প্রদীপ আচার্য এর তিনটি কবিতা
অন্তিমের পথে
---
এই যে নদী,
এপার-ওপারের সখ্যতায়
বুকে ভাসায় জলের স্রোত।
এই যে নদী,
দুপারের প্রণয়-মিলনে
বুকে সাজায় মাঝি নামের সাঁকো।
এই যে নদী,
এপারের সাথে ওপারের বিরহ জাগাতে
হৃদয়ে ভাঙন তোলে অবিরাম।
এই যে নদী,
এপারের সাথে ওপারের চিরবিচ্ছেদে
জলহীন হতে হতে হাহাকার তোলে মরণের।
তবুও
ভোর হয় প্রতিদিন,
মধ্যাহ্ন তীর্যক হয়ে ক্লান্ত অতিথি বেশে জিরোয়
ফিকে আলোয় ভেসে গোধূলির পথ বেয়ে
অন্ধকার নামে পূবের চোখে
প্রতিদিন একটু একটু করে বিলীন হয়
আর ভাবে, এখনও বেঁচে আছি
এটুকু সান্ত্বনায়...
এভাবেই আমার বয়ে যাওয়া
প্রতিদিন।
ক্ষয়ে যাওয়া প্রতিদিন
একটু একটু করে...
অব্যক্ত
---
বলতে গিয়ে থামি প্রতিবারই...
সময়ের ইতস্ততায়;
নিঃসঙ্গ ব্যস্ততায়;
অপূর্ণতা লুকিয়ে;
সীমানা মাড়িয়ে;
কিছুই বলা হয়নি
ফিরে চলার পথের শেষ রেখায়
পলকে মেঘের ফাঁকে আকাশ ফর্সা হতে অল্প বাকি
পূব আকাশে চাঁদ তখনো দেয় না আলোয় ফাঁকি।
ক্ষণতরে দাঁড়িয়ে তুমি বললে তখন
দেখিয়ে আমায় বিদায় বেলার ভোরের তারা
গোপন হয়ে থাকবে তুমি সাথে
প্রণয়ের মহাকালে...
সেদিনও তোমার প্রেমে পড়ে নতুন কোনো মন
সেদিনও তোমায় বলতে গিয়ে থামে...
হয়নি বলা কথা।
হয়নি ছোঁয়া তোমায় ভীষণভাবে
নিতান্ত এক অনুভূতি নিত্য শুধু জাগে
বিরহের সুর সাধে তীব্র অনুরাগে!
উপেক্ষা
---
একটি কবিতা লিখব ভেবে আমাদের ভেতর তৈরি করতে চেয়েছি ঝলমলে কিছু আবেগ
যেখানে প্রতীক্ষা সেখানে কি সব সময়ই থাকে সম্ভাবনা!
পাওয়ার আর না পাওয়ার...
সম্ভাবনা কি থাকে উপেক্ষার
অবহেলার
কিম্বা অসন্তোষের!
তবে কি আবেগের কোনো ধ্রুবতারা পথ দেখিয়ে বলবে,
প্রতিটি প্রতীক্ষার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে অপার বেদনা!
তুমি হাতটা কাছে টেনে বললে, বেদনা;
কবিতার জন্য হয়তো দারুণ
কিন্তু উপেক্ষিতের যন্ত্রণা কতটা বোঝে কবিতা!
অণুটুকুও নয়...
একটি কবিতা লিখব বলে আমাদের ভেতর বারবার তৈরি করতে চেয়েছি ঝলমলে আর সুতীব্র কিছু উপেক্ষা...