আমার আনন্দ
আমার আনন্দ যেখানে যেখানে আছে
তুমিও আছো সেখানে সেখানে
এই যে ডানা মেলা রোদের সকাল, খুব ভালোবাসি!
‘সুপ্রভাত’ বলে ওড়াই আকাশে রোজ শান্তির পায়রা
ভোরের নদীটি যখন চোখ তুলে ডাকে
আমি তখন সাঁতারের গল্পে খুঁজি প্রিয় ছেলেবেলা
বৃক্ষের সবুজে যে মায়া লুকিয়ে আছে
সফেদ বক্ষবন্ধনী তার কিছুই জানে না!
এই যে শস্যভারানত মাঠ
গমকে গমকে যৌবনকে সত্যি করে তোলে!
আমার আনন্দ যেখানে যেখানে আছে
তুমিও আছো সেখানে সেখানে
এই যে ভাঁট-গুল্মে ঝুলে থাকা কর্ণকুসুম
তোমাকে মানাবে বেশ!
হাত বাড়াও, অনামিকা হেসে ওঠে রোদের ঝিলিকে
গোপন ঘুঙুরে বাজে আলতারাঙা পা
কী দীঘল কেশ ছড়িয়ে পড়ে ধূসর দিগন্তে
এই যে জ্যোৎস্নাগলা রাত, ভালোবাসি, ভালোবাসি
মৎস্য যেমন ভুল লাফে ডাঙায় ওঠে তড়পায়
তোমার সৌন্দর্যে আমিও গুনি ভুলের মাশুল!
আমার আনন্দ যেখানে যেখানে আছে
তুমিও আছো সেখানে সেখানে
এই যে হেমন্তের ফসলতোলা মাঠ
শূন্যতার চিত্রকল্পে কাকে দূরে ঠেলে দেয়!
শরতের কাশের গুচ্ছে খেলা করে মৃত্যুলেখা
তবু আমি খুঁজে ফিরি প্রান্তরের ডাক
ইলিশা ঘাটে যদি জাহাজের ভেঁপু বেজে ওঠে
তবে আমি প্রেমের তীর্থগামী যাত্রী!
জীবন-জীবন বলে গান ধরি মহামিলনের
উদাস বাউলা মন ত্যাগ করে কুসুমশয্যা!
আমার আনন্দ যেখানে যেখানে আছে
তুমিও আছো সেখানে সেখানে!
স্যানাটোরিয়াম
দুঃস্বপ্নকে রেখে আসি স্যানাটোরিয়ামে, ভালো হোক!
ভালোয় ভালোয় তবে ছড়াক অশেষ আলো।
কতদিন স্বপ্নেরা গৃহবন্দি! পুষ্পঘ্রাণেও যে
ভর করে ভয়! এই বুঝি দৃশ্যপটে নেমে এলো
ভীতিকর সেই দত্যি! দেখি না তো, টের পাই
খুব... শীতেরা বাড়ায় দুঃখ দিগদিগন্তরে...
যতবার পৃথিবীকে শান্ত হতে বলি, ততবার
মৃত্যু এসে লিখে যায় নাম! মৃত্যু শব্দটি কি
জীবনের বিপ্রতীপে সাপলুডু খেলে যাবে
আরও আরও দীর্ঘতর কাল? হে প্রভু, প্রাণান্ত
চাই আমি উদয়াস্ত আলোর সকাল। তোমার
পৃথিবী আজ আর্ত, ভারি কাতরাচ্ছে যন্ত্রণায়;
এবার তো শুশ্রুষায় দেহ আর হৃদয়টা জাগুক!
দুঃস্বপ্নকে রেখে আসি স্যানাটোরিয়ামে, ভালো হোক!
রক্তকাঞ্চন : রূপকের আড়ালে
মৃদু গুঞ্জনে পুষ্পকাননে
ডানা মেলে শ্বেতশুভ্র মন
তোমারই নামে মধুসঞ্চয় করি
নাম দিই প্রিয় রক্তকাঞ্চন!
আহা! কী বাহার! জ্বলে ওঠে ঠোঁট
রঙের ছোঁয়ায়...
