কবি : ম.কামরুল হাসান
খন্ডকথা
ট্রেন জার্নিঃ
শাটল্ থেকে সুবর্ণ~~
চট্টগ্রামের বটতলী রেল স্টেশন,কুয়াশার ভোর,
সুবর্ণ এক্সপ্রেসের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত চেয়ার সীটিং বগি;
জানালার পাশের সীটে বসা পঞ্চাষোর্ধ আবিদ রহমান।
ওপাশের ডাউন লাইনে দাড়িয়ে আছে শাটল্ ট্রেন,
দুদ্দাড় ত্বরায় উঠছে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী হুড়মুড় করে;
একটা সীটে বসে আরেকটা সীটে রাখছে নিজের ব্যাগ,
বন্ধু বান্ধবী,সতীর্থ অথবা প্রেমিক প্রেমিকা বসবে পাশে।
এমন দিন বিশ্ববিদ্যালয়কালে আবিদ রহমানেরও ছিল,
আগে এসে,নির্দিষ্ট বগিতে বসে,কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ;
নামিয়ে পাশে রেখে রোজ দখলে রাখতো একটা সীট-
প্রতিদিন ঝাউতলা থেকে উঠে বসতো রোকেয়া জামান।
হুইসেল্ দিয়ে ছাড়ে সুবর্ণ এক্সপ্রেস,ঝিকঝিক!ঝিক!
ধীর লয়ে সামনে এগোয় বগি,পাশের সীট তখনো খালি;
হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে ছুটতে এলো তরুণী,হাতে ট্রলি ব্যাগ-
উপরে রেখেই বসে যায় সীটে নম্বর দেখে,পাশে তাকায়,
পক্ককেশের বৃদ্ধমানুষ দেখে চেহারায় নিশ্চিন্তি,স্বস্তির ভাব।
আড়নয়নে জানালা দিয়ে বাহির পানে চায়,
জানালার পাশের সীট পরম আরাধ্য,তরুণী মনে;
একদিন তরুণ ছিল আবিদ রহমান নিশ্চিত জানে।
কিছু মনে কোরনা,আমার সীটে বসতে পার তুমি,
না না আংকেল আমার এ সীটেই ঠিক আছি আমি।
স্নেহের দৃষ্টিতে মমতার সুর ঝরিয়ে অনুরোধ জানায়,
খুশীর ঝিলিক চোখেমুখে তরুণী পাশের সীটে যায়।
যদি কিছু মনে না কর,একটি বিষয় জানতে চাই,
তোমার মুখে যৌবনে চেনা একজনের আদল পাই;
চেন কি এশহরের মেয়ে ছিল খুলশীর রোকেয়া জামান?
হ্যা চিনি! মানে চিনতাম,আমার অসুখী জন্মদাত্রী মা,
তিন মাস আগে অনিরাময় রোগে ভুগে গত হয়েছেন।
মায়ের চেহারা পেয়েছি আমি হুবহু মায়ের মতন,
ত্রিশ বছর পরেও আমাকে দেখে মাকে চিনেছেন যখন;
আমিও বুঝলাম,আপনিই সে,কবি মোহিত জামান।
মোহিত জামান আমার লেখালেখির ছদ্মনাম,
আসলে আমি পোষাকি মানুষ হিসেবে আবিদ রহমান।
আপনাকে দেখে মায়ের কষ্ট আজ আমি বুঝলাম,
গোঁয়ার বাবার বিত্ত আর অহমিকার চরম বলী হয়ে--
তিলে তিলে জ্বলে পুড়ে চিরতরে ক্ষয়ে গেল সে;
আর আমি,আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হারালাম।
কাগজ কলম ও কালি
কাগজ বলে কলমেরে,লেখনী ভাই,
মুখ খোলা তুই দক্ষতায় বড়ই প্রখর;
কষ্ট দিস বুকে মোর নিদারুণ দাগে,
কালির ব্যবহারে টান তব বড়ই তীক্ষ্ণতর।
যতই নিপুণ সুক্ষ্মতায় দাগ টানি আমি,
সাদা কিংবা রঙীন চেহারার তোর বুকে,
আমি কলম উপকরণ,কালিতেই ভাস্বর;
শব্দ বাক্য অক্ষরে বুকে ও পিঠে তোর,
প্রকাশ আমাদের সৃজকের ভাবের স্মারকে।
শোনহে প্রিয় কাগজ ও প্রিয় কলম ভাই,
অনুঘটক তোমরা মানব মনের ভাব ভাবনায়;
ভালোমন্দের কোন দায়দায়িত্ব তোমাদের নয়,
লালকালো আঁচড়ের ইতি-নেতি আমাতে বর্তায়।
ফুল ও প্রজাপতি
ফুলেরা বাগিচায়ই সুন্দর,
কেউ কেউ নান্দনিকতা খোঁজে;
খোঁপায় এবং ফ্লাওয়ার ভাসে...
