মেহেদী ইকবাল । গুচ্ছ কবিতা
প্লিজ, 'শূয়োরের বাচ্চা 'বলে কাউকে গালি দেবেন না।।
আমি সারারাত ওয়াজ শুনেছি
মন্দিরে কেউ ঘন্টা বাজিয়ে ঘুম ভাঙাতে চাইছে দেবতাদের
তোমার আমার ধর্ম আলাদা
আর গায়ের রঙ
আমি হলুদ রঙের রক্ত খুঁজি আর সবুজ!
আমি একটি কাঠের হাতি দেখছি
খুব সুন্দর কারুকাজ করা হাতি!
আমি হাতির কাঠের সাথে পচে যাচ্ছি
একটা সময় হাতিটি আর থাকবে না
আমাদের কেউ কেউ গল্প হবে
তবে সে সব গল্প কেউ হয়তো শুনবে না!
হৃদপিন্ড একটি অঙ্গ মাত্র
আমরা বহু আগে হারিয়ে ফেলেছি হৃদয়
আমরা বড় হয়েছি
হৃদয় ছাড়া
আমাদের সন্তানেরা বড় হচ্ছে
হৃদয় ছাড়া!
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি
আর পাখিদের দিকে
একটা সন্ধ্যা গলে গলে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে
আমি অন্ধকারকে এখন আর ভয় পাই না!
শূকর একটি নীরিহ প্রাণী
প্লিজ, আপনারা কেউ 'শূয়োরের বাচ্চা 'বলে
কাউকে গালি দেবেন না!
ইঁদারা
কয়েকটি বেগুনি ঢেউ
দেখি হাঙরের দাঁত আর খেতে চাই স্যুপ
ডলফিন তরুণীর হাসি আর নাচ
গির্জার ঘন্টা শুনি আর ভাবি কাহিনী সকল
মহৎ পেরেকগুলো মহামূল্যবান!
দেখি সন্ধ্যা মিটিমিটি খেতে খেতে চা
চ্যালেঞ্জ করলে জানি কিছুদূরে দিন
আমাদের আছে জানি ছোট ছোট পা
দূরত্ব মাপতে গিয়ে হই দার্শনিক!
ইঁদারায় ভাসে ছবি
স্পষ্ট আর জল
বেকুব ব্যাঙেরা শুধু
লাফায় কেবলই!
সিজোফ্রেনিকেরা কেন তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে
নিজেকে বাঘ ভাবতে সবাই পছন্দ করে
তবে বাঘ হওয়া অত সহজ নয়
প্রকৃত বাঘ যে কয়েকটা আছে, থাকে তারা সুন্দরবনেই!
তবে বেড়াল ভাবলে দেখবেন ঠিক ঠিক জুটে যাবে বেশকিছু বেড়াল
ওরা আপনার সাথে সুর মিলিয়ে ডেকে উঠবে মিঁউ মিঁউ মিঁউ মিঁউ
নিজেকে কুকুর ভাবলে দেখবেন মূহুর্তে জড়ো হবে কয়েক শ ' কুকুর
ওরা লেজ নাড়িয়ে আনন্দে উঠবে ডেকে ঘেউঘেউ ঘেউঘেউ!
নিজেকে কেউ শূকর ভাবে না, কিন্তু স্বভাবে শূকর যারা
তাদের চারপাশে ঠিক ঠিক জুটে যায় জঘন্য কিছু শূকর
যারা ব্যাঙের মতো তাদের চারপাশে অবশ্যই থাকবে কিছু চমৎকার ব্যাঙ
তারা বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখলে আনন্দে ডেকে উঠবে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ!
তবে মানুষ হতে চাইলে আপনি কিন্তু কাউকে পাবেন না
প্রকৃত মানুষেরা বহু আগে ছেড়ে গেছে এই তল্লাট!
বাউলেরা কেন পথে পথে ঘুরে বেড়ায়, কিংবা সিজোফ্রেনিকেরা
কেন তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে?
এখন পাচ্ছি তার কিছু কিছু ব্যাখ্যা!
আমরা যে যার মতো কুকুর, বেড়াল আর শূকর হয়ে আছি
কেউ ব্যাঙ, কেউ সাপ কেউবা শেয়াল!
