ছবি : প্রবন্ধকার
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'বিড়াল' নামক রম্যরচনার সাথে আমি একটি বিষয় সংযুক্ত করতে চাই, তা হল, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অতি প্রাচীন একটি কথা শুনা যেতো যে, নারীরা হল ঘরের বিড়াল!
বঙ্কিমচন্দ্রের' বিড়াল ' রচনাটি রম্য বলে চোরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এটিকে প্রয়োগ করেছেন নিজস্ব যুক্তির মারপ্যাঁচে।
আমি যৌক্তিকতার দিক দিয়ে নারীকে 'বিড়াল'হিসেবে দেখি এই সমাজে!
বিড়ালের সাথে নারীর একটি সম্পর্ক আছে কারণ,বিড়াল একটি অসহায় প্রাণী ; নারীও তাই!
যার সংসারে অর্থের অভাব, তাকে কেউ কখনো কিছু দিতে আসে না!
প্রতিভা থাকলেও বিকশিত করার জন্য কেউ পাশে দাঁড়ায় না!
পাশে দাঁড়ায় যদি কারো অর্থনৈতিক অবস্থান খুব বেশি
থৈ থৈ থাকে!
যদি কোন ব্যক্তি প্রতিভাবান হয় বা নিজের প্রতিভা বিকাশ করতে চায়, সে ক্ষেত্রে অন্তরায় হয় শুধু অর্থাভাব!
যদি ব্যক্তিটি হয় কোন নারী তবে তো কথাই নেই!
অর্থের কাছে সব কিছু জিম্মি!
দরিদ্রের জন্য কেউ কখনো ব্যথিত হয় না। বরং দরিদ্রের জন্য ব্যথিত হলে অন্যের কাছে উপহাসের পাত্র হতে হয়।
জ্ঞানীর দ্বারে - দ্বারে ঘুরে ঘুরে ক্লান্তি আর অপমান সার হয়!
কোন ভাল কাজ দরিদ্র ব্যক্তির দ্বারা কখনো হতে পারে তা মানতে যেনো নারাজ!
ধনীর যোগ্যতা আর প্রতিভার মাপকাটি কেউ চায় না। তাদের লাগেনা এত মেধা খরচ করতে!
কারণ সে খরচ করতে জানে অর্থ!
সকলেই তখন এগিয়ে আসে তার কাছে! সমাজের জ্ঞানী বলে আখ্যায়িত ব্যক্তিটিই তার কাছে হিল্লা দিয়ে পড়ে থাকে!
যে কখনো অন্ধকে মুষ্টি-ভিক্ষা দেয় না, সেও একটা বড়লোকের দুঃখে রাতে ঘুমায় না! বরং সকলেই তার ব্যথায় ব্যথিত হতে রাজি।
সমাজের উচ্চাসীন জ্ঞানীরা নতুন পরিকল্পনা দেয় আর বাস্তবায়নের শতভাগ নিশ্চয়তা
দিয়ে, জ্ঞান বিলিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবনার উদ্ভব ঘটিয়ে থাকেন! তখন
তরতর করে সুনাম বেড়ে যায় সেই ধনী ব্যক্তিটির!
'কেহ মরে বিল ছেঁচে কেহ খায় কই' এক্ষেত্রে আক্ষেপ নেই কারোরেই!
ধনী ব্যক্তির কারো কাছে যেতে হয় না বরং তার দিকেই সকলে ওৎ পেতে আসে!
আর দরিদ্র ব্যক্তি বিড়ালের মতোই প্রাচীরে প্রাচীরে মেও মেও করে। তবুও তাকে কেউ মাছের কাঁটাখানাও দেয় না!
তবে, সবসময় ধনী হলেও অনেক কিছু হয় না!
যদি নারী লোক হয় সে জন!
নারীদের পেছনে তো নারীরাই বড় বাঁধা!
সৃজনশীল মনোভাব নিয়ে কোন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে যদি জন্ম নেয় সে এ জগতে পঁচনশীল নইলে কৃতিত্বের অধিকারী দুটোর একটি হতে হয়!
তবে, দম লাগে তার জন্য!
সবার অবস্থা একরকম হয় না কারণ, নারীরা ঘরের 'বিড়াল' এই একটি কথাই ব্রেইন ওয়াসের জন্য যথেষ্ট!
ক্লান্তি - কষ্ট আর অপমানে যখন কোন কিছু করার ইচ্ছাকে দমিয়ে দিতে থাকে তখন সেই নারীটির বক্তব্য হয় বিড়ালের মতোই! ' দেখ আমাদিগের দশা দেখ, দেখ প্রাচীরে প্রাচীরে,— প্রাঙ্গনে প্রাঙ্গনে — প্রসাদে প্রসাদে মেও মেও করিয়া দৃষ্টি করিতেছি— কেহ আমাদিগকে মাছের কাঁটাখানাও ফেলিয়া দেয় না।
একজন নারী কখনোই সহজে তার মনের আশা- আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সক্ষম হয় না!
তার উপরে যদি হয় দরিদ্রের মতো এমন অন্যায় জড়িত থাকে তবে তো কথাই নেই--
একজন নারী সৎ ও পুত- পবিত্র থেকে সহজে কোন কাজে সফল হতে পারে না! বা তাকে সফল হতে দেয়া হয় না! সাধারণ
বিড়ালের মতোই অবস্থা হয় তখন তার!
সেক্ষেত্রে ," যদি কেহ সোহাগের বিড়াল হইতে পারিল গৃহ মার্জার হইয়া, বৃদ্ধের নিকট, যুবতী ভার্যার সহোদর,বা মূর্খধনীর কাছে রতরঞ্চ খেলোয়ারের স্থানীয় হইয়া থাকিতে পারিল তবেই তাহার পুষ্টি!
তাহার লেজ ফুলে, গায়ে লোম হয় এবং তাহাদের রূপের ছটা দেখিয়া অনেক মার্জার কবি হইয়া পড়েন"
"আর আমাদিগের দশা দেখ- আহারাভাবে উদর কৃশ, অস্থি পরিদৃশ্যমান, লাঙ্গুল বিনত, দাঁত বাহির হইয়াছে, জিহ্বা জুলিয়া পড়িয়াছে - অবিরত, আহারাভাবে ডাকিতেছি মেও মেও!"
যদি কোন নারী কারো মনোরঞ্জন করতে না পারে তখন তার অর্থ ও ক্ষমতা থাকা বাঞ্চনীয়!
নইলেই সোহাগের বিড়াল হইতে বাধ্য থাকিতে হবে।যদি তার মনোহারের যোগান যোগাতে পারলে তবে যদি তার কিছুটা স্বপ্ন পূরণ হয় সহজে!
নইলে যতই মেও মেও করে বলতে থাকুক আমাদেরও অধিকার আছে, তোমাদের মতো এ পৃথিবীর মৎস- মাংসে কোন লাভ নেই!
দরিদ্রের দন্ড আছে সারা বেলাই সে আসামী!
কার্পণ্যের দন্ড নেই এ জগতে! ছি! ধিক্ জানাই অমন জ্ঞানের জ্ঞানীকে!