অনুভবে বৈশাখ
প্রান্তিক প্রান্তর শুন্য মোষের ডেরা
নিহত নদীর কাফনে ব্যস্ত শকুন,বোবা মুখ রাষ্ট্রসভা
ভাঙ্গা বাঁশি, উদলা রাখাল,ফিঙ্গে-দোয়েলের শূন্য চারণ
মহারাজ,কি দিয়ে সাজাই যমুনায় ফারাক্কা।
এখানে বারোমাস উদবাস্তু আসে জননী কারখানা
সৈকত তটে বাৎসায়নের দালান গড়েঃ সাগর দেখিনা
বিদ্যুৎরূপি বৃষ্টি, বিদ্যুৎ -বৃষ্টি যায় আসে না
ব্যস্ততায় যায় দিন কিস্তি চিন্তায়, চৈত্র-বৈশাখ বুঝিনা
সম্রাট আকবর তোমাদের বাঙ্গালি করেছে?
আমি দ্রাবিড়া।
হাভাতের দেশে রোদ-বৃষ্টি অনন্ত জামা অঙ্গের শোভা
আজ তোমাদের বাঙলায়ন অত:পর
প্রতিদিন বৈশাখ কৃষাণীর আয়োজন।
২
বহুদিন মঙ্গায় কেটেছে মন,তারপর
সারারাত বদরপীরের দরগায় শিন্নী মানতের আয়োজন
পাড়ায় পাড়ায় গিরমীতিতা ছৈয়ের দানা ভাঁজে
সোনা-রূপা আম-শরাতি ছোঁয়া
রোদে পোড়া দুরন্ত কিশোরী আলতা পায়ে বনফুল সাঁজে।
কৃষক বুঝে মৃত্তিকা রজঃস্বলা উত্তেজনায় আকাশ কাঁপে
মাঠে মাঠে উন্মুখ যোনিদ্বার শামুকের প্রার্থনা
মাঠি ও মেঘের সঙ্গমে আইল বাঁধে কৃষক
শাহ ওমরের বিছানো গিলাবে
বৈশাখ নীশিতে তৃষিতার বিবাহ বাসর।
৩
খসে পড়ে ময়ূর পালক ঝাউবীতি নিরব
সমুদ্রের উত্তেজনা সৈকতে বসে সভ্যতার বাজার
বালিয়াড়ি ভাটফুল লাল কাঁকড়া লজ্জায় মুখ ঢাকে।
দু'শ বছর বেশি নয়,তবুও পুরান উপনিবেশে এ নগর
শৈল সাগর সঙ্গমে দ্রাবিড়ার সন্তানের কৃষাণ জীবন
রাসতিথি কেড়ে নেয় নব্য মোগলরাজ
আমরা এখনো দ্রাবিড়ার উত্তারাধিকার।
লোনা জলে ডুবে স্বপ্নে উপনিবেশ বৃক্ষের বুকচিরে
আজ সন্ধ্যায় কবিতার দেহ নির্মাণ এপার ওপার।
ইথারে ভেসে আসে সর্বগ্রাসী আধাঁর রঞ্জক
বৈসাবি দোল পুর্নিমা হোলি উৎসবে কর্পোরেট আয়োজন
আদিবাসী তরুণী গাইবে গান,তোতাপাখি কবিতা মিস্ত্রি
আজ তারা বাঙ্গালি হবে,সানকিতে পান্তা-ইলিশ পসরা সাঁজ
আমি খুব ঘুমাবো,বহুদিন ক্লান্ত ছিলাম।
অনার্য বৈশাখ
উদীপ্ত ভোর উদাসীন মন
ফুরফুরে হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো ঘ্রাণ
শোণিতে নাচন দোলা সখির উম্মাদনায়
চলো জ্বরা গ্লানি ধুইয়েনি সাগর জলে।
ঝাউবীথির রূপকথা নেই ভাট ফুল হাসিতে
বিপরীত ঘূর্ণিবায়ুর বালিয়াড়িতে মেলে ধরো আঁচল
আজ সন্ধ্যায় অশ্বত্থ তলে বাউল গানের আসরে
মেঘের অর্জনে ভিজি পরম আমোদে।
