কবি মোহাম্মদ রফিকস্বপ্নকথা /১
দু’দুটু জড়িয়ে থাকা লাশ
হয়তো ছিল মানব-মানবী,
হতে পারে পশুদম্পতির
প্রাণিজগতের যে কারোই
নিছক বান্ধব,সহমর্মি;
ছড়ানো-ছিটানো হাত ঊরু
অন্ত্রনালি পাকস্থলি ঘিলু
কংক্রিট ও ড্রেন ফুটপাথে
মাঠে দেশে দেশে তেপান্তরে;
চন্দ্রালোকে,কুয়াশাবারুদে,
ফোটে ফুল,নি:সঙ্গ একাকি,
চেনা বা অচিন, পরপারে !স্বপ্নকথা /২
এই ফুল, কোথায় জন্মাল;
পশুর ভাগাড়ে, গোরস্তানে,
গন্ধটা কেমন বিজাতীয়
রংটাওবা ঈষৎ ভুতুড়ে,
গা-ছমছম শিহরণ, যেন
অস্থির উদাস করে তোলে;
জানি, এরা জন্ম নিতে পারে,
পচাগলা হাড়মাংসস্তূপ
পচন উজিয়ে, বেশুমার
নানাঢংএ শোভিত পতাকা
বিজয়ের,কিন্তু সে যে কার,
ওই ওড়ে মৃতের মিছিল
শীর্ষে, ক্রমে পিছে ফেলে রেখে,
ইতিহাসে উড়ো পৃষ্ঠা যত
হটিয়ে ব্রহ্মাণ্ড বিলোপনে;
এই ফুল, আমিও চিনি না
কেউ কি দেখেছে কোনোকালে
খোঁজ করে আর কাজ নেই,
ফুলদানিতে, তুলে রাখা যাক,
যা-ই বলি, দু:স্বপ্নেই,ভাই
টিকে আছি, দগ্ধপ্রাকৃতিক !
স্বপ্নকথা /৩
নির্জ্ঞান নিশ্চুপ উঁইঢিঁপি,
বনান্তর পেরিয়ে পাহাড়
নদীনালা আকাশ প্রান্তর
তেপান্তর পারাবার পার
এপার ওপার পারাপার
নি:সীমের সমুদ্র সৈকত
বালু-হাওয়া-রোদ ঘরবাড়ি
ভোর-ভোর আবির ভৈরব
সাঁঝবেলা পুরিয়া ধনেশ্রী;
একটি চোখ, সে যে কার চোখ,
নিমীলিত সন্ধ্যাতারা জ্বলে,
কী মোহে যে বাঁচি, কেন মরি ,
মানুষ তো রাখে নি কিছুই
না মাঠ না বন না সাগর
উঁই,তাও হয়তো একদিন
আসবাব সামগ্রী বানাবে;
আমি যাই, আমার ভিতরে
ধ্বংস হতে হতে অকুলান
অথির চিৎকার তীরহীন;
না আমি চাই নি পরিত্রাণ,
নির্বাসন,তাও অসম্ভব !
স্বপ্নকথা /৪
একটি শব্দ কিম্বা উচ্চারণ
উতলা বাতাসে উড়ে উড়ে
যেতে যেতে, একটি কুঁড়ি,তার পাপড়ি
বালুতে ধুলোয়,একটি লয়
গায়কির কণ্ঠ হয়ে ঠোঁটে
মুক্তি পেতে,শাপে অভিশপ্ত
মানব-কাহিনি অন্ধকুপে
পচে গলে ক্ষয়ে যেতে যেতে,
যে টুকু সময় বাকি পড়ে,এই
এ কেমন নিরুদ্ধ নিয়তি,
দাঁড়িয়ে পড়তেই হয়
আত্মধ্বংস মুখোমুখি;
কী দেব উত্তর !