বাগিচার ফুলে ভ্রমরের গুঞ্জরণ,
উড়ে উড়ে এসে ফুলে ফুলে বসে;
বৃন্ত বা বোঁটা হতে ছিঁড়লেই ফুল!
প্রজাপতি কি আর কখনো আসে?
জানিনা তোমার মন ছেঁড়া ফুল,
নাকি পাখায় পাখায় রঙ ছড়ানো;
রঙীন প্রজাপতি ভালোবাসে...
মৃত্যুর স্বাদ
আমি খাঁদের কিনারে দাঁড়িয়ে,
ধরতে চেয়েছিলাম একটি ঐশী হাত;
আগে জানা ছিলনা ঐশী মানেই,
রোচক গল্প কথার পৌরাণিক ফাঁদ।
অবিশ্বাসী মানুষ বাড়িয়েছিলো দুহাত,
হাত তো ধরিইনি!অলৌকিকতার বিশ্বাসে;
শেষে ভুলের মাসুলে পেয়েছি মৃত্যুর স্বাদ...
নিষ্প্রদীপ মহড়া
তুমি উজ্জ্বল নক্ষত্র এক,
বাকী সব সলতে বিহীন মাটির প্রদীপ...
গাঢ়ো আঁধারের চাদরে ঘেরা চতুর্পাশ, তুমি আকাশের কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদ;
ভুবনডাঙায় আজ মহড়া,যেন নিষ্প্রদীপ...
অক্ষম
"পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।"
আমারও সাধ হয়েছিল তোমাকে ভালোবাসিবার!
সৌন্দর্যের দেবীর আশীর্বাদপুষ্টা রূপের রাণী তুমি,
ঐশ্বর্যের অহংকারে উন্মত্ত হয়ে বসালে বিচার সভা।
তোমার মোহিনী শক্তি আমাকে টেনে নিয়ে এলো,
তুমি তখন রাজেন্দ্রাণীর মতো সিংহাসনে বসা।
তুমি ক্ষুব্ধ নয়নে তাকিয়েই ছুড়ে দিলে অগ্নিবাণ,
মুহূর্তমাত্র আমার আমি যেন নিষ্প্রাণ এক শবদেহ।
তোমার অনিন্দ্য সৌন্দর্য শুধু নয়ন ভরে দেখিবার,
চির অক্ষম আমি তোমার ঘৃণা ও ক্রোধাগ্নি সহিবার;
তাইতো মেনে নিয়েছি তোমার শাপশাপান্তে জীবন্তমরার....
বাষ্প ও স্ফটিক বিন্দু
বাষ্প জমতে জমতে শিশিরকণা,
দূর্বাঘাসের ডগায় ঝলমল স্ফটিক বিন্দু।
অপেক্ষার প্রহর গুনে গুনে একসময়,
উবে যায় রোদের উষ্ণতায় ফের বাতাসে;
একটি মেহেদী রাঙা হাতের ছোঁয়াহীন,
ক্ষণস্থায়ী জীবন অতৃপ্তির বিষাদ সিন্ধু।
শিশিরকণার জমা ও উবে যাওয়া,
একটি পেলব আঙুলের ছোঁয়া না ছোঁয়া;
প্রতি হেমন্ত ও শীত ঋতুচক্রের আবর্তনে,
নিত্য নৈমিত্তিক আনন্দ বেদনার কেন্দ্রবিন্দু...