ফররুখ-কাব্যে মানবতাবাদ - ওসমান মাহমুদ
ফররুখ-কাব্যে মানবতাবাদ - ওসমান মাহমুদ

মানবতাবাদ বিষয়টি ঠিক কখন সভ্য মানুষের উপলব্ধিতে স্থির হয় এবং তাদের ভাবায় এ বিষয়ে মোটাদাগে তেমন কোনো দিনক্ষণ পাওয়া যায় না। এটি গবেষণা, দর্শন ও অনুশীলনের এমন এক উপলব্ধির পর্যায় বা দৃষ্টিভঙ্গি যা মানবিক নীতি ও এ জাতীয় বিষয়াদি নিয়ে কাজ করে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রাক সক্রেটীয় দার্শনিক থেলিস এবং ক্সেনোফানিজ পুরাণ ও প্রথার সাহায্য ছাড়া শুধুমাত্র যুক্তির ভিত্তিতে জগৎকে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস নেন- তাদেরকে প্রথম গ্রীক মানবতাবাদী বলা হয়। এর অনেক পরে ১৮০৬ সালের দিকে 'হিউম্যানিমাস' নামক শব্দটি জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পঠিত হতো।

মানবতাবাদ শব্দটি কখনও 'ঐতিহাসিক আন্দোলন' কখনও 'শিক্ষাভিত্তিক কার্যপদ্ধতি' কখনও 'ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শ' ইত্যাদি বহু অভিধায় অভিহিত হতে হতে আজকের অবস্থায় বর্তমান। পর্যায়ক্রমে হাজার বছর ধরে বহু দার্শনিক, যুক্তিবিদ, ধর্মপ্রবর্তক, সমাজবিজ্ঞানী, বিপ্লবী ও সংস্কৃতি চর্চাকারীদের দ্বারা চর্চিত হয়ে মানবতাবাদের ধারণা এখন বিশ্বময়।

সভ্যতার ক্রম বিকাশের সাথে সাথে পৃথিবীর পায় সকল কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বদের চিন্তা-চেতনায় কম বেশি প্রভাব বিস্তার করতে থাকে এই মানবতাবাদের ধারণা। রাশিয়ান সাহিত্যিক তলস্তয়, ইউরোপের বোদলেয়ার, ভারতবর্ষের রবীন্দ্রনাথ, সিরাজী ইকবাল, নজরুল, ফররুখ ও সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের সৃষ্টিকর্মে মানবতাবাদী চিন্তা-চেতনার ছাপ স্পষ্ট। কালের করাত দার্শনিক কবি ও সমাজচিন্তকদের চিন্তার পালে গতিময়তা আনে, ভাবনার বিচিত্র দুয়ার খুলে দেয়। ফররুখের বিপ্লবচিন্তা, ঐতিহ্যবোধ, রেনেসাঁস ও মানবতাবাদী আকাঙ্ক্ষা কালের রাজপথ থেকে সুবিধাবাদের অন্ধগলিতে হারিয়ে যায়নি, বরং তা অনিবার্যভাবেই পুষ্প-পত্র, ডালপালা ও শেকড় ছড়িয়ে পোক্ত অবস্থান নির্মাণ করেছে সুদৃঢ়ভাবে।
কবি ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যের আকাশে এক অগ্রগন্য উজ্জল নক্ষত্র। রোমান্টিক ধারার এ কবি স্বজাতির ঐতিহ্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে উপমহাদেশের রেনেসাঁ আন্দোলনকে জাগিয়ে দেন কবিতার প্রবল প্রতাপে। পাঠক, সমালোচক, বিদগ্ধ মহল বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়তে থাকে তাঁর কবিতা-

"উচ্ছৃঙ্খল রাত্রির আজও মেটেনি কি সব দেনা
সকাল হয়েছে। তবু জাগলে না?
তবু তুমি জাগলে না?"
(সাত সাগগরের মাঝি)

