ভাস্কর চৌধুরী'র ৫টি কবিতা
ভাস্কর চৌধুরী'র ৫টি কবিতা

কবি : ভাস্কর চৌধুরী

খ্যাতিমান কবি, সাহিত্যিক ভাস্কর চৌধুরী ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাজারামপুরের ভবানীপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নুরুল ইসলাম। ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্যিক ‘ভাস্কর চৌধুরীর’ লেখালেখি শুরু। তিনি লিটল ম্যাগাজিন ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ প্রভৃতি নিয়মিত লিখে থাকেন। রক্তপাতের ব্যাকরণ (১৯৮৪-গল্পগ্রন্থ), বাষট্টি বিঘা নদী (১৯৮৭-গল্পগ্রন্থ), কোথায় নিবাস (১৯৮৭-গল্পগ্রন্থ), পতনের সময় (১৯৮৮-গল্পগ্রন্থ), শনিবারে বৃষ্টি (১৯৯৯-গল্পগ্রন্থ), লালমাটি কালো মানুষ (১৯৯৮-উপন্যাস), স্বপ্নপুরুষ (১৯৯৮-উপন্যাস). মীমাংসা পর্ব (১৯৯৮-উপন্যাস) আষাড়ের জীবনদর্শণ (১৯৯৯-উপন্যাস) ভূমি (২০১১- উপন্যাস), কৃষ্ণপুরাণ (২০১১-উপন্যাস), কখনও কখনও এরকম ঘটে (২০১২-উপন্যাস)। আমার কেবলই সমর্পণ (১৯৮৬-কবিতা), নিরঞ্জন আমার বন্ধুর নাম (২০১২-কবিতা), আমার ভেতরে আঁধার (২০১২-কবিতা), পরাণের গহীন (২০১২-কবিতা), তোর বড় কষ্টরে (২০১২-কবিতা) প্রভৃতি তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য মৌলিক সৃষ্টিশীল গ্রন্থ।
বরেন্দ্রের মাটি ও মানুষের শত বছরের উপকথাবহুল জীবন ও সংস্কৃতি, আদিবাসীদের জীবনের সুখ-দুঃখ তাঁর লেখার প্রধান ক্ষেত্র। তাঁর প্রতিটি গ্রন্থই বোদ্ধামহল, সুধিজন কর্তৃক স্বীকৃত, প্রশংসিত। গল্প ও উপন্যাসের নন্দিত লেখক হিসেবে ইতোমধ্যেই দেশব্যাপি খ্যাতি অর্জন করেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ‘ভাস্কর চৌধুরী’।

জীবন তত্ত্ব


ভরাট জীবন শাক পাতা ফুল, বৃক্ষবন, পাখির কুজন

বাড়ির উঠোনে শিশু, রাতের বাসি কাপড় শুকাচ্ছে বৌ

শিশির পড়েছিলো , টিন বেয়ে টপ টপ নিচে পড়ছে

পৌষের দিন, ভেজা অনুভব, মিঠে লাগে উঠোনে রোদ

সম্মেলন, অতঃপর সংসার, সংশয়হীন প্রভাতিক স্নান

সূর্যপ্রনাম , বাইরে পথে ধান ভরা গরুগাড়ি, পোয়াল

আসছে

ধানের বদলে কেনাকাটা ,

 কে যায় ? রাতের রাস্তায়?

 

কেউ যায়, অনেকেই যায়, যাওয়ার নিয়ম আছে

বৃদ্ধটি শীতে মরে গেলো, লাশ যায় পুত্রের সোয়ারী

পিতা যায়, মাতা যায়, গাছের পাতা যায় নীরব কলরবে

নীরব কলরব বুকের ভেতর বাজে, সকাল ও সাঁঝে

--বাজে

তোমার ছায়া আসে, ধীরে , বুকের উপরে- ধীরে

কি যায়? আলোর ছায়া-- মেঘ-- ফুল ভেসে যায়

পদ্মায় গঙ্গায়, পুজোর বিষ্ঠা সব, বর্জ্য ভেসে যায়

কণ্ঠের সুর বর্জ্য হয় গানে, ভালোবাসা বর্জ্য হয় প্রাণে

দক্ষিণ হওয়ায় ভেসে যায় আয়াতের সকরুণ সুর

মৃত বলে, আর কতো দূর? আর কতো দূর?

দূর নেই, বুকের ভেতর সব থাকে, জীবন ঘৃণা ছাড়ে

 

ভালোবাসা অথবা ঘৃণা কোনো অনুভব নয়

মানুষের মূল অনুভব মনে হয় কেবলই মানুষ

 

 

তুমি---৪৭


 

আকাশের কোনো রং নেই জেনেও চিৎ হয়ে শুয়ে

নক্ষত্ররাজির সাথে আমার আলাপন খুব ঘনিষ্ঠ হয়

জলের সাথে মাছগুলি অতীব ঘনিষ্ঠ হেতু মনে হয়

যদিও তারা কেউ কারো সাথে বাক্যালাপ করে না

 

তোমার ভেতরে একবার গেলে যা কিছু যায়

মগজে সংকেত দেয়, মগজের সাথে দেহের ঘনিষ্ঠতা

বৃক্ষের সাথে মনে হয় পাতা, পাতা ঝরে গেলে

বৃক্ষের কোনো বোধ আসে কিনা ভাবার আগেই

নতুন চিরল পাতার উদ্গম বৃক্ষ টের পেলে

পাতার ঘনিষ্টতা ভুলে যেতে পারে

তুমি

তুমি অর্থ তুমি ছাড়া আর কি হয়?

