মোখলেসুর রহমান - এর কবিতাগুচ্ছ
ফেরি করি অস্তিত্ব
আমিতো কোন কিছু নই, কোন কিছুই হতেও চাইনি
চাওয়া ও পাওয়ার মতো চাইনি কিছু
শুধুই আগুনে পোড়া দগ্ধতা চেয়েছি
শরীরের ভাঁজের কনায় আগুনের দগ্ধতা।
নিজেকে নিজের চিন্তার মগ্নতায় পেয়েছি শূন্যতা,
শুন্যতায় শুন্যের সরোবরে তোমাকে বসিয়ে
খুঁজেছি অনিবার্য পরিণতি।
এক গোলার্ধ থেকে আরেক গোলার্ধ
শুন্যতা দিয়ে দেখি আলোর প্রহর
দিগন্তে দিগন্তে বিরামহীন উত্তাল পাতাল খেলোয়াড
আলো থেকে ধার নেই কিছু আলো।
আলো দিয়ে পোড়াই আমি আমাকে
ধারন করি অন্তর প্রেমীর আগুনে।
নিজেকে বিলীন করি আলোয় আলোয়
শূন্যতার আলোয় খুঁজে খুঁজে ফেরি করি অস্তিত্ব।
সৌন্দর্য
সৌন্দর্যকে পাওয়া আর চোখের পাতায়
সুন্দর আল্পনা তুলে দিতে
এক পথ থেকে আরেক পথ
একজন থেকে আরেক জন
এক স্হান থেকে আরেক স্হান
এক মত থেকে খুঁজি বহুকাল।
যখনই যেখানে পাই কালের চিত্রপাঠ
বহুকালের অবয়বে মানবিক চিত্রশাল
পেয়ে যাই আমার সৌন্দর্য পাঠ।
গাছের পাতায় মনের পাতায় প্রকৃতির হাওয়ায়
জল মাটি পাহাড় পানি আকাশ বাতাস
দশ দিগন্তে যে দিকে চোখ যায় শুধুই অবিভূত অনুভব।
মানুষ আর মানুষ একই জাতে কতো সৌন্দর্য
কতো ভাষা কতো জ্ঞান কি আর জানি শুধুই সব সুন্দর।
আগমনে কি তুলতুলে কচি কচি সৌন্দর্য , প্রস্থানও কি সুন্দর যদি হয় সুন্দরের পূর্বাভাস।
রাসুলের বয়ানে -আল্লাহ তিনিই সৌন্দর্য এবং তিনিই তো সকল সুন্দর। আর সকল সুন্দরকে ভালোবাসেন।
খোদার সৌন্দর্যর একটি রশ্মির কারুকাজই আমার পৃথিবী
তাকওয়ার ইলম দিয়ে দেখো
বাহিরে লেবাস আর মাথায় আমামা দিলেই কি
নিজেকে শুদ্ধ মনে করো।
যেন কি মনে করো ঐশী আলোর রশ্মি
ঢুকে পড়ে হয়ে গেছে নিজের সিনায়।
অথচ তাকওয়ার ইলম দিয়ে দেখতে পাওনা
নিজের আগামী জীবন। ফেলে আসা জীবন
যেমন অতীত দিশায় আগামী কি আলোময়
আপনার -আমার।
এ কেমন দ্বৈত ও ধোঁকাবাজ
কেমন করে ভুলে যাও
তাকওয়ার আলোয় রাত দিনের নামতা
সকাল -সন্ধ্যায় আপনার দিনপঞ্জি।
কেমন তোমার কপটতায় ঘোরপাক খায়
আর পরিয়ে দাও মানুষের হৃদয়ে নেফাকের বিষ।
না ছুঁয়ে ইলমে তাকওয়া কিভাবে যেতে চাও
কিভাবে পেতে চাও আল্লাহ ও তার রাসুলের দিশারী পথ
তোমার মতো চাইলেই কি পেয়ে যাও আদিগনতের সোনালি পথ।
কি বিলাস বাসনা আর ক্লেদাকত মনন
অথচ বেশভুষায় আপনি পাককা ঈমান।
জানো জানো কেউ কারো নয়
সবই শুধু আপন কর্মে আপন মন।
দিয়াশলাই
পৃথিবীর জন্মের নামতায় যদি কাহাকে ভালোবাসি
যে আমায় শেখায় সৌন্দর্যের মালা রাশি রাশি
ভালোবাসার নিখুঁত অভিজ্ঞান দেয় আমার চেতনে
সে তো দিয়াশলাই সভ্যতার বীজ যার অনুরনণে।
দিয়াশলাই মানে আগুন, আগুন মানে মানুষ ও সভ্যতা
আগুন আলো আগুন ছাই , আগুনে থাকে জীবনের কথা।
তোমাকে জ্বলতে হবে তোমাকে পুডতে হবে
পুড়ে পুড়ে শেষ হতে হবে ছাইয়ের পরে ছাই হতে হবে
ছাইয়ের ছাই থেকে ঐ পাখির মতো ফিরে আসতে হবে
আসতে হবে ঘরে আত্মার অস্তিত্ববাদে দীক্ষায় নিরবে।
একা হলে আমি একা নই
কখনও বিনম্র উচ্চারণে অস্ফুট কথায় আমি বড় একা
আবার সময়ের প্রতিবেদনে একার মাঝে আমি একা নই
ভাবনার মিলনে ভেতরে বাস করে মগ্নতায় ছুঁয়ে থাকা সরব প্রপাত
বাতাবি লেবু , আম পাতা, জাম পাতা, কত দেখা ফল-ফুল
ঘর-দোর, পথ-ঘাট, পুকুর-জল, শ্রাবণে ভেসে আসা অথৈ জল ।
আমার ভেতর বাস করে ,সময়ের প্রবাহে রেটিনার আলোতে থাকা স্বচ্চ অবয়ব ,
আর জীবন প্রবাহে যাঁরা মায়ার বাঁধনে বেধেছে হৃদ সম্পর্কের মায়ার আকুল ,
মাঠ-জমি , ঘাস-বাস, কৃষক মজুরের লাঙ্গল কাস্তের ধবনি , আরোও আছে
বাজার-ঘাট, খেয়া-ঘাট, শহর বন্দর , কতো রকম যান আরোও শান ও মান
কতো রকম ধবনি , কতো শব্দের সম্ভার , কতো ফল ও ফসলের ঘ্রাণ ।
মক্তব - ইস্কুল , বিদ্যাপীঠ -বিশ্বপাঠ ,বেঞ্চ - ডেস্ক , চেয়ার - টেবিল, বই -খাতা
ব্লাক বো র্ড , আর কতো পাঠদাতা কতো জ্ঞানদাতা সরব প্রান্তর ।
কাছের পাশের নদী, শত শত জলের ঢেউ , জ্যোৎস্না প্লাবন
রাতের চাঁদের আলোয় আকাশ গ্রহ তারা ।
ভালোবাসায় দেখা পাওয়া সবুজ গম্ভুজ , উঁচু উঁচু মিনার ,
সু উঁচুমান সুললিত আহবানের সুর । আকাশ- মাটি -জল
সাথে মানুষের চোখ ও মুখের ধ্বনি । আমার আমিতে
আমার ভেতর শব্দ ভাঙে , শব্দ গড়ে , নাচে ভেতরে
বাস করা জানা জানা ভাষার অক্ষর সকল ।
আমার আমিতে জীবন আছে " শেষের কবিতা" হয়ে
তার মাঝে আছে সাথে ভালোবাসি যাঁকে , তাঁর ভালোবাসা পেতে
যাঁকে ভালবাসি বিনম্রতায় সেই সাথে ।
দেহঘরে আমার আমিতে বাস করে তারা সকল , একা হলে
আমি একা নই তারা আছে নিজের মতো আমার ভেতর ।