বইমেলার ছবি
সকালে বৃষ্টি, সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, বয়ে চলছিল মৃদু ঠাণ্ডা বাতাস। এত সব প্রতিকূলতাকে পাত্তাই দেননি বইপ্রেমীরা। কারণ কাল বাজবে মেলার বিদায় ঘণ্টা। পছন্দের সব বই কেনার শেষ সময় এখনই। তাই তো গতকালের মেলায় ছিল বইপ্রেমীদের স্রোত। অযথা সময় নষ্ট করনেনি কেউ। সবাই ব্যস্ত ছিলেন মেলার এ স্টল থেকে অন্য স্টল ঘুরে পছন্দের বই কিনতে।
সকালে বৃষ্টি হওয়ায় কিছু প্রকাশনা বিপাকে পড়েছিল। কিছু প্রকাশনায় গিয়ে দেখা যায় পলিথিন এবং টেপ দিয়ে বৃষ্টির পানি আটকানোর চেষ্টা হয়েছে। তবে আগে থেকেই বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় প্রায় সব প্রকাশনারই এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছিল। সে কারণে সকালে ব্যাপক বৃষ্টি হলেও তা প্রকাশকদের খুব বেশি প্রভাবিত করেনি। অনেক প্রকাশকই পূর্ব সতর্কতার কারণে পলিথিন দিয়ে সব কিছু আগেভাগেই ভালো করে ঢেকে রেখেছিল। সবমিলে বৃষ্টির পর বিকেলের শীতল আবহাওয়া পাঠকদেরকে বাড়তি বই কিনতে উত্সাহ যুগিয়েছে। আর তাতেই ছিল খুশির আমেজ। বৃষ্টির কারণে দুই এক জায়গায় পানি জমলেও বালু দিয়ে তা নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এর পরও কিছু জায়গায় পানি জমে ছিল। এটা পাঠকদেরকে চলাফেরায় কিছুটা হলেও সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
মঙ্গলবার মেলার দ্বার খুলে যায় ঠিক বিকেল তিনটায়। দ্বার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই দু’ধার দিয়ে লাইন ধরে পাঠক মেলায় প্রবেশ করেন। বিকেল সাড়ে চারটার মধ্যেই পুরো মেলা চত্বর মানুষের ভরে ওঠে। সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ মেলা থেকে বের হওয়ার গেটে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, যারাই মেলা থেকে বের হচ্ছেন তারাই দু’হাত ভরে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছেন। তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বৃষ্টি শীতল আবহাওয়া তাদের মেলাকে আরো বেশি আনন্দময় করে তুলেছে। এ ছাড়া মেলা শেষ প্রান্তে চলে আসায় এখন তারা শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করছেন বলেও জানান অনেকে।
বইমেলার ব্রাদার্স পাবলিকেশন্স এর প্রকাশক ফকর উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বৃষ্টি মঙ্গলবারটিকে তাদের জন্য আর্শিবাদ করে এনেছিল। তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে অনেক আগে থেকেই সতর্ক করেছে, কবে বৃষ্টি হবে তা তারিখসহ জানিয়ে দিয়েছে। তাদের সতর্ক বার্তায় গুরুত্ব না দেয়ায় গত ১৭ তরিখে সকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ কারণে এবার সবাই সতর্ক ছিল। গত ১৭ তারিখের চেয়ে আজ অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সতর্ক বার্তা আমলে নেয়ায় ক্ষতির পরিমাণ এবার খুবই কম হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়াটা বেশ শীতল। এমন আবহাওয়া সকলেই পছন্দ করে। এ কারণে আজ ছুটির দিন না হলেও ব্যাপক পাঠক সমাবেশ ঘটেছে। বিক্রিবাট্টাও হচ্ছে অনেক।’
মেলায় আগত একজন পাঠক তছলিমা খাতুন গতকালের আবহাওয়া সম্পর্কে বলেন, ‘আজ মেলায় আসার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু আবহাওয়া আমাকে মেলায় টেনে এনেছে। কিন্তু এসেই যেহেতু পড়লাম তাই কিনেও ফেললাম কয়েকটি বই।’
মেলায় আসা কবি মাহফুজা অনন্যা বলেন, ‘এমন আবহাওয়া কাকে না নাড়া দেয়। সকালে বৃষ্টি আর বিকেলে শীতল মেঘলা আকাশ। এটি একজন কবিকে সবার আগে নাড়া দেয়। এ কারণে আজ মেলায় এসেছি অনেক আগে। বিক্রিও হচ্ছে অনেক। আমি অনেক সময় স্টলে ছিলাম। এখন একটু লেক পাড়ে এসেছি প্রকৃতিকে আরো একটু কাছে থেকে দেখতে।’
