ছবি : কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হকের প্রতিবাদ
সাহিত্য ডেস্ক: একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে
মাসরুর আরেফিনের উপন্যাস ‘আগস্ট আবছায়া’। উপন্যাসটির ব্যাক কভারে
কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের শংসাবচন রয়েছে। এমনকি উপন্যাসটির প্রচারে
ব্যবহৃত পোস্টার-ব্যানারেও এই কথাসাহিত্যিকের মন্তব্য রয়েছে। এই মন্তব্য
সম্পূর্ণ বানোয়াট, মনগড়া বলে অভিযোগ করেছেন হাসান আজিজুল হক। শুধু তাই নয়,
‘আমার নামে প্রকাশ পাওয়া বানোয়াট মন্তব্য সম্পর্কে প্রতিবাদ ও পূর্বাপর
বক্তব্য’ শিরোনামে তিনি একটি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছেন। সেটি তুলে ধরা হলো:
‘সম্প্রতি প্রকাশিত (ফেব্রুয়ারি ২০১৯) মাসরুর আরেফিনের ‘আগস্ট আবছায়া’
শিরোনামের একটি উপন্যাসের পেছন মলাটে আমার নামে মুদ্রিত একটি মন্তব্য নিয়ে
বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক ও
বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে আমার কানে এসেছে। পুরো বিষয়টি সম্যকভাবে অবগত
হওয়ার পর আমি অত্যন্ত বিরক্ত ও বিব্রত হয়েছি, তাই বক্ষমাণ বিবৃতি দেয়ার
প্রয়োজন পড়ল।
... বর্তমানে সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিনকে আমি একজন অনুবাদক হিসেবেই
চিনি। সপ্তাহখানেক আগে সে আমাকে ফোন করে বলে, তার একটি উপন্যাসের
পাণ্ডুলিপি দেখাবার জন্য আমার ঠিকানায় পাঠাতে চায়। আমি বিষয়টি নেহাতই সরল
ভেবে তৎক্ষণাৎ আর না করিনি। তাকে পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে দিতে বলি। কিন্তু
স্পাইরাল বাইন্ডিং করা সাড়ে তিনশ পাতার সেই পাণ্ডুলিপি আমার কাছে আসার পর
শুরু হলো নতুন বিপত্তি। মাসরুর বারংবার আমাকে টেলিফোন করে তার সেই
উপন্যাসের জন্য দ্রুততম সময়ে একটি ‘ফ্ল্যাপ’ বা শংসাবচন লিখে দিতে বলে।
শুধু সে নিজে ফোন করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার প্রতিনিধি সাংবাদিক মারুফ
রায়হানকে দিয়েও বারবার টেলিফোন করাতে থাকে। এমনকি এক সময় সে এই ফ্ল্যাপটুকু
লেখাবাবদ আমার ব্যাংক একাউন্টে ত্রিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেবার প্রস্তাবও
দেয়, কিন্তু আমি সে প্রস্তাব তখনই প্রত্যাখ্যান করি। বয়সজনিত কারণ ও
অসুস্থতার জন্য এত বড় পাণ্ডুলিপি অল্পদিনে পড়ে ফেলাটা আমার পক্ষে অসম্ভব।
উপরন্তু তার ওই পাণ্ডুলিপি নাড়াচাড়া করে তা আদৌ উপন্যাস নাকি নানাবিধ
বিদেশি গ্রন্থের সারের বমনমাত্র- তা আমার কাছে স্পষ্ট হয়নি। এটা কবুল করতে
দ্বিধা নেই যে, ওই উপন্যাসটি আমি আদতে পুরো পড়তে পারিনি। কিন্তু মারুফ
রায়হান আমাকে অনবরত টেলিফোন করতে থাকে। অগত্যা উপায়ান্তর না দেখে আমি পরে
একদিন টেলিফোনে ভদ্রতার খাতিরে তাকে উপন্যাস সম্পর্কে দু’চার কথা বলি
নেহাতই অনানুষ্ঠানিকভাবে। কিন্তু এখন দেখছি সে, আমার নামে মনগড়া কথা বানিয়ে
তা ওই বইয়ের পেছন মলাটে বসিয়ে দিয়েছে।
আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ও স্পষ্ট করেই আমার পাঠক, শুভানুধ্যায়ী-স্বজন-সুহৃদদের
বলতে চাই, ‘আগস্ট আবছায়া’ বইয়ের পেছন মলাটে আমার নামাঙ্কিত যে কথাগুলো
মুদ্রিত হয়েছে, তা আমার লেখা নয়। আমার কথাও নয়। মাসরুর আরেফিন বা মারুফ
রায়হানকে আমি কোনো লিখিত ভাষ্য দেইনি। আমার সই করা কোনো কাগজও তাদের পাঠানো
হয়নি। আমার তাৎক্ষণিক টেলিফোন আলাপকে বিকৃত করে মাসরুর নিজের উপন্যাসের
প্রচারণায় অসৎভাবে ব্যবহার করেছে। কার্যত আমার সারল্য ও স্নেহের সুযোগ
নিয়ে তারা আমার মানহানি ঘটিয়েছে এবং আমার সঙ্গে স্পষ্টতই প্রতারণা করেছে।
এতে যেন কেউ বিভ্রান্ত না হন, এই অনুরোধ করি।
উপরন্তু আমি আরো জানতে পেরেছি ও এমন চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়েছি যে, আমার নামে
ছাপা হওয়া ওই ভুয়া বক্তব্যটি উক্ত বইয়ের বিজ্ঞাপনে এবং প্রচারণার জন্য ছাপা
হওয়া পোস্টার, ব্যানার এমনকি বিলবোর্ডেও ব্যবহার করা হয়েছে। ... আমার নামে
বানোয়াট বক্তব্য তৈরি করে পোস্টার ব্যানারে ছাপানো, তা নিয়ে ব্যবসা করা ও
প্রচারের সুবিধার্থে আমাকে ব্যবহার করার অধিকার মাসরুর আরেফিনকে কে দিলো?
আর ওই বইটির প্রকাশককে অনুরোধ জানাই, আমার নামে ছাপা হওয়া বানোয়াট
মন্তব্যটি প্রত্যাহার করে নিয়ে তারা যেন বইয়ের মলাট নতুনভাবে ও সংশোধিত
আকারে ছাপায়।’
এ প্রসঙ্গে মাসরুর আরেফিনের বক্তব্য জানা যায়নি। তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। বইটি প্রথমা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: রাইজিংবিডি