যেন দরিয়ার দূর দিগন্ত হতে ভেসে আসে সে ডাক। অবসন্ন রাত্রিশেষে ঘুম ভাঙা কণ্ঠে প্রেমাকুল কবি ঠোঁটে-গলায় সমস্ত দরদ আর বুকের সবটুকু প্রেম ঢেলে দিয়ে আত্মভোলা স্বজাতিকে জাগিয়ে দিচ্ছেন- "তবু জাগলে না? তবু তুমি জাগলে না?" কী মধুঝরা ডাক! কী মোহনীয় সে আহ্বান! ভোরের পৃথিবী জুড়ে যেন একরাশ সমুদ্রছোঁয়া ঠাণ্ডা বাতাস, নির্মল সৌরভ। ইথারে ভেসে বেড়ায় দূরাগত সেই ডাক-"কখন সকালে ফুটেছে হাসনা হেনা! তবু তুমি জাগলে না?" অভূতপূর্ব এ ডাকে আড়মোড়া ভেঙে হেসে ওঠে প্রকৃতি-প্রাঙ্গন, ঐতিহ্যবিস্মৃত অবগুন্ঠিত এক জাতি। সাত সাগরের তীরে এ কোন নিঃসঙ্গ মাঝি ডেকে যায় অপার্থিব সুরে! রাত্রির অস্পষ্টতা ভেদ করে ছুটে আসা ভোরের দ্যুতিতে বিরাজমান কে এই মহানপুরুষ!

একজন কবির চিন্তাবোধ, ভাবনা-বিন্যাস কতোটা মানবিক হলে একটি কণ্ঠ সমগ্র জাতিসত্তার মর্মমূলে গিয়ে স্পর্শ করে? এমনি প্রভাব বিস্তারী মহৎ মানবিক কবিত্বশক্তি ও স্বপ্নবোধের নিস্কলুষ উৎসমুখ কবি ফররুখ আহমদ। নজরুল, সুকান্ত, সিরাজীর ঝাঁঝালো বক্তব্যের বিপরীতে ফররুখ আহমদ দরাজদৃঢ় অথচ কোমল কণ্ঠের বক্তা।

কোনো সৃজনশীল মানুষের কর্মের মূল্যায়ন, অবমূল্যায়ন, কিংবা বিশ্লেষণ করতে তার যাপন প্রণালী, সৃষ্টির সময়কাল ও চিন্তার ক্রমবিকাশের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। ফররুখের কাব্যচর্চা শুরু হয় চল্লিশ দশকের শেষের দিকে। এর কিছুকাল পরেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষজুড়ে দেখা দেয় চরম দুর্ভিক্ষ। বাংলা ১৩৫০ ইংরেজি ১৯৪৩ সালে ভারতবর্ষের তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসক উইনস্টন চার্চিল সেনা ও যুদ্ধে নিয়োজিত কর্মীদের জন্য বিপুল পরিমান খাদ্য মজুদ করার ফলে এ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়- যা ইতিহাসে পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে পরিচিত। এ মন্বন্তরে না খেতে পেয়ে বাংলাজুড়ে ৩০ লাখ মানুষ মারা যায়। কবি ফররুখ আহমদ দেখতে পেলেন কলকাতার পথে পথে বুভুক্ষ মানুষের সারি। কোথাও ধূঁকে-ধুঁকে মৃত্যুর প্রহর গুণছে, কোথাও পথের পাশে মুখ গুঁজে পড়ে আছে নিসাড় নিথর বনি আদমের লাশ। আবর্জনার পাশে পঁচা উচ্ছিষ্টের ভাগ পেতে মানুষ ও কুকুরের কাড়াকাড়ি নষ্ট সভ্যতাকে যেন অভিশাপ দিচ্ছে। একই সময়ে ধনিক শ্রেণী তথা ব্রিটিশ কর্মকর্তা এবং তাদের পা-চাটা ভারতীয় কর্মকর্তারা নিজ বাসায় ভূরিভোজের উল্লাসে মত্ত। বিষয়টি কবি ফররুখের মনে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। মানবতার এ চরম অপমানে কবি হুহু করে কেঁদে উঠলেন। মৃত্যুবিভীষিকাময় দুই বাংলা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোয় গ্রামের পর গ্রামজুড়ে পড়ে থাকে হাড্ডিসার মানুষের লাশ। মানুষ ও মানবতার এ অপমানের বিরুদ্ধে কবি লিখলেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'লাশ'।
"যেখানে প্রশস্ত পথ ঘুরে গেলো মোড়,
কালো পিচ-ঢালা পথে লাগে নাই ধুলির আঁচড়,
সেখানে পথের পাশে মুখ গুঁজে পড়ে আছে জমিনের পর
সন্ধ্যার জনতা জানি কোনোদিন রাখে না সে মৃতের খবর।"