নতুন বই: অমর একুশে গ্রন্থমেলার গতকাল ছিল ২৬তম দিন। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১৮৫টি। এর মধ্যে গল্প ২০টি, উপন্যাস ৩১টি, প্রবন্দ্ধ ১২টি, কবিতা ৫৬টি, গবেষণা ৭টি, ছড়া ৮টি, শিশুসাহিত্য ৬টি, জীবনী ১১টি, রচনাবলি ২টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ২টি, নাটক ৫টি, বিজ্ঞান ২টি, ভ্রমণ ২টি, ইতিহাস ২টি, রাজনীতি ১টি, স্বাস্থ্য ২টি, রম্য ১টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদ ১টি, অভিধান ১টি এবং অন্যান্য ১২টি।
উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে বাবুই প্রকাশনী এনেছে সুমি সৈয়দার ‘মেঘনৃত্য ছুঁই পায়রার ডানায়’, শব্দকোষ প্রকাশনী এনেছে আহমদ সিরাজের ‘মোহাম্মদ ইলিয়াছ জীবন ও কর্ম’ ঝিনুক প্রকাশনী থেকে মহসীন চৌধুরীর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ‘বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু’, লাইফ পাবলিকেশন্স থেকে অনন্ত উজ্জ্বল ও মিহাউ পানাসুকের অনুবাদ গ্রন্থ ‘পাতাহীন বৃক্ষ অথবা কালো গাছ-কঙ্কাল’, হাওলাদার প্রকাশনী থেকে আবদুল মান্নান সৈয়দেও ‘ফররুখ আহমদেও শ্রেষ্ঠ কবিতা’, বটেশ্বর বর্ণন থেকে সুমাইয়া খানমের গবেষণা গ্রন্থ ‘ভাষা-আন্দোলন ও বাংলাদেশের কথাসাহিত্য’।
মূল মঞ্চের আয়োজন: বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার
মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘চলচ্চিত্র জন মৃণাল সেন, আমজাদ হোসেন ও আনোয়ার
হোসেন: শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন
সাজেদুল আউয়াল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ম. হামিদ, তপন বাগচী এবং বিধান
রিবেরু। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ হাসান ইমাম। সন্ধ্যায় কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন
কবি সাজ্জাদ শরিফ, বায়তুল্লাহ কাদেরী, শামীম রেজা, জাহিদ মুস্তফা, হাসান
মাহমুদ, রাসেল আশেকী, মাসুদ হাসান, মাশুক চৌধুরী, সুহিতা সুলতানা। আবৃত্তি
পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সুপ্রভা সেবতী, মনিরুল ইসলাম। সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠানে ছিল মো. সাইফুল ইসলামের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উজান’-এর
পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ, প্রিয়াংকা গোপ,
সুমন মজুমদার, একেএম শহীদ কবীর পলাশ, মাহবুবা রহমান। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন-
কাজী মো. ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), ডালিম কুমার
বড়ুয়া (কি-বোর্ড) এবং ফিরোজ খান (সেতার)। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন
প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন- ফারুক মাহমুদ, সাদ কামালী, কামরুল
হাসান, মাহমুদ শামসুল হক এবং জফির সেতু।
আজকের কর্মসূচি : আজ গ্রন্থমেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল
৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বইমেলা: উদ্যোগ ও অর্জন’ শীর্ষক
আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শাহিদা খাতুন। আলোচনায় অংশগ্রহণ
করবেন ওসমান গণি, রেজানুর রহমান, ফরিদ আহমদ দুলাল এবং জালাল আহমেদ।
সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ,
কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।