রচয়িতা হোক সাহিত্য-সামাজিক শুদ্ধির দর্পন- সৈকত আহমেদ বেলাল
রচয়িতা হোক সাহিত্য-সামাজিক শুদ্ধির দর্পন- সৈকত আহমেদ বেলাল

দৈর্ঘ্য-প্রস্থে কলেবর বাড়িয়ে দিলেই যেমন বড় কাগজ হয় না, অপর দিকে কমিয়ে দিলেও তা ছোট কাগজ হয় না। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, ছোট কাগজ কি? প্রকৃত অর্থে লিটল ম্যাগাজিনের চরিত্রই হচ্ছে প্রতিবাদী। সমস্ত প্ররোচনা, প্রলোভন ও তথাকথিত স্বীকৃতিকে বুঁড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আদর্শিক চেতনার দৃপ্ততায় আবিষ্ট হয়ে গণমানুষের দাবীর প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করে তা সাহিত্যের মাধ্যমে নানা ধরণের ঊপমা‘র মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ করাই হলো ছোট কাগজের উদ্দেশ্য।

এর মাধ্যমে সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি, তরুণ/প্রবীন লিখিয়েদের উপস্থাপন ও সাহিত্যের নানামূখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে। আমাদের বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিতে লিটল ম্যাগাজিনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। মানুষের স্বভাব হলো, সে যত দোষ করুক না কেন কেউ যদি সমালোচনা করে তবে তার মধ্যে একটা বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়ে যায়, তৎক্ষণাৎ আত্মপক্ষ সমর্থনের স্পৃহা জাগে নিজের মধ্যে, নানা রকম সত্য-মিথ্যার যুক্তির জাল বুনে সে প্রমাণ করার চেষ্টা করে সমালোচক যা বলছে তা নিতান্তই বাজে কথা, অসত্য কথা, মিথ্যা কথা। আসলে হয় কি, সকল ব্যাপারেই মানুষ এমনই অভ্যেসের ক্রীতদাস যে, নিজের দোষকে দোষ হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত না।

আমরা সবাই নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবি। তাই অন্য কেউ সমালোচনা করলে হোক সেটা সত্য তবু আমরা সেটা কিছুতেই মানতে নারাজ বরং সমালোচককে নিন্দার দৃষ্টিতে দেখি এবং তার কথা মিথ্যে প্রমাণ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ফলে সমালোচকের সাথে বিরোধীতা শুরু হয়। মনে রাখবেন, যারা যুক্তি বুঝে, যুক্তির বিচার মানে তাদের সমালোচনা না করে যদি বোকা এবং ভুল ধারণায় লালিত অর্থাৎ যারা অহমের দ্বারা, ভাবাবেগের দ্বারা পরিচালিত হয় তাদের সমালোচনা করেন তো মহা মুশকিলে পড়ে যাবেন। তাদের সমালোচনা করা যে কত বিপজ্জনক কখনও সম্মুখীন না হলে বুঝতে পারবেন না। সমালোচনা অনেক ক্ষেত্রে ধ্বংস ডেকে আনে। আপনি হয়ত ভাল করার মনোভাব নিয়ে সমালোচনা করলেন, দেখা গেল সে কাজে আরো খারাপ হচ্ছে। সমালোচনাকে আমরা শুদ্ধির দর্পন মনে করতে পারি। নিজের ভুল-ত্রুটি নিজে অনেক সময় আঁচ করতে পারি না, তাই সমালোচকদের লেখায় তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ জন্য সমালোচকদের মূল্যায়ন করা উচিৎ। অবশ্য সমালোচকদেরও উচিৎ গঠনমূলক ও দিক নির্দেশনামূলক সমালোচনা করা। ৮০ পৃষ্ঠার এ সংকলনে দুই বাংলার ১০০ কবি ও কবিতা লেখা থাকলেও বাস্ততে কবি/কবিতার সংখ্যা ১০০‘র বেশি। সম্পাদক এখানে ২টি অংশে বিভক্ত করে প্রকাশ করেছেন (পৃষ্ঠা ৫-৩৭ পর্যন্ত এবং ৩৮-৬৬ পর্যন্ত)। ২টি অংশের ঠিক কি কারণ তা স্পষ্ট করে সম্পাদক প্রকাশ না করলেও স্বভাবতই ধারণা করা হয় বয়োজেষ্ঠতার দিকটি প্রাধাণ্য দেয়া হয়েছে। বলাবাহুল্য, ইতোপূর্বেও আমি বলেছিলাম, ‘কবি/লেখকদের মূল্যায়ন করার মাপকাঠি তার লেখা, বয়স না’।

