বছরের প্রথম কিংবা শেষ দিন,
বিয়ে, জন্ম, অথবা মৃত্যু বার্ষিকী?
এসবের কিছুই কোনো মানে রাখে না।
পরিযায়ী শ্রমজীবী মানুষ দিনভর রক্ত-ঘামে ললাট লিখনের মুহুরি
দিনান্তে স্নানঘরের ঝর্ণা তলায় নগ্ন শরীরের ক্লান্তিগুলো সাবানের ফেনার সাথে গড়ায় সুয়ারেজের অন্ধকার গহ্বরে।
পড়ার টেবিলে ব্যান্ডেড বা সস্তা দামের কফির ক্যাফেইন শুষে নেয় অবশিষ্ট অবসাদ
কনকনে ঠান্ডা তুষার পাত সঙ্গী হয় ব্যান্ডি,কোক, গোল্ডেন ভার্জিনিয়া তামাকের।
ইউটিউবে মির্জা গালিব, আল মাহমুদ,পাবেলো নেরুদা,জয় গোস্বামী, মোহাম্মদ ইকবাল।
তুষার পাত থেমে গেলে নিস্তব্ধ চরাচর
নিশাচর জলজ পাখিরা মেতে ওঠে বেপরোয়া ভালোবাসায়
জলপাখিদের রোমাঞ্চিত তীক্ষ্ণ শীৎকারে ভেঙে খানখান কনকনে ঠান্ডার কসমোপলিটান রজনী
বিরামহীন কর্মযজ্ঞে সমৃদ্ধ সৃজনশীলতা,
ফণা তুলে তেড়ে আসে নিঃসঙ্গতার বিষ,
মঞ্চস্থ হওয়া নতুন কাব্যের মহরতের ড্রপ স্ক্রীনে বিষাদের আল্পনা আঁকে একাকিত্বের বিষণ্নতা সিনড্রোম...
ঘুম ও ঘুম-বিষয়ক বিভ্রান্তির সমীকরণ
নির্ঘুমের বুকের উপর ঘুম নির্লিপ্ত ঘুমায়
নির্ঘুমের বুকে ঘুমের নির্লিপ্ত ঘুম অস্বাভাবিক নয়
তবে ঘুম-ঘুম ঘুমময়তা নির্ঘুম ঘুমপ্রিয় মানুষদের ঘুমহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে
এবার
ঘুম এবং ঘুম বিষয়ক বিভ্রান্তিকে নিয়ে গবেষণায় নামছে ঘুম টুলটুল চোখে সম্মুখ সমরে যুদ্ধরত একদল ঘুম-পরিশ্রান্ত সৈনিক
আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাষ্টিক মিসাইলের ঘুমন্ত পুশ বাটনে তাদের ঘুমহীন আংগুলগুলি চষে বেড়ায়
ঘুমন্ত হাইকমান্ডের নির্দেশে অগণন মানুষের চিরঘুমের অনন্তযাত্রার উৎসবে মেতে উঠবে ঘুম-পরিশ্রান্ত সৈনিকদের ঘুমহীন আংগুল
বেঁচে যাওয়া মানুষগণ কেবলই চিরকাল নির্ঘুম থেকে যাবে...
আমার কাছে কলম ছাড়া আর দামী কিছুই নেই
মহাজনী বাকি খাতার মত যতনে রাখা ক'খানি কবিতার পাণ্ডুলিপি
মন খারাপের সঙ্গ দেয়া একখানি স্প্যানিশ গীটার
পথের
বাঁকে পথ হারানোর অহল্যা এক বাউল হৃদয়
হ্যাঁ, এবং আছে আনকোরা কলাপাতা রঙ কিছু ভালোবাসা
কবিদের কলম এবং ভালোবাসা ছাড়া অন্য আর কিছুই থাকে না...
হৃদয়ের প্লাটফর্মে স্মৃতির রেলগাড়ি
শতবর্ষী ওক এবং মেপল সারির ঠিক পেছনটাতেই স্থবির সচ্ছ ময়ূরাক্ষী ঝিল,
লন্ডন হাইড পার্কের ঐদিকটা একটু অন্য রকম নান্দনিকতায় বিকশিত,
ঝিলের জলে জলকেলিতে ব্যস্ত ক'জোড়া রাজহাঁস,
রাজকীয় আয়াসে শিকার পটু পেলিক্যান তার বৃহৎ ঠোঁটের ভেতর চালান করে মস্ত একটি রেইনবো টাউট ,
পালক খসিয়ে শূণ্যে ডানা মেলে দলছুট গাং কবুতরটিও
চলচ্চিত্রের দৃশ্যপটের মত রঙিন বাস্তবতায় অবচেতন মন খোঁজে মায়ের আঁচলের ছায়া।
খুলির উনুনে সেদ্ধ হতে থাকে অভিবাসী হওয়ার গল্প,
হৃদয়ের প্লাটফর্মে চারদিক থেকে ভিড়ে স্মৃতির রেলগাড়ি,
গাড়ির বগি থেকে ধীর পায়ে নামতে থাকে সারি সারি হিজল গাছ,
হাকালুকি হাওরের স্বচ্ছ শীতল জল,
জলজীবি মানুষের চালচিত্র।
পানসি, সওদাগরী কিংবা জেলে নৌকার বহর।
অনন্য ক্ষিপ্রতায় নলখাগড়ার ডালে বসা সুন্দরী মাছরাঙার উলম্ব রেখায় ঝাঁপ।
পুটিমাছ মুখে বক,
পানকৌড়িদের দুরন্ত ডুব সাঁতার,
হাওর জুড়ে বালি ল্যাঞ্জা হটটিটি শামুক ভাঙা ধনেশ পানমুরগি কিংবা বেগুনী কালেমের ঝাঁক।
কাস্তে কোদালে যুবা কৃষানের আহারের সংবিধান
স্বপ্নের আকাশ সেলাই এ ব্যস্ত গার্মন্টস কিশোরী
চোখের ধারায় ঝরতে থাকে দুমড়ানো মুচড়ানো হৃদয়!
আমার বর্ণমালা অ,আ,ক,খ,
জাতীয় সংগীত,
লাল সবুজের পতাকা!
ষোলই ডিসেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারি ছাব্বিশে মার্চ!
ক্যালভিন ক্লাইন সুট ছাপিয়ে শরীর ক্রমাগত ছড়াতে থাকে বাংলার কাদামাটির সুঘ্রাণ!
চৈতন্যে বিষ ঢালে পরিযায়ী কষ্টের ফণা,
দৃশ্যগুলো জপে জপে হুঁশহারা হলে
আশ্রয় মেলে হাসপাতালের শুভ্র শয্যায়,
ওয়ার্ড রাউন্ডে এসে কর্মরত চিকিৎসক আমার দিকে তাকিয়ে বলেন;
ARE YOU FEELING OKAY YOUNG MAN?
আমি বিশুদ্ধ বাংলায় উচ্চারণ করি;
ভালো-ক্ষানিকটা ভালো...