চৌক্ষে তর বিলাই মুতিছে
কেমুন মাস্টর তুমি? হারাদিন কলেজোত্ কবিতা পড়াও
বুজো না কী কয় কবি আড়েঠাড়ে, বুজো না গুপন ইশারাও।
হুদা মিছা ভাব খাও, নড়ো না ডাইন বাঁও চিনো মরা লাশের অক্ষর
জান না কি পর্তিমার খেড় ভরা খাঁচা দেওতার আত্মা ছাড়া ঘর?
পাতার আউলিত্ বাজে নুইজ্জাবতী বুলবুলির, বেচৈন অন্তর।
শরমে মরমে মরি, বানানে কি ব্যাকারণে ধরো যুদি ভুল!
তাও আহি, চায়া থাহি, পাষাণ চরণে থুই অক্তজবা ফুল!
কলেজ চিনি না আমি, ঝরে খালি কইলজা ছ্যাঁচা নউ
শিকাত্ উঠিছে বিদ্যা, উড়ুউড়ু মুনডা হাজে বউ।
তুমি যুদি ফরফাদ, আমি হই কফালপুড়া শিরি
তুমার দুয়ারো খাড়া এক চিমটি দয়ার ভিখিরি।
দ্যাহো না মাস্টর হায়, পর্জাপতি কাইন্দা যায়, মর্মে মরে চোক্ষের কবিতা
জানি হুদা ডরে কাঁফো, মান-সর্মান মাফো, উট্তে বইতে ধরো লাম্বা গজ-ফিতা।
সুহাগে বাজানে কয়, ওরে আল্লা, বাগে মোর গুলাপ ফুটিছে
তুমি আন্ধা, মুরুক্ষু, কানা, চৌক্ষে তর বিলাই মুতিছে!
* দক্ষিণ জামালপুরের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা কবিতা।
শব্দার্থ: আড়েঠাড়ে>ইশারা ইঙ্গিতে; পর্তিমার>প্রতিমার; খেড় ভরা খাঁচা>খড়ের কাঠামো, কঙ্কাল; দেওতার>দেবতার; আউলিত্>আড়ালে; তাও আহি>তবু আসি; অক্তজবা>রক্তজবা; ছ্যাঁচা>থ্যাতলানো; নউ>রক্ত, লোহু>লউ>নউ; মুনডা>মনটা; হাজে>সাজে; ফরফাদ>ফরহাদ; দ্যাহো না>দেখ না; পর্জাপতি>প্রজাপতি; কাঁফো>কাঁপো; মাফো>মাপো; লাম্বা> লম্বা; নুইজ্জা>লজ্জা; বেচৈন>অস্থির; সুহাগে> সোহাগে, আদর করে; তর>তোর।
তাৎক্ষণিক
তারাদের ইশকুলের প্রবীন মাস্টার জীবন বাবুকে ছুটি দেবো বলে
বনলতা সেনের অধরে খুঁজি তপ্ত চায়ের পেয়ালা
চুবিয়ে এনার্জি বিস্কিট ছেঁকে তুলি জীবন্ত চুম্বন
আর, ক্ষণিকের প্রেয়সীকে ডেকে বলি, হাই! গুড ইভিনিং।
হাজার বছর দূর, পৃথিবীর পথে আমি হাঁটবো না
একটিও পূর্ণ জীবন, সঙ্গ দেবে শুধু ঘণ্টা দুই।
যতটুকু পারো সুখ দাও, তারপর চলে যাবো দু’জন দু’দিকে
বুঝে নিয়ে যার যার উষ্ণ বিনিময়। থাকবে না সন্ধ্যার শরীরী ঘ্রাণটুকু।
সবুজ ধানের দেশ মুছে দেবে অন্য কোনও নগরীর অপরূপা রাত
অন্য কোনও হয়তো স্বর্ণকেশী।
কোটের বুক পকেটে গুঁজে তাজা গোলাপের কুঁড়ি
দু’দন্ডের শান্তির চাবি তুলে দেবো জীবন বাবুর বাসি ধুতির কোচরে।
আমাদের আর দেখা হবে না কখনও।
স্মৃতি
যেদিন নীরবে নতমুখে খুব কাছে এলে
ঘাম মুছবার ছলে
আমি নাকে ছুঁয়েছি আঙুল
আলতো সে আঙুলের পেলব পালকে
তুমি কী লাজুক লতা ভেতরে ভেতরে
গলে গলে কুলকুল হয়েছো তরল
সে আমার প্রথম বিস্ময়।
নাবাল জমিন নয়া জলে মাখামাখি
গলিত মিহিন সোঁদা কাদার কৌশলে
নুয়ে পড়ে বলবান লাঙ্গলের ফালে
শিহরণে কাঁপে বুক, ধুকপুক ধুকপুক
প্রস্তুতি প্রতি রোমক‚পে
পূর্ণিমার প্রথম কটালে
রোপিত নতুন রঙ বীজের আশ্বাসে।
আনাড়ি কৃষক আমি বুক ভরা সবুজ প্রণয়।
রাতভর তোমার স্পন্দন
এমন সাহস নেই মঞ্চের সামনে গিয়ে বসি
আমি বসি সবার পেছনে, খুব চুপিচুপি দেখি
নিপুণ স্বরের কারুকাজে তুমি মঞ্চে গান গেয়ে মাতাও আসর।
আমারও পরান মাতে বিরান বাগানে ফের ঘুম ভাঙা হেনার সুঘ্রাণে।
তুমি চোখ বুজে মগ্ন, বেতারের রেকর্ডের রুমে
যেন নীলুফার
স্মৃতির গহন থেকে সহসা ওঠেন গেয়ে, ‘বিরহেই প্রেম ছিলো সত্য’...
যদি ধ্যান ভেঙে উদাসীন সামনে তাকাও, তবু জানি
অতো দূর থেকে তুমি কিছুতেই দেখতে পাবে না,
জানবে না রাতের তারার মতো আলো জ্বেলে কেউ
হৃদয়ে সুরের জাদু মাখেসারারাত। তরুশাখে যে দোয়েল
আনমনে উন্মোচন করে তার প্রাণের বিলাপ
সে কি জানে কোথায় কে মনে রাখে আর্ত নিবেদন?
আঁধারের বুকে কান পেতে, আমি শুনি তোমার স্পন্দন
তুমি এখনও আমাকে আর মনে রেখেছো কি?
গোপন কাঁটা
বুকের ভেতর একটি গোপন তীক্ষন কাঁটা
বিঁধছে ভীষণ ‘জোছনা ভাসা’ নীল সোনাটা।
অন্ধ মনের অচিন কোণে কী মূর্ছনা
তুলছে অধীর সুরের বীণা, কী যন্ত্রণা
দিচ্ছে মোহন দহন জ্বালা বলবো কাকে
নিঘুম আমার অষ্ট প্রহর নষ্ট চোখে কষ্ট আঁকে!
লবণ পানির বইছে নহর হায় দু’চোখে
রক্ত পলাশ, আগুন জ্বলা লাল অশোকে
পুড়ছে সবুজ, ‘নীল সময়ে’ লীন পিকাসো
গোয়োর্নিকা, ‘লাস্ট সাপারের’ অবিশ্বাসও।
সেই কাঁটাটি লুপ্ত দ্বীপের পর্ণ কুটির
থাক বিঁধে খুব সংগোপনে বিষ মাখা তীর।