এবারও মুখ চিনে কবিদের ক্রমবিন্যাস করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। যদিও এ দায়টি সম্পাদক খুব কৌশলে এড়িয়ে গেছেন পৃষ্ঠা ৩ এর শেষ প্যারায়। সর্বোপরি একজন তরুণ সম্পাদক, কবি হিসেবে আরিফুল ইসলাম ইতোমধ্যেই সকলের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে যা পূর্বেই বলেছি। দিন দিন রচয়িতা‘র সুখ্যাতি বন-জঙ্গল-পাহাড়-পর্বত, নদীনালা ভেদ করে অনেক অনেক দূরে চলে গেছে যা পাঠক সমাজই এর মূল্যায়ণ করবেন। ঝকঝকে অফসেটে মুদ্রিত চার রঙের প্রচ্ছদসহ ৮০ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৬০ টাকা। বইটির মূল্য সকল স্তরের পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সম্পাদককে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সেই সাথে যে কথাটি বলাবাহুল্য, গত সংখ্যার চেয়ে এ সংখ্যা মুদ্রণজনিত ভুলের পরিমাণ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে, পরবর্তী সংখ্যায় আরও নিখুঁত হবে এমন প্রত্যাশা করি। প্রচ্ছদের কথা কি বলবো, এম.আসলাম লিটন তো এবারের সংখ্যাতেও বাজিমাত করে দিয়েছেন।

গত সংখ্যার চেয়ে এ সংখ্যার প্রচ্ছদটি আরও উৎকৃষ্ট হয়েছে যা সকলেই অবগত। সুন্দর প্রচ্ছদের জন্য আবারও তাকে অভিনন্দন। সেই সাথে আগামীতে আরও সুন্দর সুন্দর প্রচ্ছদ কামনা করছি। প্রখ্যাত কবি মহাদেব সাহা‘র যতোই বলো কবিতায় তিনি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আবহমান গ্রাম বাংলার শৈশব স্মৃতি। আধুনিক সভ্যতায় যান্ত্রিক ও শহর কেন্দ্রীক সভ্যতার আড়ালেও মনিং স্কুল, পুকুর ঘাট, শিশির কণা, ধানশালিক, জ্বোনাকী এমনকি পুরনো বটগাছের নিচে বসার স্মৃতি এখনো তার মনের আঙিনায় দোলা দিয়ে যায়। তিনি শত ব্যস্ততার মাঝেও সেসব স্মৃতি ভুলে যেতে পারেননি। খুব সহজ ও সাবলীল ভাষায় স্পষ্ট করে তিনি প্রকাশ করেছেন তার মনের আকুতিটুকু।

চট করে রেগে বা চটে ওঠা খুব খারাপ, এতে আপনার ক্ষতি হবে। তিরিক্ষি মেজাজ প্রমাণ করে আপনি অসুস্থ। আপনি চটে ওঠলে হয়তো ঝাঁঝের সাথে কাউকে কড়া কড়া কিছু কথা শুনিয়ে দেন। তাতে আপনি লাভবান না হয়ে বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। হয়তো আপনার মনের ভার কিছুটা লাঘব হবে কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি যাকে ঝাঁঝালেন তার মনের অবস্থা কি হলো? কাউকে বিরক্ত করে তুলে, অসন্তুষ্ট করে তার দ্বারা সুবিধা আদায় করা যায় না। শত্রু বা বন্ধু যাই হোক নিজের স্বার্থ যদি দেখতে চান তবে তাকে নিজের মতে আনতে হলে অবশ্যই সু-সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। কবি হাসান হাফিজ‘র পতাকার ইতিহাস কবিতায় তিনি সুন্দর ভাবে সে কথাটি বুঝাতে চেয়েছেন। অন্যের চাপিয়ে দেয়া নীতিকে তোয়াক্কা না করে এদেশের সকল স্তরের মানুষ গুলি-বোমা-বারুদকে উপেক্ষা করে রক্তপথ পার হয়ে দখলদারদের পরাভুত করে ছিনিয়ে এসেছে পতাকা। প্রবল মনোবল, দৃঢ় প্রত্যয় এবং উদ্দেশ্য কল্যাণকর হলে যে সকল কাজে স্বার্থক হওয়া যায় কবি তা নিজের ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব ইচ্ছা, রুচি ও মনমানসিকতা রয়েছে। এগুলোকে রক্ষা করার জন্য সে যথাসাধ্য চেষ্টা করে। কেউ চায় না তার নিজের মতামত অন্য কেউ জলাঞ্জলী দেক বা অযৌক্তিক মনে করে বাতিল করুক। সমাজের সকল বঞ্চণা, অপরাধ, অন্যায়-অবিচার ও অনিয়মকে ভেঙ্গে নতুন বলয়ে গড়ার প্রত্যয়ে কিছু মানুষ সবসময় কাজ করে যাচ্ছেন।

