কবি : বিশ্বজিৎ লায়েক
কৃষ্ণগহ্বর
পোড়া রুটির মতো গ্রাম, পোড়া রুটির মতো শহর
ভাঙাচোরা ইস্কুলবেলা তুমি আজ শ্রাবণে এসো নেমে
মাটি ও শষ্যের ভাষায় তোমাকে ডাকতে ইচ্ছে করে
ঠোঁটে যে বর্ষা রেখে ঘুমিয়ে গেল নদী
তার চর ছড়িয়ে পড়ছে ঘুমের ওষুধে
বাকি শরীরে মিশে আছে একান্ত দ্রাঘিমা
বিশুপাগল আমি তোর কথা শুনিনি
বিশুপাগল আমার কথাও শোনেনি
সে তার গান নিয়ে ডুবে গেল
ফুটপাত ধীরে ধীরে উঠে এসে আদম ও ইভের মাঝে দাঁড়াল
নিউটনের কথা আমি বলিনি
নিউটন আমার কথা বলেননি
আমি বলছিলাম আপেলের কথা
আমি খাইনি, সে তার ঘুম নিয়ে ডুবে গেল
তৃষ্ণার নীচে নামল
আমি তার জন্য খোয়াব কিনে আনলাম
প্লেন ও ডটেড
বেড়াল পুষলাম, পাটীগণিত না শিখে
শিখলাম ডিগবাজি
ভাঙতে ভাঙতে আজ শ্রাবণে গমন পথের বাইরে শষ্যখেত
অশরীরি প্রেতচ্ছায়া
পোড়া মাটির মতো এই গ্রাম, পোড়া মাটির মতো এই শহর
শুকিয়ে নাও রোদে
একটানা বাজাও
যুদ্ধ রঙের পৃথিবী
যুদ্ধ শেষ হল জন্ম জড়ুলের মতো অস্ত্রগুলি নামিয়ে রাখল বিধ্বস্ত মাটি
জ্বলে উঠল জঠর অনুভব জন্মগাঁথা যুদ্ধ কি আবার শুরু হবে
অ্যাই নাও অনুরাগ অ্যাই নাও জিভ লালা সমগ্র ভূখন্ড
আমাকে আরশিখানা দাও দেখি কি বিভ্রম লুকিয়ে রেখেছ
অনিরপেক্ষ ভোঁতা ক্লান্ত অস্ত্রশস্ত্র আমার আর লজ্জা নেই
যুদ্ধ শুরু হোক অথবা শেষ
শিরস্ত্রাণ খুলে নেব
নিরঙ্কুশ বোধ করছি এখন
শরীর শিহরিত হচ্ছে জ্বলে উঠছে অন্তিম নাভি
তুলির নিচের এই জায়গাটা দেখো রঙ এখান দিয়েই ফিরে এসে চলে যায়
কোথায় যায় তা জানি না তবে সেই চলে যাওয়ার মধ্যে কোনো একটি কাক
ভুল পথে এসে পরে নেয় ময়ূরপুচ্ছ
ধাঁধায় আবারও নিয়ে যাব তোমাকে, যাবে
স্নানঘরে এখন মায়াবী বোতাম আর ক্রূর সাবানের ফেনা
নীল হয়ে গেছে ভাবনা
সাদা হয়ে গেছে বলেই হয়ত দেখতে পাওনি আমিই দাঁড়িয়ে আছি তোমার 'গানের ওপারে'
দেখবে আমাদের নির্জন তলায় কোনো ফুল পড়েই ছিল না
পড়ে ছিল পোড়া নাভি আর মৃত স্তন
ছুঁয়ে দেখোনি তাকে তাই বলে মৃত সন্ধ্যায় আমি তার পাগলের গন্ধে মাথা রেখে দেখেছি
কিছুই হয়নি একেবারে পানশে করে চলে গেছে মায়াবী অস্তাচল
হরিণ
তলপেটের নীচে যে হরিণ রেখে গেল তার নাভি
সুগন্ধ লুকোতে লুকোতে আমি নেমে গেছি
পাতাল অক্ষরে
খুঁজছি একটানা বেজে যাওয়া দোতারা
এপাড়ায় ওপাড়ায়
পোষ না মানা সেই সাপ আত্মগোপনকারী
রাত্রি নেমে এল জলে
জলের অক্ষরে
যেখানে রক্তের দাগ আজো লেগে আছে
কান্নায়, নিভৃত ক্ষরণে
উপাসক
যুদ্ধ শেষে যে যার নিজের মতো শুয়ে আছে সোহাগে ও সুরায়
আত্মপীড়নের এই এক মোহ
দেহ চায় কাম চায়
পুনরুত্থান চায়
প্রজ্ঞা তাকে স্পর্শ করে না বীতশোক তাকে স্পর্শ করে না
অভিলাষ তার পরমায়ুতে পুষ্ট
জন্ম জড়ুলের মতো লেগে থাকে ভরা ভাদ্রমাস
লেগে থাকে জন্মগাঁথা
যুদ্ধ আবার শুরু হয় লোভে, জিভে, লালায়, মাংসে ও লাঙ্গলে
ভোঁতা ক্লান্ত অস্ত্রশস্ত্র আমার আর দাহ নেই
আমার আর প্রসাধন নেই
আমার আর লজ্জাও নেই
শিরস্ত্রাণ খুলে নিচ্ছি ঘাতক জিভ ধুয়ে নিচ্ছি নীল বর্ণ জলে
ক্ষুৎকাতর এই দেশে ঈশ্বর নয়
আমি অন্নের উপাসক
প্রার্থনা
শুধু আড়াল দিও প্রভু
অবিচ্ছিন্ন পুরুষ স্বপ্ন নিয়ে বহুদূর চলে গেছে
রোদের নীচে পড়ে থাকা
কষ্ট উপার্জন
বুঝেছি পৃথিবীর শরীরে এখন নয় প্রতিবাদ কল্যাণ
মাঝে মাঝে উলটে যাচ্ছি রেলিং এ শুকোতে দেওয়া গায়ের
ছাল
জলের উপরে দরিদ্র সীমা
‘সহে যাতনা’ তোমার আড়ালের প্রিয় বিষ
প্রাক সন্ধ্যায় জ্বালিয়েছি প্রভু
মহাজগতিক মরুগান
নাভিদেশে সুস্বাদু মাংসের লোভে
কাঁটা তার চিবিয়েছে উট