অধরে অধর লেখে হৃদয়লিপি
আঙুলে ফোটাই প্রেম-পারিজাত
বিরহ তো দূর দীপশিখা জানি!
প্রতিবেশী রোদ
এসো, কাঞ্চন-রঙে ধুয়ে দিই
শরীরসমগ্র
যুগল পুষ্প থেকে উড়ে যাক
মধুমক্ষিকা
ছড়িয়ে পড়ুক সহস্র গুঞ্জনমালা
অহেতু কেন ঘরে ফিরে যাবো?
কিন্তু ঘরে তো ফেরা চাই!
প্রগাঢ় প্রেমে তোমার ঠোঁটে
এঁকে দিই রক্তকাঞ্চন
সন্ধ্যারাগে বলে উঠি :
আমাকে গ্রহণ করো ইশারা-ভাষায়
হে রক্তকাঞ্চন, দেখেছি তোমার দেহবিভা-রং!
মর্মচেরা অতীত থেকে উত্থিত
গল্পে গল্পে ছড়িয়ে দিলাম রং
ইচ্ছেমতো কুড়াতে পারো
উড়ছে হলুদ পত্রালি
পাখিসূত্রে ডানার উড়াল
আহা বসন্ত, মর্মচেরা অতীত
কী দ্রুত ডুবে গেল পরাবাস্তবে!
জ্বর যেমন কোনো রোগের উপসর্গ
তেমনি তোমার উষ্ণতাও!
শামসিয়া হাসানি জানেন কী করে
স্বপ্ন ডুবে যায় আমু দরিয়ায়
রঙের সমুদ্র হয়ে ওঠে মৃত্যুর রূপক
শুশুকের মতো জানালায় উঁকি দেয়
অগণন গ্রাফিতি
চুইয়ে পড়ছে রক্ত
ক্যানভাসে রক্তলেখা
তুলি ও পেন্সিল কাঁদছে
রোদ পড়ে আসছে এবার
স্যানাটোরিয়ামে উষ্ণতা জমা রেখে
আজ ফিরে যেতে চাই নিজস্ব ভূগোলে
কিন্তু বারবার কে আমাকে ডাকে?
কিয়েভের ত্রস্ত জনপদ
কী দ্রুত হয়ে ওঠে হৃদয়ের শিরা-উপশিরা!
গহিন মধ্যরাত, ঘুম নেই
আমার নিদ্রাসমগ্র কেড়ে নিচ্ছে কারা?
নাৎসি হিটলার তো দূরনগরের বাসিন্দা
রক্তচক্ষু পুতিন, কিছু একটা বলো
দেখতে দেখতে বুক ডুবে যাচ্ছে
অন্ধকারে...
মশালটা জ্বলুক এবার
হৃদয়ের বর্ণমালা যদি পড়ে নেওয়া যায়!
যেতে চাইলেই কি যাওয়া যায়?
যেতে চাইলেই কি যাওয়া যায়? না! যেন
সঙ্গোপনে বাঁধা থাকে মন; চন্দ্রফোটা রাত
কিছুটা তো জানে ঠোঁট ও চিবুক; অস্ফুট
ভাষায় লেখা হয় যদি কোনো গোপন কবিতা!
বসন্তের বিদায়দিবসে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ টেনে আনে
দূর বাতাসের গান; আহা! বোলপুর!
সারবাঁধা কুরচিবন থেকে কে কুড়ায় শান্ত
সমাহিত প্রেম? পুষ্পগন্ধময় স্মৃতিসূত্রে এলেন
ঠাকুর; বসিলাম মুখোমুখি, এক দুরন্ত রোদ্দুর
সাইকেলে চেপে পাড়ি দেয় শালপিয়ালের বন
মহুয়ার ঘ্রাণে জেগে ওঠা সাঁওতালি নারী
হৃদয় বাজায় খুব অচিন ঘুঙুরে! বলেছি তো
আমি আর যাবো না কোত্থাও! যাবো কেন?
যেতে চাইলেই কি যাওয়া যায়? না! যেন...