প্রাণের স্পন্দন - সাইফউদ্দিন আহমেদ বাবর।
প্রাণের স্পন্দন - সাইফউদ্দিন আহমেদ বাবর।

ঠিক কি কারণে বিপাশার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলো-তা আজো পরিস্কার ভাবে বুঝতে

পারেনি মৃদুল।

বিষয়টা নিয়ে অনেক ভেবেছে।

ভেবে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

সিদ্ধান্তে আসা এতো সহজও না।আকৃষ্ট হবার মতো গুনাবলী বিপাশার অনেক বেশি!শুধু বেশিই না-একটার চেয়ে আরেকটা অত্যন্ত শক্তিশালী।

মৃদুল ভাবে,ভাবতেই থাকে।

ভাবতে ভাবতে সে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে উঠে।

 

ইন্টারনেটের স্পীডের সমস্যায় পরিবারের সবাই ত্যক্ত,বিরক্ত।

ওয়াই ফাইয়ের-রুটারটাকে একবার অফ,আরেকবার অন করেও কিছু কাজ হচ্ছে না।

সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছে বিপাশার ছোট বোন,আর ছোট ভাইটা।এরা ল্যাপ টপ,টেবলেটে এ্যাডিক্টেট।ওগুলো ছাড়া এরা এক দন্ডও থাকতে পারেনা।

বিপাশার সে সমস্যা নাই।

তার একটাই শুধু ফোন আছে।আই ফোন।আছে আনলিমিটেড মিনিটস,আনলিমিটেড টেক্সড আর বিশ গীগ ডাটা।এগুলোই একমাসের জন্য যথেস্ট বিপাশার।

সে সোফায় বসে বসে ভাই বোন দুটার অশান্তি লক্ষ্য করছে আর মিটি মিটি হাসছে।

বিপাশার হাসিটা ভারী মিষ্টি।

এই হাসি দেখেই যে কেউ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়।তার জন্য পাগল হয়ে যায়!

বিপাশা তা জানে।

জানে বলেই সে বেশি মানুষের সামনে,না হাসার চেষ্টা করে।সেটা সব সময় সম্ভবও হয়না।বে-খেয়ালে,মনের অজান্তে,অনেক সময় হাসি এসেই যায়।বিপত্তিটা ঘটে তখন।অনেক ছেলে,ছোকরা পাগল হয়ে যায়।বিপাশার ভোগান্তি বেড়ে যায়!

 

কম ভোগান্তিতে মৃদুলও কি আছে?

বিপাশার প্রতি আকৃষ্টের এক মাত্র কারণ শুধুই তার হাসি হতে পারে না।

হ্যাঁ,তার হাসিটা অন্যতম প্রধান কারণ,এটি কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।মৃদুলও অস্বীকার করছেনা।তবে অন্য কারণ গুলোও সে পরিস্কার ভাবে নির্ণয় করতে পারছেনা।

যখন তখন একান্তে বসে মৃদুল নিয়ে গবেষণা করে একটা সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করে।কিন্তু পারেনা।

শুধু মাত্র হাসির জন্য বিপাশার প্রতি সে আকৃষ্ট হয়নি-এটি শুধু তার মন না,বিচার,বুদ্ধিও বলে।

 

ছেলেদের একটা বয়সে,বিচার বুদ্ধি থাকে বলে মনে হয়না বিপাশার।

থাকলে,মেয়ে দেখলেই এরা এমন নির্বোধের মতো আচরণ করতোনা।মেয়েদের পেছনে ঘুর ঘুর করতোনা।

বিপাশা ভীষণ সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল করছে-ছেলেদের আচরণ।এরা সুন্দর অসুন্দরের বিবেচনা করেনা।অথবা সুন্দর অসুন্দরে এদের কিছু যায় আসেনা।শুধু একটা মেয়ে হলেই হলো।

এরা সেই মেয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য কী-না করে!

শুধু মাত্র প্রেমের সম্পর্ক গড়ার জন্য,দিনের পর দিন কতো উল্টা পাল্টা কান্ড করে!কেনো?প্রেম করতেই হবে কেনো?প্রেম না করলে কি হয়?কোন ফরজ কি অসম্পূর্ণ থেকে যায়?