মানুষ হওয়ার কথা বলি বটে কেউ কেউ
কিন্তু ভুলেও বলি না কথা যা বলা জরুরী
কোথায় মানুষ পাবো?
না যদি থাকে হায় মানুষের সমাজ!
চোরাবালি
রাস্তাগুলো ছিঁড়ে যাচ্ছে
নামছে অচেনা রোদ আর হাওয়া
ক্ষণে ক্ষণে বদলায় আর পাঁক খায় স্রোত
উদ্বিগ্ন বেড়াল এক বসে আছে দেয়ালের উপরে!
চারপাশে কর্তিত লেজ গানের
খুঁজি ডানার ফসিল প্রাচীন সব গুহায়
এইখানে নৃত্যরত পূর্বপুরুষেরা
জানি দগদগে ক্ষতের উপর
ক্ষণে ক্ষণে উড়েছিলো নীল মাছি
এখন কেবলই মাটি! ছোপ ছোপ রক্তের দাগ
বিভক্ত ছিঁড়ে যাওয়া রাস্তাগুলোর সাথে!
যেখানে পারবো না যেতে আর
দূরত্ব আসলে সেটাই!
অচেনা অনেক নদী লুকিয়ে সবখানে
অসতর্ক কখন যে
দেবে যায় পা!
চুমুর দূরত্ব
ছায়া দেখিনি আজও
ছবিতে দেখেছি ঢের
সেইসব ছবি যা সুনির্বাচিত এবং যত্ন করে তোলা
চিরকাল আড়ালে থাকে ক্যামেরাম্যান
আর স্ক্রিপ্ট রাইটার
ক'জনইবা খুঁজতে যায় গীতিকারের নাম!
এইযে উইশ পাচ্ছি সকাল সন্ধ্যা
রাত বারোটার আগেই তাগাদা ঘুমের
আসলে তাগাদা নাকি
নাকি আমন্ত্রণ চ্যাটিং এর?
হোয়াটসআপ্ মেসেঞ্জারে কত বার্তা
মাঝে মাঝে ভিডিও কল
সবচে' জটিল আজও
আর দুর্বোধ্য মানুষের মন!
হাসি পায় কথা ভেবে পাসপোর্ট ভিসার
আর কাঁটাতার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের!
ভোর ছাড়াই শুরু হয় একটি দিনের
স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর
তবু স্বাগত গিটার!
কি লাভ দূরত্ব মেপে চুমুর?
আগ্রহী চুমুক কাপে কফির কিংবা বিয়ার
কি লাভ খুঁচিয়ে যত চিহ্ন ক্ষত না পাওয়ার?
সব ভুলে হই না উল্লসিত
নিয়ে প্রাণশক্তি অফুরান!
উদাসীনতা কিভাবে তৈরী হয়
উদাসীনতা কিভাবে তৈরী হয়
আর আবেগ? আকাংখাগুলো
সারাক্ষণ কেনইবা উড়তে চায়?
বৃষ্টি এলে আমি তাকিয়ে থাকি রাস্তার দিকে
মাপি দৈর্ঘ্য আর ভাবতে থাকি সকাল সন্ধ্যা
খুঁজি লুকোনো ধাঁধা তালুতে হাতের!
কেন যে ভুলে যাই নদীর কথা
আঙুলকে সাক্ষী রেখে কতকিছু করেছি আমি
কেন আমি অহেতুক জড়ো করি অনুশোচনাগুলো
পাইনা জবাব কোনো কেন যে কমলা পছন্দের ফল সবার!
উদাসীনতা কিভাবে তৈরী হয়
আর আবেগ? এবার এলে শীত
নখগুলো ফেলবো কেটে আমি!
ঘ্রাণশক্তি
ঘামছিলাম
আসনটি শূন্য
সূচি ঠিক রাখা চাই
আমি মাস্কের কথা বলছিলাম
একগ্লাস পানি খেয়েছিলাম
এগারোটা তিনে
আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে ধারণাতীত
ধারণাতীত আবর্জনা
এই স্কুল আমার নয়
এতো ছিদ্র
ঘ্রাণশক্তি লোপ পেয়েছে আমার!