪ বছর আগে। ওদের চার ভাইবোনকে নিয়ে অনেক
কষ্ট করেছেন মা। একটা সরকারি স্কুলের শিক্ষক তিনি। নিজের সমস্ত চাওয়াকে
বিসর্জন দিয়েছেন সন্তানের সুখের জন্য। তাই কোন সন্তান একটু রাগ করে কথা
বললে খুব আঘাত পান তিনি।
: এই সন্ধ্যেবেলায় ঘুমাচ্ছিস যে, শরীর খারাপ না কি?
: কিছু বলবে মা?ভালো লাগছে না।
: ঢাকায় না কি দুজন ছাত্র মারা গেছে? ছাত্ররা সব রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছে, শুনেছিস কিছু? স্কুলে সবাই বলাবলি করছিল। আমার তো ফেসবুক নেই, তাই দেখতে পারিনি। তোর ভাইজানরে নিষেধ করিস যাইতে, সে তো আবার সবকিছুর আগে থাকে। আর মিরা কে বলিস সাবধানে থাকতে। ওরা তো আমার থেকে তোর কথাই শোনে বেশি।
লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে ইরা। বিদ্যুৎ কানেকশন হয়েছে যেন শরীরে। পাগলের মত ছোট ফোনটা খুঁজতে থাকে, না নেই, কোথাও নেই। বিছানা থেকে নেমে যায় দ্রুত। ওয়ারড্রবের উপর থেকে হাত ব্যাগটা নামিয়ে নেয়। উফ! ব্যাগের চেনটার আবার কি হলো? খুলছে না কিছুতেই। জোরে টান দিতেই কেটে গেল চেন টা। সেদিকে নজর দেয়ার সময় নেই ইরার আজ। ব্যাগের ভেতরে হাতটা অস্থির হয়ে ছোট ফোনটা খুঁজছে। কিছুতেই হাতে আসছে না ফোনটা। বিছানার উপরে ব্যাগের সমস্ত জিনিস ঢেলে ফেলল এক ঝটকায়। কতগুলো কলম, গ্রিনটির কয়েকটা প্যাকেট, কবিতার খাতাটা, নানা রঙের সেপটিপিন, পানির বোতল, কয়েকটা খুচরো টাকা, পার্স, কাগজের কতগুলো টুকরো, লিপিস্টিক দুটো, কাজল, লিপজেল,ব্যাংকের চেক গড়াগড়ি খাচ্ছে বিছানায়। সবকিছুর ভেতর থেকে ছো মেরে মোবাইলটা নিয়েই ভাইয়া লেখা নম্বরটায় ডায়াল করল ইরা। একবার, দুবার, তিনবার,চারবার....কল করেই যাচ্ছে ইরা। No Answer প্রতিবারেই। বিছানায় আছড়ে ফেলে দেয় মোবাইলটা। ফোন থেকে একটা আওয়াজ আসতেই ছো মেরে তুলে নেয় ফোন, স্ক্রিনে তাকাতেই Battery low দেখতে পায় ইরা, নিস্তেজ হয়ে পড়া হাত থেকে ফোনটা মুক্তি পায়।
মা এতক্ষণ ইরার অস্থিরতা দেখছিল, কাকেই বা ফোন করছে, কি হলো হঠাৎ করে কিছুই বুঝতে পারলনা ইরার মা। মাঝে মাঝে মেয়ের আচরন কিছুই বুঝতে পারেনা সে।
: কি রে কাকে ফোন করছিস এতবার? তোর ভাইকে? কি হয়েছে? সে কি আন্দোলনে গেছে নাকি? তুই কিছু লুকাচ্ছিস না তো?