বিপাশা ভেবে পায়না।

সে এসব নিয়ে ভাবেও একটু বেশি।তাকে ভাবতেই হয়।

ছোট বেলা থেকেই , সে ভীষণ সুন্দরী বলে-পরিচিত,অপরিচিত,আত্মীয়,অনাত্মীয়, কতো বয়সের ছেলেরা চেষ্টা করেছে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে।ছেলেদের ক্রমাগত ন্যাকামীতে অতিস্ট বিপাশা কোন ছেলের প্রতিই আকৃষ্ট হয়নি।বরং বিরক্তবোধই করেছে।

বিপাশা ছোট বেলা থেকেই জেনে এসেছে-সে সুন্দরী।নিখুঁত সুন্দরী।তার সুদৃস্টির জন্য,তার অনুরাগ পাওয়ার জন্য ছেলেরা লাইন দিয়ে থাকবেই তো!

 

নিখুঁত সুন্দরীর সুদৃস্টির চিন্তা কখনো করেনা মৃদুল।

সেআমি তোমারি প্রেম ভিখারিগানের ভক্ত না।বিপাশার প্রতি সে আকৃষ্ট হয়েছে-সেটি

ঠিক।তবে,সে বিপাশার দৃষ্টি আকর্ষণ অথবা তার সাথে অনুরাগের কোন সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেনি।করবেওনা।

আকৃষ্ট হবার কারণ গুলো শুধু সে নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।সেটি করতে পারলেই সোজা বিয়ে করে নিয়ে আসবে বিপাশাকে।

মৃদুল বিপাশাতে আকৃষ্ট শুধু বিপাশার হাসিতে না।অন্য কিছুও আছে।সেটি তার আগুনের মতো রূপও না।রূপ ছাড়াও আরো অন্য কিছু আছে।

সেই অন্য কিছু-তার ছটফটে স্বতঃস্ফুর্ত স্বভাব কি?

মৃদুল মনে মনে বলে-উহু,সেটিও আছে।তবে আরো অন্য কিছু আছে।

সেই অন্য কিছুটাই সে হন্য হয়ে খুঁজছে।

 

বাবা,মা কেনো যে এমন হন্য হয়ে পাত্র খুঁজছেন-তা বুঝতে পারছেনা বিপাশা।তার তো তেমন একটা বয়সও হয়নি।তাছাড়া অন্যদের মতো সে ছেলেদের সঙ্গে প্রেম প্রেম খেলাও খেলেনি।তাহলে?

বিপাশা জানে তার বিয়েটা মাত্র সময়ের ব্যাপার।তার মতো অসম্ভব রূপসীদের জন্য পাত্র লাইন ধরে থাকে।

প্রেম করার জন্য যেমন থাকে।

বিপাশা প্রায় সময় চিন্তা করে-একজন সুন্দরী মেয়েকে এতো এতো ছেলে পছন্দ করে কেমন করে?ভালো বাসে কেমন করে?

একজন মেয়েও কি এক সঙ্গে এতো এতো ছেলেকে পছন্দ করে?ভালো বাসে?

বিপাশা ঠিক জানেনা।তবে নিজের কথা জানে।নিজের বেলা সে রকম কিছু হয়নি।মাত্র দুটা ছেলে তাকে আকৃষ্ট করেছিলো।তার মাঝে একজন মোটামুটি,অন্যজন বেশি।

পর্যন্ত্যই।

বিপাশা নিজেকে নিজের আয়ত্তে রেখেছে।রাখতে পেরেছে।

 

আয়ত্তে নিজেকে রাখতে পারছে না মৃদুল।

কোন ভাবেই না।

বিপাশার প্রতি আকৃষ্ট হবার রহস্যটা তারাতারি সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

আকৃষ্ট হবার কারন গুলো সঠিক ভাবে নির্ণয় না করে বিয়ের প্রস্তাব না দেবার ব্রত নিয়েছে সে।

ভাবতে ভাবতে বেশ কিছু দিন গেলো।অবশেষে

মৃদুল বিপাশার প্রতি আকৃষ্ট হবার সঠিক কারণটা আবিস্কার করতে পেরেছে।

বিপাশা যখন কথা বলে তখন অদ্ভুত সুন্দর এক ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে নেড়ে বলে।সেই মাথা নাড়ানোর অদ্ভুত সুন্দর একটা ছন্দ আছে।ঐ ছন্দটাই মৃদুলের হৃদয়টাকে প্রচন্ড ভালো লাগায় দোলাতে থাকে।তার মনে হয় এটি তার বেঁচে থাকার,প্রাণের স্পন্দন।

স্পন্দন ছাড়া বেশিদিন সে বেঁচে থাকতে পারবেনা।

মৃদুল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলো।

 

যেদিন গেলো-সেদিনটা ছিলো বিপাশার বিয়ের দিন!


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান