ফেরদৌস সালাম । কয়েকটি কবিতা
							
							
								 
							 
							
							
							
								
							
							
								
						
					 
							বেঁচে যায় মৃত্যুযাত্রী
যতোবার ভোর হয় ততোবার দাঁড়াও সম্মুখে
চারপাশে বৃক্ষরাজি নিয়ে নেয় চোখের দখল
প্রজাপতি শুয়োপোকা চোখ মেলে কুসুমের দল
স্বপ্নবাজ মেঘকূল ছুঁয়ে যায় মৃত্তিকার মুখ
কখনো সে বৃষ্টিজল অথবা সে উড়াল বালিকা 
চাষীর ভাতের প্লেটে কখনো সে দ্রোহের তরিকা 
তাচ্ছিল্য মানো না তুমি পাতে চাও সুখাদ্যের সুখ।
বাদ দাও অলসতা তুচ্ছ করো গ্রীস্মের উত্তাপ
খুঁজে নাও ক্লিওপেট্রা তারো চেয়ে বনলতা সেন
গৃহ ছোট,বিশ্ব নয়- খুঁজে নাও সমুদ্র সফেন
মুঠো ভর্তি নূড়ি থেকে পেতে পারো বসন্তের তাপ!
বৃষ্টি পেলে ধুলোতেই জন্ম নেয় অবারিত ঘাস
বেঁচে যায় মৃত্যুযাত্রী যদি থাকে পথ্যের আশ্বাস।
(ছবিতে শাহরিয়ার ইফতেখার ফেরদৌস)
কাশবনে কাব্যলক্ষ্মী  // ফেরদৌস সালাম 
তীর্থভূমে নেমে এসো রূপবতী মেঘের বালিকা 
সিঁথিতে উম্মাদ জবা কামনার দীপ্র বিসর্জন 
খাম ভর্তি নীল প্রেম খুনসুটি আনন্দ নির্জন
কামার্ত দেবীর চোখে আবেগের প্রচন্ড মৌতাত 
দূরে রেখে অশ্লীলতা পেতে দিও ঘাসের চাদর
আলিঙ্গন  মুগ্ধতায়  তৃপ্ত  হোক  বিশ্ব  চরাচর 
সৌন্দর্যের সিঁড়ি বেয়ে সুখময় হোক শুভরাত!
রোদের প্লাবন শেষে চুপি চুপি আসুক শিশির 
অগোছালো চুল থেকে ঝরুক সে গাঢ় অন্ধকার 
নিমগ্ন উচ্ছ্বাস মেখে খুলে দাও হৃদয়ের দ্বার
হালাল মদের ঘ্রাণে ভরে যাক হাফিজের নীড়!
কাশবনে কাব্যলক্ষ্মী ধরা দাও থেকো না অধরা
হাত ধরো বৃষ্টিকন্যা কেটে যাক আশ্বিনের খরা।
নায়াগ্রার নীলাকাশ
বললাম কোথায় থাকেন-। হাসলো সে, আমি নই 
এদেশের কেউ- এসেছি সুদূর ইন্ডিয়ার বাঙ্গালুর থেকে
চেনেন কি ? অজান্তেই বললাম, ও মাই গড! আমি বাংলাদেশ - ঢাকাতেই থাকি। দশ দিন হলো 
আমি বাফেলোতে বোনের বাসায়- এই আসছি যাচ্ছি
করে গত পাঁচ বছরে সাতের অধিক। কলেজে পড়াই
ছুটিগুলো এখানে কাটাই। 
তার মানে আপনিও আসবেন চলে।অনেকটা তাই। 
কি সুন্দর দেশ। সাজানো গোছানো । বলতে কি 
আমরা এখনো পিছিয়ে আছি শতেক বছর। বললাম 
আমি একমত। তবুওতো জন্মভূমি মানেই রক্তের শেকড় । বলতে বলতে উথলে উঠলো দেশপ্রেম 
মনে হলো নিজ দেশে যতোই বা হই চাল-চুলোহীন 
তবুও সে আমার আনন্দ উচ্ছ্বাসের একখন্ড ভূমি
সমুজ্জ্বল পতাকার উদাত্ত গৌরব 
