ফারুক সুমনের কবিতাগুচ্ছ
জলপ্রেম
♦
জলের শরীরে শয্যা পেতে
লিখে চলি জলপদাবলি
জলময়ী ফিরে এসো তবে
সিক্ত হোক মরুবুক বালি।
আমাদের কথা হোক
জলজ সুরে
আমাদের দেখা হোক
প্রণয় পুকুরে।
জলের তলদেশে
রতিশেষ পরিণতি নিয়ে
শয্যারচনা করে
ঘুমিয়েছে বারুণী বরুণ।
জলের নাভিমূলে
ভীষণ আহ্লাদে
ফুটেছে জলজ কুসুম।
ভাঙা কণ্ঠস্বর
♦
চোখের কোণে রক্ত জমে
বন্ধু আমার কই?
লাঙলচষা জমির মতো
উপড়ে দিলে বুকের জমিন
কেমনে পারো সই?
তুমি এখন গাঁয়ে থাকো
জলটলমল শেওলা জমা পুকুর
সেই পুকুরের ধারে তোমার ঘর
তোমার শোকে কানতে কানতে
আমার ভাঙা কণ্ঠস্বর।
কামের গতর
♦
অহরহ আমারে ডাকিয়া কহ
ঝড়ের রাতে বাড়ে রতিবিরহ
না দেখিয়া যায় না থাকন।
কতদিন কুয়াশায় কামচালা ঘর
ভিজে ভিজে বেদিশা কামের গতর।
হাওয়াহীন পাতাদের বধির ভাষা
পাথরিয়া সুরে কাঁদে হরিণ হতাশা
আর কত সওয়া যায়?
ডাকাতিয়ার জল সাক্ষী
আমার আর কাটে না প্রহর
তোর শোকে পুড়ে গেলো
অভাগীর কামের গতর।
রক্তদাগ
♦
(প্রতি: কবি আবু হাসান শাহরিয়ার)
সঙ্গ পেলে ভঙ্গ হয় নিমগ্ন ধ্যান
বহুদিন আগে রাগ-অনুরাগে
বৃন্তচ্যুত ফলের মোহে
নিভে গেছে দীপ, মুছে গেছে দাগ
তারপর তাপিত প্রান্তরে হেঁটে হেঁটে
মানুষ হয়ে যায় করাতের দাঁত।
কবরের প্রতিবেশী
♦
মসজিদের কাছেই আমার আবাস
মাঝে মাঝে মাঝরাতে অথবা ভোরে,
অথবা করুণ সুরে ভরদুপুরে
একটি বিষাদবাক্য উড়ন্ত ছুরি হয়ে
হানা দেয় অন্তঃপুরে।
এসেছে মৃত্যুদূত নিয়ে গেছে কারে!
মুয়াজ্জিন মিহি সুরে ডাক দিয়ে যায়,
হাওয়ায় ভেসে ভেসে ইথারে ইথারে
আসে সংবাদ, কখনো সদ্যোজাত শিশু-
কখনোবা অশীতিপর বৃদ্ধের নামে
বাক্যটি এসে বিঁধে যায় মর্মমূলে-
'একটি শোক সংবাদ...
ইন্তেকাল করিয়াছেন।'
চিরবিদায়ের এই ডাক শুনে শুনে
ক্রমশ আমিও ঘুমিয়ে যাই
কবরের প্রতিবেশী হয়ে।