জানতে চেয়ে পত্র লিখে হতাশ হয়েছি

মৃত্যুকে তিরোধান বলা যায়

শ্মশান ও কবর

সম আনুপাতিক

যখন মৃত্যুই প্রধান

তিরোধান আর কোনো দ্যোতনা রাখে না

জল ও জীবন পাশাপাশি রাখলাম

আকাশের পাশে কেবল নক্ষত্র চিরন্তন

তোমার পাশে আমি কিছুক্ষন

 

 

বিপন্নতা


 

ছিলো কৌতূহল, সারাদিন গল্প হলো , গভীর থেকে গভীরে হাতড়ে দেখে বোঝা গেলো

পৃথিবীর মাটির গভীরে যেনো ঢুকে যাচ্ছি, কাদাখোচা চঞ্চু আমার

অতঃপর বিকেল বেলার শেষে সূর্য চলে গেলে, তুমিও বিদায় নিলে

শূন্য মাঠ, ঘাম ও ঘটনা,ক্ষনেক বিস্মরণ ,

আশ্বিনের ধানের মাঠে টলটলে জলের ভেতর কিছুটা শয়ন

হতাশা বোধ , তুমিহীন অথচ নিশ্চয় তুমি অসহ্য ছিলে কিছুক্ষন

তারপর আমি যখন একাকী, ঐদিকে মেহেরচন্ডিতে যাবো কিনা ভাবতে ভাবতে

তোমার দিকে পুনরায়

 

মানুষ আসলে কার কাছে কি চায়?

কতটুকু চায়?

সুখ?

দুঃখ?

বিপন্নতা অথবা কিছুটা ক্লান্তি

বাহুসন্ধির ঘাম চেটে খায় মাতাল মানুষ

 

ভাতের বদলে ঘাম

ভাতের বদলে হাত

ভাতের বদলে ঠোঁট

 

চাটতে চাটতে মানুষ বিষন্নতায় বাহুর ভেতর মুখ ঢেকে

প্রহর কাটিয়ে দেয়

 

আশ্চর্য মানুষ!

চালের কাছে চুক্তি করে নারীর কাছে যায়

 

 

তুমি----৪৪


 

সরোবরে মাছ আর তোমার সাথে গোপন আলাপ

একরূপ মনে হলে ভাবি, বাতাস বুঝি কিছু জানে

 

তুমি কিছু জানো কিনা সে কথা কে জানে তবে?

বলো নি কিছুই, ছিলো নীরবতা, গোপন বিলাস

 

নীরবতা চিরকাল উভয়ের হলে, নিরবেই ভাঙতে হয়

ইশারা গুলো স্বয়ং শিক্ষিত, জীবনের দায়

বাঁচতে গেলে অবশেষে সকল বিরাম সংক্ষেপ হয়

কথা আসে ভোরে, তুমি আসো শিউলি সফরে

বিনয় করে দুজনে কফির মগে কান্না থামাই

 

কান্না কোনো রোগ নয়, কান্না হলো সফল নিরাময়

তৃপ্তি করে কাঁদা গেলে, বিরাগ বলে কিছুই থাকে না

এ কথা জেনেই একরাতে কি গভীর কান্না হয়ে গেলো

কান্নার জল চেটে খাওয়া সে এক পরম সুখের কাল

বলেছিলে তৈরি থেকো, যাবো আজ যখন বিকাল

 

বিকেল নয়, মাঝরাতে পাশাপাশি কফি পান

করে যারা

তারা বোঝে, ভালোবাসার কোথায় নিদান

 

 

অবহেলা


 

অবহেলা করে সমুখ দিয়ে হেঁটে গেলে তুমি

বুকে বেজে ওঠে তোমার খড়ম, হাইহিল

আমার চিরকালীন বিষন্নতায় দাগ লাগে

আমি এ রকম দাগের ভেতর , তুমি অবহেলা দিলে

আমি অবহেলা শব্দের অর্থ বুঝি ঠিক তোমার

ছায়া চলে গেলে

তুমি কোথায় যাও? কার কাছে যাও? শুয়ে থাকো

সন্ধ্যার পর নক্ষত্রপুঞ্জের মতো একে একে প্রশ্ন জাগে

তুমি কারো কাছে হাঁটু গেড়ে ভিক্ষে করো নাকি?

আমি যেমন তোমার কাছে জাগরিত স্বপ্নে ভিক্ষে করি?

ভালোবাসা চিরকাল হাঁটু গেড়ে ভিক্ষার ব্যাপার হয়

তুমি ভালোবাসা দেবে কিনা জানবার আগে

 আমি হাঁটু গেড়ে ভিক্ষা নিতে বসি

 আর তোমার ছায়া আমার হাঁটু মাড়িয়ে দূরে সরে যায়


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান