এক
তুমি শুয়ে পরলে—চিৎ হয়ে, উত্থিত আপেল। নিউটনের
চোখ আমাকে ডাকছে। বুকে থু থু ছিটালাম—গরম ভাত
থেকে পেড়ে আনা ক্ষুধা খেয়ে নিবো এমন ভঙ্গিতে হাত
বাড়ালাম। —ওহে নিউটন! তোমার জিহ্বাটা সরাও আমি
প্রবেশ করবো। নরম যন্ত্রণায় বেহুঁশ হয়ে ছিলাম কত যুগ—
এবার মসৃণ নাভির উঠোনে দৌড়াবো অনেক...
চুপিচুপি চোখ মেলে দেখো আমার বাম বাহুর ক্ষত। ডান
বুকে জমাট রক্তের যৌক্তিকতা—যেখানে তোমার ঠোঁট স্নান
সেরেছে গত রাতে। আমি নিমগ্ন; নাভি ঢালের বিস্তৃত
ঘাসে—হারিণীর বোশাখে যেন প্লাবন থেমে আবার উঠেছে
ঢেউ। তোমার বাঁকা গ্রীবায় ঠোঁটের আগুন রেখে চোখ বন্ধ
করলাম। এত কাছাকাছি মৃত্যু আসতে পারে—কবে ভেবেছি
এমন! ডুবে যাচ্ছি; গরম কড়াইয়ের ভাপে। বাকি নাই
সাঁতারের...
তোমার মুখে তখন মঙ্গার মাতম—‘মাঝি বৈঠা চালাও; দাঁড়
চালাও আরো...’ কী ভেবে থেমে যাই। ওঁম মঙ্গা—ওঁম
ধরণি; তোমার ইশকুলে আর কত ক্লাস বাকি। আশৈশব মূর্খ
আমি—এই পৃষ্ঠায় ডুবে আর কিচ্ছু পড়তে চাই না।
তুমি ও নিউটন ডাক দিলে—তখনো আমি তোমার ভেজা
উঠোনে পিছলে যাচ্ছি। আপেল হারানো সংবাদ আমার কান,
মাথা, হৃদয় কোথাও পৌঁছতে পারে না। আমি বরং মূর্খের
ঢোল দেখে কাগজি লেবু নিয়ে বাড়ি ফিরি।
দৃশ্যাহত ছাদে মুক্ত পাখির মতো কথা বলে—তোমার আব্রু;
ডুবি না আমি আর। কাগজি লেবুর ঘ্রাণ আমাকে জাগিয়ে
রাখে...
২৯ জুলাই ২০১৭ খ্রি., ধানমন্ডি, ঢাকা।
দুই
নিমগ্ন হতে গিয়ে লবণের স্বাদ পেলে বুঝতে পারি তোমার
উরুতে শীত এসেছে। শিশির জমেছে খুব। ক্ষতস্থানে হাত
রাখতে ইচ্ছে হয়। অন্ধকার ও দূরত্ব দুটোকেই খুব কাছের
বলে জেনে এসেছি এতদিন। অনেকটা সহোদরের মতন।
কিন্তু তুমি যখন উরু বেয়ে মথিত শিশির নিয়ে উবু হয়ে
যাও—মাটি কিংবা ঘাসের ফুটপাতে; তখন আমার মিষ্টি
মুখটা আবার লবণ ভরতি হয়ে ওঠে।
চাষ থেকে ফিরে তোমার জবা’য় চোখ রাখি। দুনিয়ার সকল
পর্দা হেসে ওঠে। যত পর্দায়-ই তুমি আবৃত রাখো তরমুজের