কবির অনুসন্ধিৎসু মন গভীর চিন্তামগ্ন। এ অনাচার এ বৈষম্য এই অপমান তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। এ সংকট প্রকৃতিসৃষ্ট নয়, এ আকাল স্বাভাবিক নয়। সাম্রাজ্যবাদী সভ্যতার বিকৃত ক্ষুধা মেটাতেই এ কৃত্রিম সংকটকে প্রবল করে তুলেছে শাসকশ্রেনী। কবি সেই সভ্যতাকে জড় সভ্যতা, নষ্ট সভ্যতা ও মৃত সভ্যতা আখ্যা দিয় ক্রোধে ফেটে পড়েন এবং এর ধ্বংস কামনা করে অভিশম্পাত করেন-
"হে জড় সভ্যতা!
মৃত সভ্যতার দাস স্ফীতমেদ শোষক সমাজ!
মানুষের অভিশাপ নিয়ে যাও আজ!
তারপর আসিলে সময়
বিশ্বময়
তোমার শৃঙ্খলগত মাংশপিণ্ডে পদাঘাত হানি
নিয়ে যাবো জাহান্নাম দ্বার-প্রান্তে টানি;
আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যুদীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও,
ধ্বংস হও
তুমি ধ্বংস হও।"
(লাশ)

নিপীড়িত ক্ষুধিত আত্মবিস্মৃত মানবতাকে জাগিয়ে তোলার প্রাণান্ত প্রয়াসে কবি উচ্চারণ করেন তাঁর কালজয়ী কাব্যোক্তি- "রাত পোহাবার কত দেরী, পাঞ্জেরী? " এই রাত জুলুম, অত্যাচার, বঞ্চনা, হতাশা ও নিপীড়নের রাত। পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ অনিশ্চয়তার রাত। নৈতিকতা বিবর্জিত আত্মভোলা জাতির গাফলতের রাত। অর্ধ পৃথিবীকে যারা ন্যায় ও ইনসাফের সাথে আবাদ করেছে তারা আজ নিজেদের ভুলের কারণে কপর্দকহীন, দুঃশাসনের নগ্ন ছোবলে অতিষ্ট। আজকের পৃথিবীর অনাবাদী মাঠে এক দঙ্গল আগাছার মাঝে নেতৃত্বহীনতার যে গভীর ছায়া কবি লক্ষ্য করেছেন সে সময়টিকেই কবি 'রাত' বলে সম্বোধন করেছেন। জাতির সম্ভাবনাময়ী আলোকোজ্জল একটি শুভ্র সকালকে অজ্ঞানতা, কুপমণ্ডুকতা, বিভ্রান্তি, হীনমন্যতা ও দাসত্বের অসীম কুয়াশা গোমরাহীর কালো পর্দায় আচ্ছন্ন করে রেখেছে। রোমান্টিক ধারার কবিরা অতীত ঐতিহ্য-ইতিহাস, গর্বগাঁথার গভীর পর্যালোচনা পূর্বক স্বদেশ, স্বজাতি ও তার কাব্যপথ নির্ধারণ করেন। অতীতের বেদনাবোধ কবিকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়ায়, বিব্রত করে। তাই কবি উৎকন্ঠিত গলায় জানতে চান-
" এখনও তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?"

এখানে মেঘ হচ্ছে অন্ধকার আর সেতারা হেলাল আলো, সম্ভাবনা ও বিজয়ের প্রতীক। হাজার বছরের পরাজিত নিস্পেষিত মানবতা অচেনা দরিয়ার কালো দিগন্তে অবরুদ্ধ হয়ে সৎ, নিষ্ঠবান, কর্মবীর পাঞ্জেরীর নির্দেশনা পাওয়ার জন্য অপেক্ষমান। দারিদ্র্যপীড়িত অগণণ পথভ্রষ্ট ক্ষুধিত যাত্রীর মধ্য হতে কবি পাঞ্জেরীরুপে সহসা সচকিত হয়ে ওঠেন-

"ওকি বাতাসের হাহাকার,- ওকি রোণাজারি ক্ষুধিতের!
ওকি দরিয়ার গর্জন,- ওকি বেদনা মজলুমের!
ওকি ক্ষুধাতুর পাঁজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরী!
পাঞ্জেরী!
জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকুটি হেরি;
জাগো অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি হেরি,
দেখ, চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরী, কত দেরী!
(পাঞ্জেরী)

ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় ১৯৪৬ সালে ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। দাঙ্গার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় দেশভাগের মাত্র এক বছর পূৃর্বে ভারতের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থে সংঘটিত এ দাঙ্গায় অসংখ্য হিন্দু-মুসলমান হতাহতের ঘটনা ঘটে। রক্তক্ষয়ী এ দাঙ্গায় হাজার বছরের হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি শূন্যের কোটায় নেমে যায়। আগ্রাসী আক্রমনাত্মক হিন্দুদের সহিংসতায় বেঘোরে প্রাণ হারায় হাজার হাজার নিরীহ নিরপরাধ মুসলমান। মুসলমানদের জীবন রক্ষার প্রতিরোধের মুখে অগনিত হিন্দুও মারা যায়। জ্বালাও পোড়াও রবে চারদিক যেন মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছে। মানবতার এমন ঘোর সঙ্কটের দিনে কবি ফররুখ আহমদ অন্য অনেক সুবিধা হাসিলকারীর মতো ঘরে বসে থাকেননি। কলকাতার আকাশবানী বেতার থেকে তিনি হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক অটুট রাখার পক্ষে কবিতা পড়েছেন। তিনি এ দাঙ্গাকে "নিজের বুকে নিজেই ছুরি হানা" "নিজের ঘর নিজে চুরি" করার শামিল মনে করে এ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে আহ্বান জানান। মানবতাবিধ্ববংসী এ দাঙ্গা যে হিন্দু-মুসলমান কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না কবি সে লক্ষ্যে আকাশবানীতে পড়েছেন দাঙ্গাবিরোধী কবিতা। হিন্দু-মুসলমানের এ চরম সঙ্কটাপন্ন সময়ে কবির কলকাতার বাসা আলোকপুরী ছিল ধর্ম নির্বিশেষে নিরাপদ অতিথিশালা ও মিনি সেবাকেন্দ্র। কবি ফররুখ নেমে গেলেন আহতদের শুশ্রূষায়। আবার তিনি স্বপ্ন দেখেন ঐক্যের আবার তিনি কবিতা বোনেন সম্প্রীতির-

"বন্ধু আমার ক্ষমা করো অপরাধ
এসো একসাথে মুছে ফেলি এই ভুল
তোমার স্বপ্নে জাগুক আবার আমার স্বপ্নসাধ
চলো একসাথে দুইজনে মিলে তুলি এ পাপের মূল।"
(বন্ধু)

কবির কাঙ্খিত এ সম্প্রীতি শতভাগ মানবিক। ভুল সংশোধন করে পুনরায় মানবিক সম্প্রীতি স্থাপনের এ আহ্বানে ফররুখের আন্তরিক ঔদার্যের পরিচয় মেলে। তিনি তাঁর 'রাত্রির অগাধ বনে' কবিতায় লিখেছেন- "জাগো জনতার আত্মা, ওঠো কথা কও" কিংবা 'লাশ' কবিতায় "কোন্ প্রেত অট্টহাসি হাসে? মানুষের আর্তনাদ জেগে ওঠে আকাশে আকাশে"। এই যে 'জনতা' অথবা 'মানুষ' এরা কারা? এরাই তো বিশ্বমানব। তিনি এই বিশ্বমানবতারই উৎকর্ষ সাধনের উদগাতা। সারা পৃথিবীর মানুষের সার্বিক কল্যাণচিন্তায় তাঁর কবিতা পৌঁছে যায় মানবতা বিকাশের উত্তুঙ্গ চূড়ায়।

গোড়াতে রেডিক্যাল হিউম্যানিস্ট প্রফেসর এম এন রায়ের জড়বাদী ও পুঁজিবাদী সমাজতন্ত্রের চটকদার সাম্যবাদে ঘুরপাক খেলেও পরিণত বয়সে কবি খুঁজে পান তাঁর আরাধ্য ঠিকানা। মুক্তির পথ। কবির স্বপ্ন-কল্পনা, মানবতার কাঙ্খিত মুক্তির সব পথ ইসলাম নামক এ মোহনায় এসে মিলিত হয়েছে এবং উত্তরোত্তর বিকশিত ও প্রস্ফুটিত হয়ে পূর্ণাঙ্গতা পেয়েছে। কবি নজরুলের পরে ফররুখই ইসলামের সৌন্দর্যকে সুনিপূণভাবে কবিতায় এনে কবিতাকে আরও দ্যুতিময়, অনবদ্য এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছেন। তাঁর কবিতায় শুধুমাত্র মুসলমানদের স্বাধীনতা, ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের কথাই বলা হয়নি, বিশ্বমানবতার মুক্তির কথাও বিবৃত হয়েছে। দাঙ্গা চলাকালীন অথবা দাঙ্গা পরবর্তী সময়ে লেখা ফররুখের কবিতাগুলো সে সাক্ষ্যই ধারণ করে আছে আপন বৈশিষ্ট্যে। "সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই" - মানবতার এ বীজ-মন্ত্রটি ইসলামী সাম্যবাদের সুকোমল ছোঁয়া পেয়ে ফররুখের কবিতায় আরও তীর্যক ও মার্জিত আবেদন নিয়ে ফুটে উঠেছে।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান