বিশ্বঘুরে কোটি মানুষের মন জয় করে গিটার লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু এবার ফিরছেন মায়ের কোলে। পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার শেষ ঠিকানা হচ্ছে চট্টগ্রামের এনায়েত বাজার পারিবারিক কবরস্থানে, মায়ের কবরের পাশে। এ বুঝি সুরের জাদুকরের শৈশবে ফেরা। কারণ, এই এনায়েত বাজারেই তার জন্ম আর বেড়ে ওঠা।
১৮ অক্টোবর দুপুরে পারিবারিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেন পরিবারের সদস্যরাসহ
বামবা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী
বন্যা মির্জা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জানাজা ও শহীদ মিনারে নেওয়ার
বিষয়ে বেশ কয়েকবার সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে নানা কারণে। তবে সর্বসম্মতিক্রমে
সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো, কাল ১৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় সর্বসাধারণের
শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় শহীদ
মিনার প্রাঙ্গণে। সেখান থেকে জুমার নামাজের সময় নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় ঈদগাহ
মাঠে। বাদজুমা প্রথম জানাজা শেষে মরদেহ রাখা হবে স্কয়ার হাসপাতালের
হিমঘরে।
একই দিন রাতে অস্ট্রেলিয়া থেকে আইয়ুব বাচ্চুর মেয়ে রাজকন্যা
ঢাকায় পৌঁছালে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে চট্টগ্রামের এনায়েত বাজারে। ধারণা করা
হচ্ছে, ২০ অক্টোবর সকাল নাগাদ আরেকটি জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে
মায়ের কবরেই সমাহিত করা হবে আইয়ুব বাচ্চুকে।
আজ (১৮ অক্টোবর) বেলা সাড়ে
১১টায় ড. মির্জা নাজিম উদ্দিন স্কয়ার হাসপাতালে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন,
‘সকাল সাড়ে ৮টায় আইয়ুব বাচ্চুকে বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তার ড্রাইভার আমাদের
হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আমরা তাকে মৃত অবস্থাতেই পাই। তারপরও ১৫ থেকে ২০
মিনিট চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। পরে ৯টা ৫৫ মিনিটে তাকে আমরা মৃত ঘোষণা করি।’
ড.
মির্জা নাজিম উদ্দিন আরও জানান, আইয়ুব বাচ্চু বহুদিন হৃদরোগে ভুগছিলেন। ২
সপ্তাহ আগেও তিনি চেকআপ করিয়ে গেছেন। এর আগে ২০০৯ সালে তার হার্টে রিং
পরানো হয়। আর ২০১২ সালে ফুসফুসে পানি জমার কারণে এই হাসপাতালেই চিকিৎসা
নিতে হয়েছিল আইয়ুব বাচ্চুকে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ১৬ অক্টোবর রাতে
রংপুরে একটি কনসার্ট শেষ করে ১৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকায় ফিরেন আইয়ুব বাচ্চু।
আজ (১৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাসায় হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি।
তড়িঘড়ি তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
দেশের শীর্ষস্থানীয়
ব্যান্ড এলআরবি’র দলনেতা আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট,
গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক। গিটারের জাদুকর হিসেবে আলাদা সুনাম ছিল
তার। ভক্তদের কাছে তিনি ‘এবি’ নামেও পরিচিত। আইয়ুব বাচ্চুর নিজের একটি
স্টুডিও আছে। ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত এই মিউজিক স্টুডিওটির নাম এবি কিচেন।
১৯৬২
সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৮ সালে
ফিলিংস ব্যান্ডের মাধ্যমে সঙ্গীত জগতে তার পথচলা শুরু হয়। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০
সাল পর্যন্ত সোলস ব্যান্ডে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯১
সালে এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন আইয়ুব বাচ্চু। এর প্রথম অ্যালবাম ‘এলআরবি’
বাজারে আসে ১৯৯২ সালে। এটাই দেশের প্রথম ডাবল অ্যালবাম। এলআরবি’র অন্য
অ্যালবামগুলো হলো ‘সুখ’ (১৯৯৩), ‘তবুও’ (১৯৯৪), ‘ঘুমন্ত শহরে’ (১৯৯৫),
‘ফেরারি মন’ (১৯৯৬), ‘স্বপ্ন’ (১৯৯৬), ‘আমাদের বিস্ময়’ (১৯৯৮), ‘স্পর্শ’
(২০০৮), ‘যুদ্ধ’ (২০১২) এবং সর্বশেষ ‘রাখে আল্লা মারে কে’ (২০১৬) ।
১৯৮৬
সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ হলো তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। তার
সাফল্যের শুরুটা হয় দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’র (১৯৮৮) মাধ্যমে। ১৯৯৫
সালে বাজারে আসে তার তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। এর প্রায় সবক’টি গানই
জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক
হৃদয়’, ‘আমিও মানুষ’ গানগুলো। তার অন্য একক অ্যালবামগুলো হলো ‘সময়’
(১৯৯৮), ‘একা’ (১৯৯৯), ‘প্রেম তুমি কি’ (২০০২), ‘দুটি মন’ (২০০২), ‘কাফেলা’
(২০০২), ‘রিমঝিম বৃষ্টি’ (২০০৮), ‘বলিনি কখনো’ (২০০৯), ‘জীবনের গল্প’
(২০১৫)।
আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘চলো বদলে
যাই’। এর কথা ও সুর তারই। শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকায় আরও রয়েছে ‘শেষ চিঠি
কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘হকার’, ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রুপালি
গিটার’, ‘গতকাল রাতে’, ‘তারা ভরা রাতে’, ‘এখন অনেক রাত’ ইত্যাদি।
রক
ঘরানার গানের এই শিল্পী আধুনিক আর লোকগীতিতেও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। বেশ
কিছু চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান
‘লুটতরাজ’ ছবির ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’। এছাড়া ‘আম্মাজান’ ছবির
শিরোনাম গানও জনপ্রিয়।