চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী এবং লেখক আমজাদ 2018সালের শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের অতি পরিচিত ছিলেন আমজাদ হোসেন। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে তার ব্যাপক খ্যাতি থাকলেও একাধারে তিনি লেখক, গীতিকার, অভিনেতা, প্রযোজক, উপস্থাপক এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাছিলেন । আজ ১৪ আগস্ট বরেণ্য এ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের জন্মদিন। ১৯৪২ সালের এই দিনে তিনি জামালপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন আমজাদ হোসেন। লেখালেখির মাধ্যমেই তার সৃজনশীল জীবন শুরু, ছড়া দিয়ে মূলত সাহিত্যের অঙ্গনে প্রবেশ। আমজাদ হোসেনের লেখা প্রথম কবিতা ছাপা হয় তৎকালীন ‘দেশ’ পত্রিকায় । ছোটদের জন্যও তিনি লিখেছেন বহু গল্প, ছড়া এবং উপন্যাস। তিনি এক বহুমুখী প্রতিভার দীপশিখা। কীর্তিমান এই মিডিয়া ব্যক্তিত্বের বহুমাত্রিক সৃজনসৃষ্টি আমাদের চলচ্চিত্র তথা শিল্প-সাহিত্যে রাখছে অনন্য ভূমিকা।
১৯৬১ সালে ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে আমজাদ হোসেনের। পরে তিনি চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন।১৯৬৭ সালে তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুন নিয়ে খেলা’। পরে তিনি নয়নমনি (১৯৭৬), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), ভাত দে (১৯৮৪) দিয়ে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন। গোলাপী এখন ট্রেনে ও ভাত দে চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরে অবশ্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, পরিচালক, সংলাপ রচয়িতা, শ্রেষ্ঠ গীতিকার এবং শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার হিসেবে একাধিকবার এই পুরস্কারে ভূষিত হন।
১৯৭০ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত তার লেখা চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া, পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। আমজাদ হোসেন নিজেও চলচ্চিত্র পরিচালনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তার পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, জন্ম থেকে জ্বলছি, দুই পয়সার আলতা, ভাত দে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাংলা চলচ্চিত্র।
তার রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘ধ্রুপদী এখন ট্রেনে’, ‘দ্বিধাদ্বন্দ্বের ভালোবাসা’, ‘আমি এবং কয়েকটি পোস্টার’, ‘রক্তের ডালপালা’, ‘ফুল বাতাসী’, ‘রাম রহিম’, ‘ আগুনে অলঙ্কার’, ‘ঝরা ফুল’, ‘শেষ রজনী’, ‘ মাধবীর মধাব’, ‘মাধবী ও হিমানী’, ‘মাধবী সংবাদ’, ‘মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস’, ‘যুদ্ধে যাবো’, ‘অবেলায় অসময়’, ‘উত্তরকাল’, ‘ যুদ্ধযাত্রার রাত্রি’।
তার লেখা জীবনীভিত্তিক গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘মওলানা ভাসানী জীবন ও রাজনীতি’, ‘নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু জীবন ও রাজনীতি’, ‘মানবেন্দ্রনাথ রায় জীবন ও রাজনীতি’, ‘ শ্রী হেমচন্দ্র চক্রবর্তী’ এবং ‘ইতিহাস’ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও তার কিশোর উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ, রচনাসমগ্র, মুক্তিযুদ্ধের রচনাসমগ্র প্রকাশিত হয়েছে।
শিল্পকলায় অনন্য অবদানের জন্য ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার-এ ভূষিত করে।এছাড়া সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশুসাহিত্য পুরস্কার ও ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।