জ্যামিতি; আমি শ্রবণে ঘাটতি রাখবো না কোনো। বরং ভেসে
যাওয়া উরু থেকে শিশির কুড়িয়ে জবা’র যন্ত্রণায় মেখে
দিবো। দেখবো—কীভাবে লবণ তৈরি হয়।
বিরতি শেষে গঠন ও রমণকে আয়নায় মেলে নেমেছি ঘ্রাণ
অন্বেষণে। বিধাতার ভাষায় পাঠ চলবে বিরতিহীন। কোনো
ফুলেই আর লবণ থাকবে না। সমুদ্র তীরবর্র্তী জাহাজের
মাস্তুলে অগনিত মুখ—মুখোমুখি নুয়ে যাবে; তোমার উরুতে।
শিশিরের লাভায় অজ্ঞান হলে আগ্রা—আমি যাবতীয় ফুলের
ঘ্রাণ চুরি করে গ্রাম হারানো বিবর্ণ জবা’য় ছড়িয়ে দিবো।
খড়ের নরমে আমি—একজন আমি’র কাছে নত হয়ে আছি।
ভিক্ষাপ্রাপ্ত লবণ দিয়ে স্নান শেষে—পিপাসার্ত জবা নিয়ে
লুকিয়ে পরবো লবণহীন গ্রহে।
২৯ জুলাই ২০১৭ খ্রি., ধানমন্ডি, ঢাকা।
তিন
মা বললেন—পুড়ে গেলে অন্য রকম স্বাদ হয়। মা—এই যে
আমি পুড়ে পুড়ে তোমার জিহ্বায় শুয়ে পড়েছি—বলো;
কেমন লাগছে? আমার মুখে তোমার জিহ্বা—শিশু হওয়া
আমাকে পান করাও আগুন। তুমিও পুড়ো—নাভিতে ঢেঁকি
বাজুক; আমাকে অন্তত একখানা গামছা দাও। মাটিতে শুয়ে
যাই—নিপাট। তোমার চোখ হাতে নিয়ে বিদায় করি নিজস্ব
ভ্রমণ।
গালে ও গলায় ঠোঁট রাখলে কেমন হয়ে যাও তুমি; জ্বরাক্রান্ত
রোগির মতন ছটফট করো। মনে হয় তখন—চোখ দুটো
ফেরত দিই এবার। তুমিও দেখো—আমি কতটা বর্বর!
আমার হাতে কর্ষিত হচ্ছে তোমার কুলার বুনন। শিস দিচ্ছো
তুমিও—গোল্লাছুট শেষে একলব্য ফেরারির মতন। সেদিকে
খেয়াল নেই আমার। হাতে আমার কাস্তের তেজ, বুকে বৈঠার
ছলাৎ আর শানানো লাঙল অব্যহত। বীজতলার জমিনে
জোয়ার উঠছে তখন; ওগো সানাই—
এবার বাড়ি গেলে মায়ের হাতের ফড়িংটা নিয়ে আসবো।
তুমি বাইশ-তেইশের হিসেব; আমার মা হিসেবহীন
জায়নামাজ। মায়ের গণনাহীন যাপন আমাকে ক্রমাগত মানুষ
করে তোলে। আর আমি চাষের ব্যাকরণ জেনেও হোঁচট খাই
বারবার। উঠতে উঠতে নিভে যাই তোমার স্রোতে। এত এত
চাষ হলো—অথচ মায়ের মতো গুণীন খুঁজে পাই না কোনো?
