আবদুল হাসিব
আমরা বাংলাদেশের বাঙালিরা চাই, স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকার সবসময় ক্ষমতায় থাকুক। এবং আসন্ন দিনেও আসুক। আর যেন এই দেশটা স্বাধীনতা বিরোধীদের দখলে না যায়।
স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে ভুল করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রায় সকলকে আমরা হারাই নি শুধু; আমরা তার মাসুল দিয়েছি --সুদীর্ঘ দিবস-রজনীব্যাপী --অসংখ্য বুকের তপ্ত তাজা শোণিত দিয়ে, ঘাম দিয়ে, শ্রম দিয়ে, অর্থ দিয়ে। আর আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনিও আরো একটি মারাত্নক ভুল করলেন। যাদেরকে দিয়ে কোন দিনই সমাজ ও রাষ্ট্রের অনিষ্ট-অমঙ্গল আর ঝঞ্জাল ছাড়া সামান্যতম সুফল হয়নি; এমন সকল সংগঠন আর প্রতিষ্টানকে প্রশ্রয় দিয়ে আবারও এই দুঃখী বাঙ্গালির ললাটে লিখে দিচ্ছেন কলঙ্ক টিকা।
ক্ষমতায় ঠিকে থাকার জন্য মাদ্রাসা আর মুল্লা-মুসল্লিদেরকে আপনি যে ভাবে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়েছেন, তার প্রতিফলের কথা শুরুতে বলেছি, এখনো বলছি ,--আপনাকে এবং আমাদেরকে আসন্ন দিনে তার জন্য বিরাট মাসুল দিতে হবে।
আনুগ্রহ করে আপনি একটু গভীরে গিয়ে চিন্তা করে দেখুন, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান মিলে ত্রিশ লক্ষ শহীদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে এবং দু'লক্ষ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা যে ধর্মনিরপেক্ষ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ পেয়েছিলাম; তা আজ ধর্মীয় রাষ্ট্রে (ইসলামি রাষ্ট্রে) পরিণত করার ভয়ঙ্কর পায়তারা চলছে। এবং জেনে রাখবেন, তার জন্য আমাদেরকে আবার লড়াই করতে হবে। লড়াই করতে হবে আমাদের ভাষা, আমাদের শিক্ষা, আমাদের হাজার বছরের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে। সর্বোপরি, লড়াই করতে হবে আমরা আমাদের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখবার তীব্র প্রয়োজনে। অথচ, এমন লড়াই অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। জেনে রাখবেন, আমরা বাঙালি কোনদিনই মুল্লাতন্ত্রের তালেবাবাণী রাষ্ট্র প্রত্যাশা করি না এবংকরবোও না।
আমরা দেখছি, গেল বছর তিনেক ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় সারা দেশব্যাপী ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা মাদ্রাসা থেকে দেশ ও জাতির জন্য শক্ত মজবুত একটা অনাকাঙ্খিত জঠিল সমস্যার যাত্রা শুরু হচ্ছে। যার শেষ নিস্পত্তি হবে বড় একটা গৃহযুদ্ধের ভেতর দিয়ে, দীগল রক্তাক্ত পথ পার হয়ে। আর তার জন্য আবারও হাজার হাজার মায়ের বুক খালি হবে, অগণিত মহিলা বিধবা হবে, অজস্র তরুণ-তরুণীর প্রাণ বিনষ্ট হবে --কেবল মাত্রধর্মীয় গুরুদের যার যার আসনে অধিষ্টিত থাকার প্রয়োজনে। এবং ধর্মীয় চক্রান্তের উস্কানীমূলক আহ্বানে। সুতরাং, সচেতন ও বিবেকবান নাগরিকরা এখনই সোচ্চার না হলে, নিশ্চিত থাকবেন সমস্যা কঠিন থেকে আরো জঠিলতর হবে।
যে
সকল প্রতিষ্ঠানে,—
জাতিতে জাতিতে হানাহানি, ধর্মে
ধর্মে বিদ্বেষ, হিংসা-বৈষম্য, বিবাদ-বিশৃঙ্খলা, বহু
দলে বিভক্তি-বিভাজন, জান্নাতের গৃহ ক্রয়ের কৌশল, হুরদের
(অপ্সরী বা সুরসুন্দরীদের) দৃষ্টিনন্দন দেহসৌষ্ঠব ও নিরন্তর কুমারীত্বের উত্তেজক
বিশ্লেষণ, আর তার রতিক্রিয়ার স্থায়ীত্বের লালাসিক্ত লোভাতুর বর্ণনা ছাড়া
আর্থ-সামাজিক অবস্থার বাস্তবধর্মী কোন শিক্ষা দেওয়া হয় না; এবং
সেই শিক্ষা দেওয়ার মতো মেধা-বুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষকও সেখানে নেই। অথচ, রাষ্ট্রীয়
পৃষ্টপোষকতায় এসকল সারশূণ্য প্রতিষ্ঠান প্রবল বেগে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং সেই সকল
প্রতিষ্টানের উৎপাদিত জনগুষ্টি বা বস্তুগুলো আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্রের অমঙ্গল
ছাড়াভালো কোন কাজে লাগতে পারছে না; পারার
কথাও নয় !
উন্নত
বিশ্ব যখন আলোর দিকে ধাবমান;
আমরা তখন অন্ধ গুহার
দিকে প্রবাহমান।
হায়রে
বিদাতা কি লিখিলে আমাদের ভালে,
আর কতো আটকায়ে রাখবি
ধর্মের ধূম্রজালে।
আশা করি, বাংলার জাগ্রত জনতা আবার সোচ্চার হবেন এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন, আন্দোলন গড়ে তুলবেন।আমরা আশাবাদী, বরাবরের মতো আপনাদের সমর্থন ও অংশগ্রহণ থাকবে আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর-শান্ত, নির্মল-নিরাপদ নিবাসযোগ্য একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলার পক্ষে। এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার্থে।
সেন্ট-ল্যোরান্ট নদীর তীর থেকে, মন্ট্রিয়ল, কানাডা
১১ মার্চ ২০১৯ ইংরেজি।