কবি : মো. আব্দুল হাই আলহাদী
আবেদন
ঢেঁকিতে পাড় দাওগো কন্যা আলতা মাখা পাও
চিড়ে চ্যাপ্টা সিদ্ধ ধানে একটু দেখে যাও।
সিদ্ধ আমার মনের ইচ্ছা সিদ্ধ সকল আশা
গরম জলে পুড়ে মারো একি সর্বনাশা!
ধুলোর ঝড়ে ক্ষত এ মন উড়ে বাউর ঝড়
পাড়ে পাড়ে উতলায় আগুন কাঁপি থরথর।
আর কতকাল সইব জ্বালা চাই না জীবনব্যাপী
হাত বাড়িয়ে আস কাছে হৃদয়টা দাও লেপি।
ভিক্ষা
মানুষ ছাড়া কোনো প্রাণী ভিক্ষা করে না।
ভিক্ষার থলেও নেই !
আমি মানুষ, আমি ভিক্ষুক।
দুই হাত আর বুক পেতে থলে বানাই।
চাল ডাল টাকা কড়ি অনেক পাই
তবে এসব পুরোনো ধানাইপানাই
আর ভালো লাগে না।
এবার তোমাকে চাই!
তারপর চাই ভিক্ষাবৃত্তির অবসান।
জলঘর
জলে ডুবে গেলে কেন করো ভয়
সাঁতরে সাঁতরে বেঁচে যাব আমি
বিশ্বাস রেখো মৎস্যকুমারী
দুটো ফুলকাও হবে নিশ্চয় ।
রাশিয়া কি দেবে না সাবমেরিন
উত্তাল ঢেউ, ভাসা ঝঞ্ঝাট
যুদ্ধ চাই না সাগরে শান্তি
মন পেলে দেখো ঘুচে দিব ঋণ।
হতাশার তিমি আর হাঙর
কতবার গিলে খায় প্রতিদিন
তবু বেঁচে থাকি আশাহত নয়
একটু অভয়ে বাঁধি জলঘর।
মান নির্ণয়
কাগজদলিলদস্তাবেজহীন ভালোবাসায় বহে কস্তুরীর ঘ্রাণ
সাতপাকে বাঁধা আর রেজিস্ট্রারে লিখায় পড়ে যায় মান !!
বালছাল
শোনো ওহে বিধি
শান্তির আশে, ঝগড়া নাশে
প্রেমিক পুরুষ সকল
বধে নিরবধি
বঁধূয়াকে মনে বাঁধার আশ!
বদি নাকি বধি
লিখে ভুলভাল, বলে বালছাল
হারায়েছে বোধ
এ কথা কেমনে করি বিশ্বাস!!
পারফিউম
হামলা হলো
বারুদ পোড়ার গন্ধ এলো
নাসারন্ধ্র প্রায় বন্ধ
যুদ্ধ নাকি মনের দ্বন্দ্ব
পারফিউম গায়ে কে চলিল?
বেগুন
বেগুন খাওয়াতে মর্দামী নাই!
বৌদ্ধের কাছে মিনতি
হে বৌদ্ধ, তোমায় ভালোবাসা জানাই
যদিও এসময়ে এটাও এক বড় ধানাপানাই
আমি মন খারাপ করিনে
কী হলো না কী হবে তাও ভাবিনে।
মরে গেলে কেউ তো কথা বলে না জানি
তুমিও আর দেবে না বাণী
তবুও যে বলতে ইচ্ছে করে
ওই কালো হৃদয় কন্দরে
তুমুল বিষাদের অন্ধকারে
জোসনার প্লাবন যেখানে পৌঁছে নি
সেখানেই একটু বাণী দাও
ভরাট পূর্ণিমা খানিকটা পাঠাও
পৌঁছে যাক তা মুঠো মুঠো করে
কী দরকার এতো জোসনার বন্যা ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে
হিন্দু মুসলিম একসাথে বাস
রক্তে রঙে বহে একই ইতিহাস
অসাম্প্রদায়িক চেতনার গৌরব জনপদ জুড়ে
হাসি গান স্ফূর্তি বৃষ্টি হয়ে ঝরে
সম্প্রীতির স্নেহ মায়ায় ভালোবাসা ফলে এখানে
খানিকটা জোসনা পাঠিয়ে দাও দূর রাখাইনে।
ঝাপ
চৈত মাইস্যা রোইদ-দুপুরে ঝাপ মাইরাছি ঘাট-পুকুরে
পাড় ভাঙলো কি ভাঙলো না
জানলো কি কেউ জানলো না
ওইসব এখন অতীত স্মৃতি কেউ কী তার ধার ধারে!
দারুণ কৈশোর কাইটা গ্যাছে ফুসকি দিছে যৌবন-রূপ
প্রেমের জলে দিছি ডুব
বুঝিনা তো পশ্চিম পুব
ঢেউ উইঠাছে উথাল পাথাল ভাঙে কেন নিজের বুক।