বৈজয়ন্ত রাহা এর কবিতাগুচ্ছ
বৈজয়ন্ত রাহা এর কবিতাগুচ্ছ

কবি : বৈজয়ন্ত রাহা


বাগান


বেশ কিছু বাগান পেরোন হল

 

প্রতিটিরই একেকটি রম্য উপকথা

 

প্রতিটিরই আলাদা মুগ্ধবোধ, বিহবল ক্যানভাস


এখন যেখানে ঢুকেছি,

 

দেখতে পেলাম তুমি আর অল্পবয়সী তোমার প্রেমিক

 

এক হর্ম্যসরোবর পেরিয়ে যাচ্ছো

 

আগে হলে পিছন পিছন যেতাম

 

এখন চারপাশে তাকালাম,

 

সাজানো ফুলের ডালে অন্য কোনো আলো লেখা ছিল,

 

কিরণ দিয়ে নির্দেশিকা


আমি পাতায় পাতায় 'অতএব' খুঁজতে খুঁজতে

 

জলের কাছে পৌঁছোলাম

 

দেখলাম, অবিশ্বাস্য এক জলের মিছিল ভেঙে

 

উঠে আসছে অন্য এক বাগান,

 

যাতে কোনো গাছ নেই, ফুল নেই,

 

তবু নীরব এক প্রসন্নতা -- গম্ভীর, ধ্যানে--


আমি তৃপ্তির তুলিতে কয়েকটা আঁচড় কাটতেই

 

সেখানে জেগে উঠলো তোমার শরীর,

 

যেন আদিগন্ত নদী,


ঠিক তখন তোমার স্তনে হাত রেখেছে পুত্রবৎ নবীন কিশোর

 


নৈঃশব্দ্যের শব্দ

 

 

 

এখানে রেখেছি হাত

 

নির্জন বলো, আমাকে চেনাবে?


পরাগরেণুর থেকে যে বাষ্প উঠে যায় মেঘে,

 

তাতে মিশে থাকে কতটুকু পরাগকেশর,

 

যে ঢেউ থেকে পরজন্মে হেঁটে যায় দুধেল কিশোরী,

 

তার চোখে কতখানি মিথ্যে বাসা করে?

 

গাছ থেকে গাছের শিকড়ে মিশে যায় যে গোপন,

 

ঈশানের ডান কোণে, কতখানি ওজরের স্তূপে ভঙ্গিমা তার?

 

কতটুকু কুরুশে সে বোনে ধানগন্ধ, কতখানি শব্দহীন ছায়া?


নৌকোতে ওঠে জীবনের ধন?

 

ওঘবতী নদীর ভিতরে ডুবে যায় সূর্যের ইশারা,

 

বুকের বিষাদে ছোঁয় অহমের কনিষ্ঠ আঙ্গুল,

 


নির্জন, এখানে সংবেদ, পাথরের কোলে মাথা রাখো,

 

আমাকে চেনাও,

 

শরীর না ছুঁলে তা সত্য হয় না?

 

কান্না কি সত্য নয়? ভালোবাসা?


 

অনির্বাণ

 

 

 

আমার ভিতর বহুবার জন্ম নাও তুমি


জল স্বচ্ছ হলে ছায়ারা গভীর,

 

স্মৃতি স্বচ্ছ হলে, মায়ারা--

 

প্রাচীন দেওয়াল থেকে উঠে আসে গানের অতীত

 

কথাদের অস্ফুট শরীর --

 

জন্মধুলো থেকে ভেসে আসে আলো,

 

দিনের মলাট খুলে দেখে নিই ফিরে আসা,

 

আবির্ভাব, --

 

কিভাবে রেখেছো সে ঘুম,

 

কিভাবে সে মৌনতার অনুবাদ করো,

 

গোটা গোটা অক্ষরে লিখে রাখো প্রতিশ্রুতিময় মৃত্যু-ইতিহাস ;

 


দিন যায়,

 

ক্রমাগত মুছে রাখি পৃথিবীর আবছা নদীর স্বর,

 

সন্ন্যাসীর মতো তাচ্ছিল্য আসে শীত নিয়ে,

 

অন্যজন্মে,

 

প্রার্থনার মতো গাছ,

 

পাখিদের মতো ঢেউ তোমার ভিতর মিলায়

 


স্তব্ধতা দীর্ঘতম হলে

 

ভালোবাসা হেঁটে যায় অনন্তের পথে...

 


তুমি ভালো আছো??

 



এইতো এমন

 


হলুদ ল্যাম্পপোস্টের আলো আমায় একলা হতে শেখায়

 

অস্তিত্বের কাছে জল যেমন নতজানু,

 

মাটির কাছে মেঘ,

 

অরণ্যের কাছে বাতাস,

 

তেমন শহরের বিষগাছের কাছে আমি আনত হতে শিখি

 


আমার শরীরের ভিতর থেকে স্তব্ধতা ঠিকরে বেরোতে থাকে,

 

দৃষ্টি ঝরতে থাকে অবিরাম,

 

রাস্তার কথা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে না,

 

তোমার আত্মহত্যার কথাও না,

 

আকাশের ঠোঁটে পাহাড়কে চুমু খেতে দেখে

 

মনে মনে হেসে নিই একচোট,


 

কারা যেনো বলতে চায়, ভাদ্র পড়ে গেছে,

 

রোদের গায়ে ভালো করে তেলমালিশ করো,

 

পুজো আসবে,

 

আমি তাদের চুপ করিয়ে দিই,

 

পশলা বৃষ্টির পরে, বেঞ্চির ফাঁকা কাঠ বেয়ে জল চোঁয়ায়,

 

আমি বেঞ্চিতে বসিনা,

 

চারপাশে অগণিত খিস্তি খেউড় উড়ে যেতে দেখি,


 

বসব একদিন,

 

শেষ কবিতা লিখব নিজের মৃতদেহের পাশে বসে,


এখন দু চারটে আলো বরং তোমায় পাঠাই, তোমার ওদেশে বড়ো অন্ধকার


তারপর পুজোর কাছে দু হাত পাতবো


না হয়

 

 

 

না হয় কিনবো রোদ, রোদের সঙ্গে ছায়া

 

না হয় কিনবো নদী এবং পাহাড়ভোলানো মায়া

 

তোমার সঙ্গে শহর জুড়ে ট্রামের গন্ধ মেখে

 

না হয় কিনবো কলঙ্ক আর "নির্লজ্জ বেহায়া"


ও কৃষ্ণের সই, ও কুঞ্জগামিনী রাধা

 

আমার ছন্দ পারোনা সইতে দরজা পেরোতে বাধা,

 

তোমার জন্য তুলি, তোমার জন্য ধান

 

পটুয়া এখনো আঁকছে, তাই ইমনের গলা সাধা


না হয় কিনবো রঙ, বেহাগ ভাঙবো রাতে,

 

না হয় ভুলবো জলের মাশুল, ডুবে মরে কিনারাতে,

 

তোমার ভিতর তুমি, জেগে উঠলেই সুর

 

ফকির শহর বিষাদ গুণছে

 

নামতা পড়া হাতে...


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান