চিরবিভ্রান্তির পথে
মুক্তি কথাটি তো বিপদজনক
খুব গোপনে নির্জনে ধুন তোলে
বেওয়ারিশ অভিমানে
আহা নার্সিসাস পুড়ে মরো শুধু
নিজের আগুনে
আলোর স্ফুলিঙ্গে ঝলক উঠলে
শিকড় ছড়ানো দীর্ঘ প্রতিসরণের পর
অচেনা রেখার টানে হেঁটে যাও
চিরবিভ্রান্তির পথে
হে পথিক
লুপ্ত হওয়া বিষাদে
স্মৃতিভ্রষ্ট একাকী কালপুরুষ হয়ে
আর কতদিন বলো ওভামের বুদবুদে ভেসে রবে?
ফুটবল খেলা
বিষণ্ণ আত্মাকে সঙ্গে নিয়ে
এই অসুস্থ শহরে আমি একা একা ঘুরে বেড়াই
এখানে প্রতিটি দুপুর যেন এক একটি
গনগনে হাহাকার
রক্তাক্ত সূর্যটা মানচিত্রে সক্রোধে আঁধার ঢেলে দিচ্ছে
স্নায়ুর শিকড়ে জমছে বিশ্বাস!
উদগ্রীব শকুনেরা খুবলে খাচ্ছে
মানুষের হৃদপিণ্ড
ঘৃণার আড়ালে হারিয়েছে মানুষের অধিকার
অথচ এখানে একদিন গভীর মগ্নতা নিয়ে এসেছিল স্বাধীনতা
হায়! শেষবার আমি আদিম হৃদয় নিয়ে
ভ্রমণের টানে হেঁটে যেতেই আমাকে ওরা মাংসপিণ্ড বানিয়ে খেলার ছলে ফুটবল ফুটবল খেলে।
প্যারিতে পাখির প্রেম
দিগন্তে দিনের আলো ফুটতেই একজোড়া পাখি
মাথার উপর এলো ভেসে।গুলি ছুঁড়তেই দুটি
পাখির একটি পায়ের কাছেই পড়েছিল এসে
পাখির বুকটা ছিল চকচকে রুপোর মতোই
শাদা। অপর পাখিটি মাথার উপর চক্রাকারে
ঘুরে ঘুরে উড়তে লাগলো। নিদারুণ চিৎকারে
চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে গেলো। মেয়ে
পাখিটির মৃত্যু হয়েছে তো সেই কোন ভোরে অথচ
পুরুষ পাখিটি উড়ে পালালো না। যে ক্ষুদ্র পাখিটি
মরেনি, এ কান্না তার। কী এক হতাশ আবেদন!
সেই হতভাগ্য পাখিটির বেদনার ভৎসনা
কোন এক মহাশূন্যে ব্যর্থতায় বিলীন হয়েছে।
বন্দুকের ভয়ে মাঝেমাঝে সে উড়ে পালায় কিন্তু
সঙ্গিনীকে দেখবার লোভ সংবরণ করতে না
পেরে আবার আসে সে। বিপদে ভ্রূক্ষেপ নেই তার
কিছুতেই। কেউ তো শোনেনি কোনদিন এর আগে
বা পরে কখনো এমন করুণ কাতরোক্তি কারো।
প্রেমের মাদকতায় উন্মাদ হয়ে সে সঙ্গিনীর
কাছে আসে। ভালোবাসা তাকে টেনে আনে কাছে ফলে
আরেকটি গুলি করা হলো। যেন সুতো ছিড়ে গিয়ে
নলখাগড়ায় কিছু একটা পড়ার শব্দ হলো
সে সন্ধ্যায় প্যারিতে কেন যে এতো ঠাণ্ডা নেমে এলো......
মলোটভ ককটেল
চোখদুটো অল্প খোলা ছিল
হাতের শিরাটা ছিল কাটা,
তখনো লোহার বালতিতে ঠাণ্ডা লাল জল
ডোবানো হাতটা
হয়তোবা বারোটা বেজেছে আজ
হারবারটের বদ্ধ ঘরে তবু মাছিটি আটকে থাক
মাছিটি রক্তের গন্ধ পায় অন্ধ হাঙরের মতো
শুকনো চটচটে রক্ত ব্লেডের গায়েই মাখা হতো
শহরে ফেরার রাস্তাটায় গাছগুলো পরিচিত
বারান্দার থাম, লাল, নীল, শাদা বিলবোর্ডগুলোও
চায়ের দোকানে, ডিউটির পর বাড়ি ফিরে আসা
আয়া বুয়া, নার্স অথবা বেশ্যারা
আর মিকিমাউসের ভেংচি কাটা ছবি
অসহ্য শহর, হয়তো পাতাল সবই !
কোথা থেকে আসে এতো জল?
কেউ কিছু জানতেও পারে না তবু কত ছল
সবাইকে আলাদা আলাদা করে কথা বলার ছিল যে হারবারটের
কিন্তু দেখা গেলো তার মৃত্যুতে চমকালো এক
মনোলভ ককটেলের ভয়াবহ বিস্ফোরক !
নেশা কেটে যায়
একটি শুয়ে থাকা শান্তদুপুর শূন্য বুদ্বুদ দ্রাক্ষারসে নেশা করে
আর মিষ্টি হেসে আসে নেশাড়ু আমার পাশে
বেহালার সুরে ভাসাবে বলেই
এমনই এক অশরীরী বালুকাবেলায়
বহুদিন আগে ঘুমের মতোই ছায়া ফেলেছিল নিস্তরঙ্গ আলোর ভেলাটি
যে মন্দিরা হাতে প্রগাঢ়মূর্তির বেশে জলস্রোতে ভেসে আসে সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতি
দেবী দেবী বলে দুপুরের সূর্য অস্ত যায় দেবীর পায়ের নীচে !
দেবীও তো সেদিন বলেছিল এ অভয়ারণ্যে সঙ্গীতের ঝঙ্কার ওঠাবে
হায় অন্ধ-বধির নেশাড়ু মন আমার
কী বিনাশী সুরের ধুনে চিরঘোর তামসিকতায় আচ্ছন্ন এ দুচোখের নেশা কেটে যায় !