ততোক্ষণে বিবেকের করুণ বিলাপ! নিজ দেশে তুমি
নও স্বাধীন এখন। ওটা এখন দলকানাদের ভূমি !
চেতনার কথা বলে দেখছো না ওরা কতো ক্ষমতা দেখায়- পশুত্বের মলমূত্রে সয়লাব আকাশ বাতাস
প্রজন্মের সন্তানেরা দূরদেশে খুঁজছে ঠিকানা। 
এই নায়াগ্রায় দেখো আকাশ কি দারুণ সুনীল
মানবিক আইন কানুন। নেই ক্ষমতার বাহাদুরি 
নেই স্বার্থপর ভাগ ভাটোয়ারা- বেগমদের উত্তাপ।
ভাবনার মধ্যেই সুজাতা নামের মেয়েটি হাসির ফোয়ারা তুলে চলে গেলো প্রপাতের দিকে
আমি নিরুত্তাপ খুব একা স্মরণ করছি স্বদেশের মানচিত্রে দুর্নীতির দূষিত ছোবল 
মুখে উন্নয়ন উন্নয়ন বললেও ক্রমাগত হেঁটে যাচ্ছি পেছনের দিকে....
ফিরে এসো পূর্ণপ্রাণ নদী
অচেনা এখন সবকটি নদী। চাষকাব্যে আমি চাই অনিরুদ্ধ স্রোতের তুফান- একাকার ভেঙে দেবে দুপাশের রমরমা সবুজ মৃত্তিকা - উচ্ছ্বাস আনন্দে খুঁজে  নেবে সমুদ্রের বুক - সেই সব নদী আজ স্রোতহীন 
ঘুমন্ত ময়াল। হায় নদী কেনো এই পথ ভুলে বালিয়াড়ি
বিষণ্ণ বিলাপ ! 
কৃষাণীও কাদা মেখে উঠোন সাজায়। টানটান সিনা উঁচু হালের বলদ চায় তীক্ষ্মকাম লাঙলের ফলা -   চায় চাষযোগ্য ভূমি- পলিস্নাত যে ভূমিতে দোল খাবে ধান গম কাউনের শীষ। কুহু কুহু গানের পাখিরা এনে দেবে
কুলা ভরা সমুজ্জ্বল মুখ !
তীব্রতর স্রোতে ভেঙে ফেলো উজানের বাধ
ফিরে এসো পূর্ণপ্রাণ ধলেশ্বরী সোমেশ্বরী যমুনা ঝিনাই 
ফিরে এসো স্রোতস্মিনী মেঘনা তিতাস 
পলিমুগ্ধ মৃত্তিকায় ভাটিয়ালি সুরে সুরে চাষী পাক 
ফসলের জারি সারি গান 
প্রাণে প্রাণে দোলা দিক আব্বাসের অমর সঙ্গীত...
জাতিসঙ্ঘ নেই
বিশ্বাস করি না তুমি আছো। যদি থাকো ইচ্ছে করে রয়েলবেঙ্গলের ক্ষিপ্রতায় খেয়ে ফেলি তোমার মগজ
চিবিয়ে চিবিয়ে খাই শত শত পতাকার নরোম কলিজা।
আমি কবি - আমি চাই মানবিক বিশ্বায়ন- যারা রক্তপায়ী- নিপাতের ধারাপাতে আমি চাই 
আমার শব্দেরা কোনো সীমানা মানে না। মুহূর্তেই কাঁটাতার কেটে ফেলে অসীম সাহসে। থাপ্পড়ের অভিধায় ভেঙে ফেলে হোয়াইট হাউজের সন্ত্রাসী ফটক
বিশ্বব্যাপী জ্বলে ওঠে সুকান্তের দেশলাই 
তীব্র থেকে তীব্র হয় হামাসের গেরিলা সফর
কেঁপে ওঠে তেলআবিব দানববাহিনী। 
ফিলিস্তিনী নারী ও শিশুর আহাজারি শুনে
আমার কবিতা জন্ম দেবে অনিরুদ্ধ ঘাতক বারুদ
জ্বলে পুড়ে ছাই হবে পৃথিবীর ভয়াল শ্বাপদ
বাসযোগ্য বিশ্বায়নে ক খ গ ঘ লিখে দেবে 
জাতিসংঘের নতুন সনদ।