বৈশাখে ভেসে যাবে সাম্প্রদায়িক ভেদরেখা
অনার্য দুটি হাত রাখি বাঁধে অফুরান প্রার্থনা।
চৈত্রসংক্রান্তি
নিঃসঙ্গ চৈত্রসংক্রান্তিতে গুমোট উত্তাপে
ছটপটানির তীব্রতায় কামশীলতা শীতল
দারুন ঝলকে আচমকা হুংকারে
মেঘাকাশে কৃষ্ণপক্ষের প্রভাতে
মুহুর্তে প্রবল উশৃঙ্কলে বৃষ্টির প্রপাতে
জেগে উঠে তনুমন শোণিতে উচ্ছল জোয়ার।
উচ্ছল ঢেউয়ের খরায় গোঙানির প্রবল চিৎকার
আমি বাৎসায়নের অব্যক্ত আহবানে
আমাকে ধাবিত করে অতিপ্রাকৃত শ্রাবণকূপ
সসমান্তরাল জল-মোহনা ছলাচ্ছল
সুরব্যঞ্জনার বাঁকে ক্ষুধিয়ার কুম।
চরাচরে মাতম উঠে জল-ফলের
জলরেণুর তীব্রতায় পরাগায়নের ক্ষণ
মাধ্যাকর্ষণের কামার্থ যোজন।
আমাদের প্রতীক্ষা হাজার বছর
জলনৃত্যে জল-জোছনায়
উচ্ছল প্রহরে উৎসব ধ্বনি
ভেজা সংক্রান্তির ক্লান্ত চৈত্রে।
বৈশাখী কথাটুকু রাখো
চৈত্রসংক্রান্তিতে বেশ ক'টি প্রজ্ঞাপন পেলাম,স্বাক্ষরিত প্যাডে
তোর সাথে এমন অফিস মার্কা ভালোবাসার লেনদেন ছিলো না
কোনকাল
প্রতিবছর সংক্রান্তির নেমন্তন্ন করতি,পেটভরে খেতাম
যা থাকতো নগদ,তা নিয়ে, বেশ আহ্লাদী হতি
এবার এমন করলি ক্যান,ভেবে কুলহারা হই
আমার লেনাদেনা হয়না যথা সময়
তবুও তোকে নিরাশ করিনি কোনো কাল।
এমোন হোস ক্যান লক্ষী
তোর দেনা পরিশোধ না করে কই যাই
বিন্নিভাতের রস পানে জ্বরায় জ্বরায় ক্ষয়ে
মরিয়া প্রমাণ করি আমি তোমাদেরি লোক।
২
বৈশাখী জল হাওয়ার আগাম খবর জেনেছি
পহেলা তিথি তেই প্রচন্ড খরতাপ হবে
সম্ভবত চল্লিশ থেকে পয়তাল্লিশ ডিগ্রী
তাপমাত্রা বাড়তে পারে,তাই ঘরে বসেই
জল শরতি ও তিতা শাক এর খাবার
বেল ও তেতুল শরবত রাখতে হবে সাথে।
কোথাও যেওনা, নতুন রঙের উচ্ছলতায়
চর্মরোগের উপদ্রব হতে পারে
দেহ ত্বক ঠিক রাখার জন্যে
বাহারি রঙের মার্কিনী শাড়ি নিও না আর
"আল্লাহ মেঘ দে পানি দে"
প্রার্থনা গীত গাইবো পেটান শাহ'র দরগায়
বাড়ির দাওয়ায় বসে
তোকে নিয়ে মালকা বানু'র হঁলা গাইবো
পদ্মাবতী পুথি শোনাবো।
বৈশাখের রুদ্ররোষে তুই থাক নিরাপদে
সুখ শান্তিতে নিবিড় যাপনে
মঙ্গল হোক সকলের, এই আরাধনা
বৈশাখীরে,
উৎসব পালা পার্বণ এখন আর আমাদের নাই
নাগরদোলা, বিন্নি ধানের খই,রসো গোল্লা
ভেঁপু, তাল পাতার বাঁশি পাখা সব,সবি
কর্পোরেট শুকর ও বিজ্ঞাপনের দখলে
সখিরে এ কথা টুকু বুঝ।