কবি : হাফিজুর রহমান
অসম্পূর্ণ ছবিটি
ছবিটি তোমার খুব প্রিয় ছিল, জানি
জলরঙে আঁকা ‘নদীতীরে মেঘদল’
চিত্রকর নই কোন, একান্তে কেবল
তুলির আঁচড়ে আঁকি দ্যাখা-স্বপ্নখানি।
বলেছিলে, দারুণ এঁকেছ মেঘগুলি
তোমার স্বগ্নের রঙ আমাকে কি দেবে ?
বুকের ভিতরে টের পাই কথা, নেবে !
মুহূর্তেই কতো স্বপ্ন করে কোলাকুলি !
মনে হলো, স্বপ্ন-জুড়ে তোমারি আবাস
তুমিহীন সেই ছবি কখনো মানায় !
না হয় নতুন রঙে আঁকি পুনরায়—
নববধূ সর্বাঙ্গে পরুক বেশবাস !
সেই থেকে ছবিটিকে এঁকে আর মুছে
রঙ্গিন হতাশা-জলে কবিও ডুবেছে !
বসন্ত-বাতাসে
আকাশে-বাতাসে বহে বসন্ত-বাতাস
হৃদয়ে পেখম তোলে বিমুগ্ধ ময়ূর
মেঘের বদলে খোঁজে সুখ-সমুদ্দুর
বসন্ত বাতাস ওড়ে বসন্ত-বাতাস !
প্রভাতের আলো বলে, দ্যাখো সর্বজন
আকাশের নীলে ফোটে আনন্দ-কুসুম
বৃক্ষরাজি নদীতীর রজনী নির্ঘুম,
উতল হাওয়াজুড়ে কাঁপে মুগ্ধক্ষণ !
দিন যত আলোময়, রাত্রি ততোধিক
দৃষ্টি যার স্বচ্ছজল, বোধের অতল—
অন্ধজন তদপেক্ষা বোঝে সমুজ্জ্বল,
যেজন পায়না টের ধিক তারে ধিক।
বসন্ত-বাতাস এলে বসন্ত বাতাস
শুভ্র-জ্যোৎস্নালোক বহে বারোমাস !
বসন্তের মেঘ
মেঘের গভীরে থাকে মুগ্ধ জলকণা
বিন্দু বিন্দু স্বচ্ছতার অমৃত উচ্ছাস,
দ্যাখে যতো পৃথিবীর চাতক-উদাস
খুঁজে ফেরে একফোঁটা অমৃতের দানা।
জগৎ-আনন্দধামে একখন্ড মেঘ
আকাশের বুকে ফোটা মৌন মুখভার
মাটির মমতা-বুকে ঢালে উপহার
সুকোমল বৃষ্টিজলে ঝরায় আবেগ।
সে-ই বুঝি ভিন্ন এক রূপ কবিতার
শরীরে মননে খুব ঝকঝকে আলো,
ভালোবাসি মেঘভার, বাসি তাই ভালো
অপরূপা পৃথিবীর সৃজনী আন্ধার।
জলে যদি জ্বলে আলো,দাও জল দাও
অমৃত-কুম্বের জলে জগৎ ভাসাও।
ফুল-সমাচার
ফুল-বাগিচায় কাটলো বিকেল-টুকু
হাস্যমুখর ফুলকুঁড়িরা জেগে দ্যাখে,
যাচ্ছি ছুঁয়ে ফুলকলিদের শাখে-শাখে
মুগ্ধ-চোখে জন্মক্ষণের মুহূর্তটুকু !
ডেকে বলি, হে বালিকা ওঠো ফুটে ! ফোটো !
পরিপার্শ্বে সবাই তোমার গুণগ্রাহী
ঘ্রাণ-পারিজাত হানো বুকে মর্মগ্রাহী
রেখো মনে, জীবনখানি বড়ই ছোটো !
হাওয়ায় হাওয়ায় ছড়াও সুবাস
প্রকৃতিও হৃৎকমলে নেচে উঠুক,
ফুটুক তবে প্রেম-পারিজাত, ফুটুক—
প্রাণে-মনে দূর হোক সব দীর্ঘশ্বাস !
প্রকৃতি-মানুষ কভু অভিন্ন তো নয়
যুগল-প্রেমের রঙ্গে জীবনের জয় !
স্বপ্নময় রাতে
রাতের গভীরে থাকে প্রভাতের আলো
বিনিদ্র শরীরে তার হাসে সূর্যমুখী
ছুঁয়ে থাকে,দ্যাখে কারা অনন্ত-অসুখী,
আলোর পিপাসা কাকে খুব চমকালো!
জ্যোৎস্না-ধারার মতন স্বচ্ছ পরীদল
আচম্বিতে অবাক আঁধারে এসে নামে,
তারাছুট-খেলা চলে রাত্রি-ধরাধামে--
দুঃখের জানালাগুলো করে ঝলমল।
অশ্রুত অবাক খুব প্রার্থনার সুরে
সারারাত নৃত্যযজ্ঞে নামে অহেতুক,
নর্মদার ঢেউজলে ছিল যে কৌতুক--
দুলেছিল ইলোরা কি উজ্জয়িনীপুরে !
দুঃখের ভিতরে যারা বাঁচে সারারাত
স্বপ্নের ভিতরে তারা খোঁজে জ্যোৎস্নারাত।