অভিনেতা-অভিনেত্রী সৃষ্টির আসল স্থান হলো মঞ্চ। বিশ্বের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী রয়েছেন, যাঁরা চলচ্চিত্র জগতে আসার আগে মঞ্চে অভিনয় করতেন। অনেকে এখনও করছেন। আমাদের বাড়ির আঙ্গিনার মেয়ে রমা । সিনেমার পর্দায় সুচিত্রা সেন । তিনিও বালিকা বধূ অবস্থায় মঞ্চে নাটক করেছেন। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি পেছনে । নিজেকে উত্তম কুমারের সাথে জুটি করে হিট করেছেন চলচ্চিত্রে । একজন মহা নায়ক অপর জন মহা নায়িকা।
সুচিত্রা সেনের কিশোর বয়স কেটেছে পাবনার হেম সাগর লেনে পৈত্রিক বাড়িতে। লেখা পড়ায় হাতে খড়ি সেন্টাল গালর্স হাইস্কুল ( আগের নাম মহাকালী বিদ্যাপিঠ), তারপর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় । ফ্রক না ছাড়তেই বিয়ে । তারপর কলকাতায়। ঘরণী বধূ রমা সৌন্দর্য প্রতীক। শুধু তিনি সুন্দরী ছিলেন এমন নয়, গুণবতীও ছিলেন। যাঁর উজ্জল স্বাক্ষর চলচ্চিত্রে অভিনয় । তিনি হয়েছেন কিংবদন্তী তুল্য বিশ্বের মহা নায়িকাদের মধ্যে বাংলা চলচ্চিত্রে একজন।
কলকাতার বালিগঞ্জ প্লেসের দুর্গা মন্দির ক্লাবের উৎসবে নাটক মঞ্চস্থ হবে। নায়িকা চরিত্র অভিনয়ে দু’একজনকে পাওয়া গেলেও রিহার্সেলে অভিনয় ভালো হচ্ছে না। ঐ ক্লাবের ছেলেদের কি মনে করে চোখ পড়লো রমার উপর । তিনি তখনও সুচিত্রা সেন হননি। ঐ নাটকে রানীর অভিনয় করার স্বামী দিবানাথের কাছে অনুরোধ করা হলো । তিনি এটি রমাকে জানালেন। তাঁর আপত্তি ছিলো। মহল্লার ক্লাবের ছেলেরাও নাছোর বান্দা । রমা নববধূ হুট করেই তো আর অভিনয় করতে পারেন না। তিনি শ্বশুরের অনুমতি চাইলেন, পাওয়া গেল অনুমতি । কলকাতার বালিগঞ্জে সেই মঞ্চে এলেন পাবনার রমা । অভিনয় ঝিলিক । সবাইকে চমকে দিলো। তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়লো , পৌঁছে গেলো টালিগঞ্জ পর্দা এলাকায়। পরিচালক বিমল রায় সেন ছিলেন, সেন পরিবারের আত্মীয় । তিনি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দিলেন । দিবানাথের আগ্রহ ছিলো রমা অভিনয় করুক। কিন্তু সেন পরিবারের বধূ না হয় মঞ্চে একটা নাটকে অভিনয় করেছেন, তাই বলে সিনেমায় অ শ্বশুরের জানালেন, তোমার যদি প্রতিভা থাকে সেটি রুদ্ধ করার ক্ষমতা আমার নেই। রমা হয়ে গেলেন পর্দা জগতের সুচিত্রা সেন। উত্তম-সুচিত্রা জুটি সিনেমা সুপার হিট। সুচিত্রা সেনকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।প্রথম সিনেমা ‘সাড়ে চুয়াত্তুর’ সুপারহিট । পরিচালক নির্মল দে’র মধ্যে টান টান উত্তেজনা ১৯৫৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারীতে।
এরপর সুচিত্রা সেন অভিনিত ছবি একটাও ফ্লপ করেছে বলে জানা নেই। তিনি হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহা নায়িকা আর উত্তম কুমার মহা নায়ক।
আজ ১৭ জানুয়ারী সুচিত্রা সেনের ৬ষ্ঠ মৃত্যু দিবস । পাবনা শহরের জেলা প্রশাসন ও সাংষ্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে দিনটি পালন করলো। পাবনা জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরুতে সুচিত্রা সেনের শহরের হেম সাগর লেনের পৈত্রিক বসত বাড়িতে নির্মিত সুচিত্রা সেনের ভাষ্কর্যের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মীরা।
১৭ জানুয়ারী ,২০২০ সকাল সাড়ে ৯ টায় সুচিত্রা সেনের কৈশোরে স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে তাঁর আমন্ত্রিত অতিথিরা ব্যানার নিয়ে স্মরণ র্যালী বের করেন। র্যালীটি শহর প্রদক্ষিণ করে সুচিত্রা সেনের কিশোর বয়সের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টাউন গালর্স হাই স্কুল ( পূর্বের মহাকালি বিদ্যালায়) প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। এখানে অনুষ্ঠিত সুচিত্রা সেনের উপর স্মরণ আলোচনা সভায় পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহামুদ সভাপতিত্ব করেন। স্মৃতি চারণ আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সরকারী এডওয়ার্ড কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান প্রফেসর ড. কামরুজ্জামান, পাবনা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিমা আক্তার, শিক্ষাবিদ, গবেষক , প্রফেসর মনোয়ার হোসেন জাহেদী, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি, সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মতীন খান ।
আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় সুচিত্রাসেন অভিনিত বিভিন্ন চলচ্চিত্রের গানের অনুষ্ঠান। গান পরিবেশন করেন ক্লোজাপ তারাকা বিউটি আক্তার মুক্তা। বিকেলে মহানায়িকার বসতবাড়ি স্মৃতি সংগ্রহশালায় প্রদর্শিত হয় সুচিত্রা উত্তম অভিনিত বাংলা ছবি।
এদিকে , সকালে পাবনা প্রেসক্লাবে সুচিত্রা সেন স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সহকারী হাই কমিশনার সঞ্জিব কুমার ভাট্টি, বিশেষ অতিথি ছিলেন. পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস(পুলিশ সুপার পদোন্নতি প্রাপ্ত), পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, চেম্বারের সিনি: সহ-সভাপতি আলী মর্তুজা সনি বিশ্বাস, বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার উপস্থাপক শামীম চৌধুরী । সভাপতিত্ব করেন , সুচিত্রা সেন স্মরণ পরিষদের সভাপতি, পাবনা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক এম. সাইদুল হক চুন্নু । ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার সঞ্জিব ভাটি বলেন, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র এবং সকল ক্ষেত্রে সৌহার্দ্য বিদ্যমান রয়েছে ।