কবি : মোশাররফ মাতুব্বর
মুখোমুখি
মৃত্যুর মিছিলে যাওয়ার আগে,
শেষবার তোমার মুখোমুখি হবো,
কত ক্ষোভ জমা রাখো বুকে ঘৃণা ও রাগে।
যতটা রঙে সন্ধ্যা নামে তার অধিক জোৎস্না বিলিয়েছি তোমায়,
তার খবর কতটা জানো !
ঘরে ফেরা পাখিরা জানে,
তাদের ঠোঁটে কত চুম্বন পাঠিয়েছি তোমায়।
জন্মের ঋন মৃত্েযতে রেখে যাবো না।
আর একবার মুখোমুখি হবো
কতবার আহবানের পর জেগে উঠেছিলাম,তা মনে করিয়ে দিতে;
তারপর নিরাভরণ বৃষ্টির মুখোমুখি হবে,
সেবার তুমুল ভিজবে, ভেসে উঠবে ঘৃণার দেয়াল।
অক্ষত থেকে যাবে সব ক্ষত,
মানুষ পোড়ালে যা হয়।
আরাধ্য
পরকালের মতো অদ্ভুত কাল্পনিক মোহে
তোমাকে কখনো বাজি ধরতে পারিনা
তারচেয়ে বরং চলো ঈশ্বরের মুখোমুখি হই
ঈশ্বর কে পাঠ শেষে ঝুঁকে পড়ি প্রার্থনায়।
তোমার স্তনার্ঘ ভ্রমন শেষে ঠোঁট চূড়ায় দাঁড়িয়ে গেলেই সমগ্র মাতালতা ভর করে দেহাভ্যন্তরে।
সেখানে হুরগুলো অনেকটাই মলিন
স্বর্গের সিঁড়ি কেবলই কল্পনা মাত্র।
তোমার বাহিরে অন্যকিছু নেই
সে ঈশ্বর বলো আর স্বর্গ বলো।
তোমাকে ভালোবেসে নিজেকেই বাজির ঘোড়ার সওয়ার করে দিলাম।
নাচের মুদ্রা
তুলোর মতো ভেসে বেড়ানো মেঘ,
বাতাসে দোল খায় সাদা কাশফুল।
অতীত ঘরের জানালা দিয়ে দেখি তোর মুখ।
বাতাসের ঠোঁটে বাজে অর্গান;
শিউলি তলায় এখনো কী তোর ঠোঁটে পাতার বাঁশি (?)
স্মৃতিতে ভেসে ওঠে তুমুল বাজানো তোর বাঁশির সুর,
চাঁদের পানশালায় পায়ে বেঁধে নেই নূপুর,
নাচবো বলে, তোকে নাচাবো বলে;
অথচ তুই চাইলি ভায়োলিন!
আমি অভ্যস্থ ছিলাম না অত মাতাল সুরে।
তাই পরিযায়ী পাখির পালকে লিখে দিয়েছি নাচের মুদ্রা।
ভালোবাসারা ও আজকাল কর্পোরেট
পোশাকের আদলে বাণিজ্যিক মহড়া।
রঙিন মার্বেল উৎসব।
ফিরতি পথে পরিযায়ী পাখির দল রেখে যায় বসন্ত মুদ্রা,
আমি নেচে উঠি, রুদ্ধশ্বাসে নগ্ন পায়ে;
ওমা তোর হাতে দেখি বাঁশের বাঁশি।
ঠিক আছে বাজা, পুরানো ঠোঁটে কৈশোর।
বড্ডো বেতাল সুর,মানুষ বাজলে সুর থাকে না;
মেঘ বাজলে মাতাল হয় সব পুর।
মানুষ ও পাখি
শান্তির পেয়ালায় মানুষের রক্ত স্যুপ কতটা সুস্বাদু (?)
ততটাই হয়তো যতটা হলে আরাকান জ্বলে।
খুব তেষ্টা পেয়েছে বুঝি, কিছুটা ক্ষুধার্ত;
তবে চেটেপুটে খাও নাড়িভুঁড়ি,
মানুষের পুরো শরীর।
রক্ত স্নানে কতটা সূঁচি
কতটা পাপ মুছি;
বুকের ভেতর সহজেই বিঁধে লোভের চকচকে জিভ
ফিনকি দিয়ে ঝড়ে পড়ে অজস্র রক্ত জবা ফুল।
ধর্মের রুজু বেঁধে দিয়েছে মগজ,
তোমাদের পথ, তোমাদের মত পাঠ করিনি বলে;
আমি কী মানুষ নই (?)
আমি ও মানুষ!
পূঁজিবাদী বাজারে কম্পাস ঘঁষে ঘঁষে হিসেব কষো,
আঁকো বৈষম্যের মানচিত্র।
তাই দেখে এই পাহাড়ী ভূমির সব পশুপাখিদের ডেকে ছিলাম,
আমাদের পাশে থাকো, দীর্ঘ মিছিলে স্লোগান তুলো;
সবাই থমকে দাঁড়ালো,
শুধু পাখিরা ঘৃণা ভরে বলে উঠলো
মানুষের পাশে দাঁড়াবো নারে!
তারচেয়ে কাঁটাতারের সীমান্ত ছাড়া মুক্ত আকাশে বাঁচি।
পাপবোধ
আজ আমি ছায়া শূন্য,
ফেরার তাড়া নেই।
তুমিও একদিন জলশূন্য হবে,
তবুও ফিরতে পারবে না পুরানো শহরে,
সে-ই তোমার প্রায়শ্চিত্ত।
আমি এখন শূন্য শূন্য খেলায় যথেষ্ট পারদর্শী,
জীবন বোধ আমাকে টলাবে না, যদিও এখন টালমাটাল;
পাপ আর পাপবোধ নিয়ে যাচ্ছে আমায় জীবন থেকে বহুদূর।
'হাতপোড়ে ভাত রাঁধলে,
লাকড়ির অভাব হয়না।'