২৯ জুলাই ২০১৭ খ্রি., মিরপুর, ঢাকা।
চার
যখন তোমাকে মা ভাবি—তুমি হয়ে যাও প্রেমিকা। আর
যখন প্রেমিকা ভাবি তখন হও মা। তোমার স্তনে আমার
নখের উষ্ণতা ঘুম পরাতো তোমায়। তুমি স্বপ্নে কোনো
রাজকুমার—হয়তো নগন্য সিনেমার টিকেট ব্ল্যাকার খুঁজে
ঘুম ভেঙে দিতে আমার। তখন মায়ের প্রতি কোনো
আগ্রহবোধ করতাম না। পাশ ফিরে—স্বাদের বুঁদবুঁদ তুলে
আবার তোমার কুয়োয় শিশির ছড়াতাম।
একরাতে তোমার ইচ্ছে হলো—আমার মা হবে। আমরা
প্রস্তুত হতে থাকলাম দীর্ঘ আলিঙ্গনের জন্য। শেষ অক্ষরে
তোমার যমুনায় বিসর্জন দেওয়া আমাকে তুমি আর খুঁজে
পেলে না। আমি তোমার ঠোঁটে ভেসে উঠলাম। তখন সুবহে-
সাদিক। কোথাও কোনো পতিতার কান্না জেগে নেই। সে
অদ্ভুত বিদায়ী! সেখানে আমরা নতুন করে আবিষ্কৃত হলাম।
তুমি ধাঁধাঁয় পড়ে চিৎকার করে বললে, ‘—তুমি আমার
সন্তান; তোমাকে আমি এই স্তন পান করিয়েছি। তুমি দেখো
আমার যোনিতে এখনো তোমার জন্মক্ষত।’
তারপর যখন দেখলে—আমি অবিকল জন্মেছি আবার।
এবার আমার সাথে তোমার কেবল সহোদরের পরিচয়। তখন
আমার মনে হলো আমি ও মা—মা ও তুমি কেউ আলাদা
না। প্রত্যেকেই বৃন্তহারা এক একটা ওষধি। গভীর
আলিঙ্গনের আড়ালে হয়তো আমিই আমাকে জন্ম দিচ্ছিলাম
বারবার!
৩০ জুলাই ২০১৭ খ্রি., ধানমন্ডি, ঢাকা।
পাঁচ
কান্না এলে তোমার মুখ আসে। কৈশোরের পিনপতন
একজামের কথা মনে পড়ে। আন্দোলিত ফসলের ক্ষরণ ও
খৈলানের বিকেল—পরাভুত আওয়াজ আসে। পড়শি খড়ের
গাধায় নিম্নমুখি হয়ে থাকা উড়ালকাল হারিয়ে শূন্যে—তোমার
দেওয়া বাবুইটা নিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে কবর ভেবে মরে যাই।
তৃতীয় মৃত্যু ও কবরের মধ্যবর্তী ফাগুনে তোমার কোমড়
বাঁকানো হাসি এগিয়ে আসে।
বসে আছি। ঈর্ষার কাফনে। তদ্রুপ তুরুপের মধ্যে বিক্ষিপ্ত
স্তন নিয়ে কাছে এসো। দেখো আমি ক্লান্ত আয়নার মানুষ হয়ে
গেছি। সামনে-পিছনে কোনো ইতিহাস নেই। মনে হয়
তোমার ঠোঁটের সলতে ছিঁড়ে আবার জ্বলে উঠি। বৃদ্ধ খড়ের
আকিকায় পুড়িয়ে দিই ছুটির অপেক্ষা।
রুশ প্লেনের তাপে কাঁপছি এখন—তেমার স্তন বৃন্তে কে
কাঁপছে? আমাকেও কাঁপাচ্ছে দুনিয়া তোরন। তোমার তৃষ্ণার
রঙিলা ব্রা’য় হাত রেখে দুনিয়া পঠিত হবে। ধর্মতলার বিষে
বিষক্ষয় হবে কার্তুজের।
এবং তুমি খুলে দাও ঈশ্বরের মৃৎদপ্তর। আমি চক্ষু ভর্তুকিতে
বিন্যাসিত হবো। তোমাকে নিসর্গ চুড়ায় স্থাপন করবো কান্নার
মুখ। ছুঁই ছুঁই জীবন রাক্ষসের ছই থেকে খসে গেছে; যাবে
আরো বহু নগর—
নাসা’র পরিভ্রমণে তর্কাতিত বিষণ্ণতা তৈরি করো তুমি। আমি
অন্ধ রুমালে ইসরাইল নিয়ে বিন্যস্ত হয়ে যাবো। ইস্—বর্ষা
মাটিতেই নামে! আমি বরং অর্জুনের দাঁত চুষে ইব্রাহিমের
উৎসবে অর্পিত হই—
৩০ জুলাই ২০১৭ খ্রি., ধানমন্ডি, ঢাকা।