পথ চেয়ে আছি
একটা কৃষ্ণপক্ষের ক্ষয়ে যাওয়া
মন খারাপ করা চাঁদ
হঠাৎ আমার পথ আগলে বলেছিলো
আমি তোমার সঙ্গে বাড়ি যাবো
নেবে?
আমি বলেছিলাম
ধুর! তুমি কেন সঙ্গে যাবে?
আমি বরং সাথে নিতে পারি চন্দ্রমাকে
নয়তো ও পথ একাই দেবো পাড়ি।
তবু অভিমান ঝেড়ে আধখানা চাঁদ
আমার সাথে বাড়ি যাবে বলে
পিছু হাঁটছিল
সব গাছেদের ছেড়ে
তেতলা বাড়িটা ছেড়ে
স্কুল মাঠ নদী ধানক্ষেত
সব পিছনে ফেলে
ছুটতে ছুটতে অন্তঃপ্রাণ প্রায়।
অনেক লম্বা পথ ছিল আমার
সাতশত নদী তেরশত ক্রোশ
তাই ফিরে দেখার অবসর হয়নি আর।
পথিক কেবল দুজন
আধখাওয়া ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ
আর আমি।
আমার বাড়ি ফেরার বড্ড তাড়া।
যে ছিল আমার আঁধার পথের আলো
ছুটে ছুটে ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর!
যেই আলো নিবু নিবু
আমি ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম
নাম কি তোমার?
বললে দুঃখ!
অমন নাম শুনে আমি হেসেই খুন।
হঠাৎ তুমি আঁধারে জীর্ণতা লুকাতে লুকাতে
ত্রস্ত হয়ে বললে
আবার এসো এই পথে
আমি চন্দ্রমা হয়ে ফিরে আসবো তোমার জন্যে।
সেই থেকে আমি পথ চেয়ে আছি অজানার পথে।
...................................................
রাজেন্দ্রাণী
অতন্দ্রিলা অবনি নিরা সুরঞ্জনা
কিংবা বনলতা নয়
রাজেন্দ্রাণী!
সেদিন আমাকে বলেছিলে
তুমি আমার রাজেন্দ্রাণী।
কখনও আবার
নীল পরী বলেও ডাকতে।
বলতে
পরী তো থাকে আকাশে
তাই তাকে কাছে পাওয়া যায়না।
আর রাজেন্দ্রাণী
সে তো কোন রাজার ঘরে রবে!
সাহস করে বলনি কেন
তুমি আমার রাজেন্দ্রাণী হবে?
...............................................
নীল আল্পনা
ভেবেছিলাম আমার মনোবল অনেক
লোকের বাঁকা চক্ষু সইবার ক্ষমতা আমার আছে
কিন্তু কখনো কখনো হার মেনে যাই।
মনে হয়
কালো চোখের কালো দৃষ্টি গুলো
আমাকে গিলে গিলে খাচ্ছে
যেন সভ্যতার এই ক্ষণেও
আমি কারো কালো কাপড়ে ঢাকা ঐশ্বর্য !
আমি কেন খোলা চুলে পথ হাঁটবো
কেন দুচোখে কাঁজল আঁকবো
কপালে টিপ পড়া ছেড়ে দিয়েছি।
তোমরা যারা সমাজপতি
তাদের বলতে শুনি
কপালে যারা টিপ পড়ে তাড়া নষ্টা ভ্রষ্টা!
তোমাদের ভয়ে
আমার কপালে শোভিত হয়না নীল টিপ।
তোমাদের ভয়ে হাওয়ারা থেমে যায়
ওড়েনা আমার শাড়ির আঁচল।
তোমাদের ভয়ে আমার হাসি থেমে যায়।
পাছে বল
অমন খিলখিল করে যারা হাসে
তারা কখনো ভালো হতে পারেনা।
আমি তোমাদের ভাষ্যে ভালো হতে চাইনা।
তোমাদের কথায় গোমরা মুখে যখন আয়না দেখি
তখন লজ্জা হয় আমার!
দংশিত হই বিবেকের কাছে।
মনে হয় আমিও তোমাদেরই প্রতিনিধিত্ব করছি!
তাই আর নয়
আমি নষ্ট সমাজের কালো কাপড়ে ঢাকা সম্পত্তি নই যে
তোমারা আমার গলা টিপে হাসি থামিয়ে দেবে।
আমি হাসবো
আমি বাতাসে মেলে দেবো খোলা চুল
কপালে আঁকবো নীল আল্পনা।
....................................................
জেগে ওঠো মনীশ
অ-মনীশ
তোমরা কেন অ-ভালোবাসায় মগ্ন?
ঘোর অমাবস্যায় দেখো সমুদ্র!
অ-সময়ে সমুদ্র দেখা ভালো নয়
সে তোমার দেখারও কথা নয়।
মনীশ
তোমার জন্য রুপালী চাঁদ অঙ্গে মেখে
সমুদ্র ঢেউ খেলা করছে।
হ্যাঁ
সে তোমার।
তাই তোমাকেই হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
গভীর মমতায় স্নিগ্ধ জল ছুঁয়ে দেখ
উত্তপ্ত তোমাকে শীতল করে দেবে।
নোনা বুকে তোমাকে জড়িয়ে
ভালোবাসার ভেলায় ভাসিয়ে নেবে।
সে তোমার।
চেয়ে দেখ ভোরের আকাশে
সমুদ্রের ডানপ্রান্তে অরুণকে দেখা যাচ্ছে।
অরুণ আভায় লাবণ্য রূপের পূর্ণতা পেয়েছে।
মনীশ
সময় হয়েছে এখনি তোমাকে ডাকার।
জেগে ওঠো মনীশ-
অ-মনীশ, অ-অরুণ, অ-সিদ্ধার্থ,
অ-লাবণ্যদের অ-শরীর থেকে।
.......................................................
ইচ্ছে করে নাচি
চঞ্চল চপল ঝরণা জল
রিনরিন বাজে পায়ের মল
ইচ্ছে করে নাচি!!
চাওপিয়া তুমি যাও বয়ে
না হয় সঙ্গে না নিয়ে
তবু ইচ্ছে করে নাচি!!
হিরক মানিক সব ফেলে
যাচ্ছ চলে তালে তালে
আমার ইচ্ছে করে নাচি!!
এইতো সেদিন ভিজিয়ে দিলে
তোমার বুকের নোনা জলে
খুব ইচ্ছে করে নাচি!!
আজলা ভরা রূপোর পানি
রূপের দেশে মিষ্টি জানি
বড় ইচ্ছে করে নাচি!!
চপল কন্যা নেচে নেচে
যাচ্ছ তুমি কোন দেশে
আমায় যদি নাও সাথে
দেবো পায়ের মল।
আরো যদি চাও তুমি
নেবে চুড়ির রিনিরিনি?
তাও যদি মন না ভরে
দেবো সোনালি আঁচল।
হাতের কাঁকন দেবো খুলে
সাতনরি হার চাও যদি
ঝুমকো জোড়াও নাও তবু
সঙ্গে যদি নিলে...
আমার ইচ্ছেরা সব
পাখা মেলে
নাচছে তব ঝরণা জলে
আমায় তুমি সঙ্গে নিলে
তাই মন ভরে আজ নাচি।
খু উ ব ইচ্ছে করে নাচি!!