: আরে বাবা তা নয়। আমি আমার এক বন্ধুকে ফোন করছিলাম, হঠাৎ একটা কাজের কথা মনে পড়ে গেল তাই। তুমি খেয়ে শুয়ে পড়ো, আমি ভাইয়াকে নিষেধ করে দেব। ও যাবেনা।
ইরা সম্বিত ফিরে পেল যেন মায়ের কথায়।
ভাইয়াকে নিয়ে ওর অস্থিরতার কথা জানানো যাবে না মাকে কিছুতেই। মা অসুস্থ
হয়ে পড়বে তাহলে। ভেতরের অস্থিরতা লুকাতেই হবে যেভাবেই হোক।
ইরাদের
বাড়িতে দুটো বড়ঘর, একটা রান্নাঘর। ইরা যে ঘরটাতে থাকে সে ঘরের সামনে খোলা
বারান্দা দিয়েছে ওরা। আসলে প্লানটা প্রদিপেরই ছিল। প্রদিপ, ইরার একমাত্র
ভাই। ঢাকায় একটা প্রাইভেট ইউনিভারসিটিতে স্কলারশিপ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং
পড়ছে। ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ও। বলেছিল, খোলা বারান্দা থাকলে আমরা
ছুটিতে সবাই বসে গল্প করতে পারব, বৃষ্টি দেখতে পারব, আর আপু তুই লিখতে
পারবি! বেশ হবে,তাইনা?
ইরা সত্যি এমন একটা খোলা জায়গার কথাই
ভাবছিল লেখার জন্য, যেখানে বসে বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখা যাবে, জ্যোসনা মেখে নেয়া
যাবে সারা গায়ে। ভাইয়া যেন ওর মনের কথা বুঝতে পেরেছে। প্রদিপ ইরার অনেক
ছোট হলেও নাম ধরে কখনো ডাকেনি ও ,ভাইয়া বলে ইরা প্রদিপকে।
খোলা
বারান্দায় বসে, অন্ধকার ফুড়ে অসংখ্য দুশ্চিন্তা ভর করছে মাথায়। বুকের
ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেছে, নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। রাত ১১ টা, ফোন করে
যাচ্ছে ইরা প্রদিপের প্রত্যকটি নম্বরে, এখন "সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়" বলছে।
অ্যান্ড্রয়েড সেট টা হাতে নিয়ে ফেসবুকে যায় ইরা। প্রদিপের আইডিতে আঙ্গুল
চালায় ঝড়ের বেগে, নিশ্চয়ই কিছু পাওয়া যাবে।
" পোলাপানগুলারে এমনে মারতেছে?
রক্তে রঞ্জিত না হলে কি এ দেশ উর্বর হবেনা?"
"এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়"
ভাইয়ের
স্ট্যাটাসগুলো দেখতে দেখতে চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে ইরার, ভাইয়ের প্রফাইলের
ছবিটা কেমন অস্পষ্ট। অজানা এক ভয় গ্রাস করে ফেলে ওকে, কোন অনুভূতি কাজ
করছেনা যেন, নিজের আইডিতে ফেরে ইরা। একটা ভিডিও দেখে আর বেদনায় নীল হতে
থাকে, ছাত্র অান্দোলনে ঢুকে পড়েছে কিছু দুর্বৃত্তরা। মারছে ছাত্রদের।
পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ গুলি করছে মিছিলে। এগুলো সব সকাল থেকে ঘটে
যাচ্ছে, এখন রাত। কাজের চাপে একবারও ফেসবুকে যাওয়ার সময় পায়নি ইরা। আজ
অফিসে এত কাজের চাপ ছিল যে মাথায় এসব আসেনি। তাছাড়া বসের সাথে খুব একচোট
ঝগড়া হয়ে গেছে আজ। মুডটাও অফ ছিল।
স্বাভাবিক সুন্দর আন্দোলনে এভাবে
ছাত্রদের মারা হবে এটা তো কল্পনার অতীত। এত সুন্দর চাওয়ার ও কেউ বিরোধীতা
করতে পারে? অবশ্য ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধেরও বিপক্ষে ছিল একটা দল।
এরা সময়ের সাথে সাথে জন্মায়, এরা থাকবেই, মিশে থাকবে আমাদেরই মত মানুষের
চেহারার ভিড়ে। ভাইয়ার পরীক্ষা চলছে, ইরা ভাবেনি প্রদিপ যাবে এ অান্দোলনে।
এছাড়া এখন আর তা শান্তিপূর্ন দাবি আদায়ের আন্দোলনের রাজপথ নেই। সুবিধা নিতে
একদল নেড়ি কুকুর মিশে গেছে ভিড়ে। এ ওকে দোষ দিতে ব্যস্ত! যে ই দোষী হোক না
কেন তাদের কামড়ে জলাতঙ্কের শিকার হচ্ছে পবিত্র মুখগুলো। বারান্দা থেকে
উঠে ঘরের বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে ইরা। মাথাটা যন্ত্রনা করছে খুব। ছুটে চলে
যেতে ইচ্ছে করছে রাজপথে। ভাইয়ার যদি একটা খবর পাওয়া যেত! একটা! এত অসহায়
লাগছে নিজেকে...
" আপু, আম্মুর দিকে খেয়াল রাখিস, ফোনে চার্জ নেই, আমি ভালো অাছি।আমার এক বন্ধুর চোখে রাবার বুলেট লেগেছে, হাসপাতালে যাচ্ছি। "
মেসেজটি অসংখ্যবার পড়ে ফেলেছে ইরা। আবার সুইচ অফ ফোনের। মা রাতের খাবার জন্যে এর মধ্যে ডেকে গেছে কয়েকবার। কোন সাড়া দেয়নি ইরা। দরজা বন্ধ করে , আলো নিভিয়ে অন্ধকারে শুয়ে আছে ও। কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না একদমই। সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে যাচ্ছে আপনমনে,ভাইয়ের মঙ্গলকামনায়।
আমি
কি স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি? নিজেকেই যেন প্রশ্ন করছে ইরা! মনে প্রানে চাইছি
ভাইয়া যেন ঘর থেকে না বেরোয়, ও যেন না যায় মিছিলে। অথচ একটু আগেও রাজপথের
ছেলেমেয়েগুলোকে স্যালুট করছিলাম মনে মনে , চাইছিলাম ছুটে গিয়ে যোগ দিতে
ওদের সাথে। তাহলে সেই আমিই চাইছি ভাইয়া যেন ঘর হতে না বের হয়!!
হ্যা,
আমি স্বার্থপর। নিজে সকল বিপদের সামনে বুক পেতে দাঁড়াতে পারলেও আমি আমার
ভাইকে ঠেলে দিতে পারব না অনিশ্চয়তায়। উদার হতে পারবনা, আমি স্বার্থপরই
হতে চাই। বিবেকের সাথে যুদ্ধ করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে ইরা।
দুঃখেরাও
একসময় ক্লান্ত হয়ে যায়, চোখের জলের ধারাও হাল্কা হতে থাকে।
সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে ডাকতে ক্লান্তিতে কখন যে ইরা ঘুমিয়ে পড়ে বুঝতে
পারেনা।
ইরা ঘুমের মধ্যে ছোটবেলার ভাইকে দেখতে পায়। সেই ৩ _ ৪ বছরের
ভাইয়া ইরার। হাসলেই মুখে টোল পড়ত, শ্যামা মুখে মায়া ভরা বড় বড় চোখ দুটিতে
দুষ্টুমি লেগেই থাকত। খুব বুদ্ধিমান ছিল প্রদিপ ছোটবেলা থেকেই। আশেপাশের
ওর বয়সী সবার থেকে একদম ভিন্ন। ইরাও খুব বড় নয় তখন , পঞ্চম শ্রেনিতে পড়ে।
ভাইকে তার কাছেই রাখতে হতো, ইরার বুকের উপর ঘুমাতো প্রদিপ, মায়ের কাছে রেখে
আসত ঘুমিয়ে পড়লে। কিন্তু মাঝ রাতেও যদি ঘুম ভেঙ্গে যেত প্রদিপের ইরার কাছে
যাওয়ার জন্য কান্না ধরত। যতক্ষণ না আপুর কাছে যাচ্ছে কান্না থামতেই চাইত
না। তাই মাঝ রাতেই ইরার ঘুম ভাঙ্গিয়ে ভাইকে দিয়ে আসত মা। আজ সেই ছোট
প্রদিপকে নিয়ে কোথাও যেন বেড়াতে যাচ্ছে ইরা। নদীর পাড় ঘেষে সুন্দর একটা
রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ওরা। রাস্তার দুধার দিয়ে অসংখ্য ফুল ফুটে আছে।
ইরার হাত ধরে হাঁটছে চার বছরের প্রদীপ। বড় বড় মায়াময় চোখে মুগ্ধতা উপচে
পড়ছে। মৌমাছি, নানা রংয়ের ফড়িং ওড়াওড়ি করছে । প্রদিপের জন্য একটা ফড়িং
ধরে আনতে যায় ইরা। অনেক ছুটোছুটি করে একটা ফড়িং ধরে ভাইয়ের জন্য নিয়ে
আসে ইরা। কিন্তু কোথায় ভাইয়া? ভাইকে কোথাও দেখতে পায়না ইরা। পাগলের মত
খুঁজতে থাকে প্রদিপকে। কোথাও নেই ! নেই..
ভাইয়া, ভাইয়া, ভাইয়া....বলে চিৎকার করে জেগে ওঠে ইরা।
অন্ধকারে বসে থাকে বেশ কিছু সময়, কাঁপতে থাকে। স্বপ্ন দেখছিল ,বুঝতে সময় নেয় একটু। মাথার কাছে রাখা পানির বোতলার সবটাই ঢেলে দেয় শুকিয়ে যাওয়া গলায়। নেট অন করে ফেসবুকে ঢুকতে চায় ইরা। দেশের খবর জানা প্রয়োজন, কিন্তু.... No internet connection... ,
বিছানা ছেড়ে মায়ের রুমে যায় ইরা, নীল আলোতে মায়ের ঘুমন্ত মুখটা বড্ড মায়াবী লাগে ওর। নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মা। আজ সকালেও গাছের কাঁঠালগুলো পরিক্ষা করছিল মা , প্রদিপ এসে কাঁঠাল খাওয়ার পর মা খাবে। পেয়ারাগুলো পেকে যাচ্ছে গাছে,সবাই খাচ্ছে কিন্তু মা ...পথ চেয়ে বসে আছে একমাত্র ছেলেটার। ফ্রিজে জমিয়ে রেখেছে গাছের কাঁচা আম, কয়েক টুকরো ইলিশ, দেশি মুরগী, ছোট মাছ, হাঁসের মাংস আরো কত কি!!
ফোনের কোন নেটওয়ার্ক নেই, নেই ইন্টারনেট ও। কি যে হচ্ছে...জানার কোন উপায় নেই। ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে
টাইপ করল ইরা....
" ভাইয়া, তুই সব বুঝিস। ছোটবেলা থেকেই তুই খুব বুদ্ধিমান। আমার থেকেও তোর বাস্তব জ্ঞান প্রখর। নেটওয়ার্ক নেই, জানিনা তুই কখন দেখতে পাবি এই মেসেজ! আদৌ পাবি কিনা! যা ভালো বুঝিস করিস কিন্তু মায়ের কথাটা একটু ভাবিস। তুই কিন্তু মা কে ভালো রাখার প্রতিজ্ঞা করেছিলি? নিশ্চয়ই ভুলে যাসনি তা। আর আমাদের তিনবোনের ভাইয়া ডাকার মানুষ ও একমাত্র তুই। ভালো থাকিস...সাবধানে থাকিস।"
একটু একটু করে ভোরের আলো ফুটছে বাইরে। নিঃশব্দে দরজা খুলে নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ায় ইরা। সারা শরীরে ভোরের বাতাস পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নদীর দিকে তাকিয়ে অজান্তেই আবৃত্তি করে ওঠে ইরা...
" মিছিলের সব হাত
কণ্ঠ
পা এক নয়।
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার।"