তারা আগামী প্রজন্মের কর্ণধার। তারা জরাজীর্ণতাকে ধিক্কার দিয়ে স্বপ্নীল ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে জীর্ণ পৃথিবীর জঞ্জাল-ধ্বংসস্তুপ ভেঙে সুন্দর বসবাসযোগ্য এক পৃথিবী গড়ে তুলবে কবি সরোজ দেব তার আগামী কবিতায় এমনই আভাষ দিয়েছেন। পৃথিবীতে খারাপ কাজ করার মানুষের অভাব নেই। আমরা সবাই কম-বেশি খারাপ কাজ করছি। এসব খারাপ কাজ বেশির ভাগই আমরা করি নিজের অজ্ঞাতসারে। জেনে শুনে খারাপ কাজ করার মতো লোকের অভাব রয়েছে। কিন্তু খারাপ কাজ যখন করছি কখনও সেটাকে অপরাধ বা দোষণীয় বলে ভাবি না। কেউ যখন সামাজিক সকল বঞ্চণার বিরুদ্ধে, অন্যায়-অসম নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তখন তার গতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অগ্নির স্ফুলিঙ্গের মত মুহুর্তেই সমাজের সকল জরাজীর্ণতাকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়ার অদম্য শক্তি যার মাঝে থাকে তাকে পিছু ডেকে লাভ নেই কথাটি স্পষ্ট করে বুঝাতে চেয়েছেন কবি যাহিদ সুবহান‘র আমাকে পিছুঁ ডেকে লাভ নেই কবিতায়। তিনি সকল অনিয়ম-বিশৃঙ্খলাকে ধিক্কার জানিয়ে নতুন সূর্যের উদয়ের সাথে শাহবাগ কে তুলনা করেছেন।

যে শাহবাগ হয়ে উঠেছিল এ প্রজন্মের অধিকার আদায়ের আজন্ম হাতিয়ার, আশা জাগিয়েছিল নতুন প্রজন্মের শুদ্ধ করে বাঁচবার দৃঢ় প্রত্যয়। নাস্তিকরা সমাজে সাময়িক ভাবে প্রভাব প্রতিপত্তি লাভ করলেও এদের পরিমাণ খুবই করুণ তা ক্ষুদ্র ভাষায় বৃহৎ পরিসরে বুঝিয়েছেন কবি। অহঙ্কারীরাই চরম দুর্দশায় ভোগে। সমাজে এদের স্থান নেই। এদেরকে কেউ দেখতে/সহ্য করতে পারে না। সামনে এদের কিছু না বললেও মনে মনে এদের সবাই ঘৃণা করে। সমাজের হীনতম ব্যক্তি হিসেবে এরা পরিচিত। ব্যক্তি জীবনের পক্ষে ব্যক্তিত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তিত্বের সীমা নির্ধারিত হয় কথাবার্তায়, আচার-আচরণে, চালচলনে, ধ্যান-ধারণায়, মন-মানসিকতায়। এগুলোর মাধ্যমেই ব্যক্তিত্বের পরিমাপ করা যায় ব্যক্তি বিশেষের। ব্যক্তিত্ব বলতে সাধারণ আমরা বুঝি আমাদের নিজস্ব সত্ত্বার যে সমস্ত গুণ আছে সেগুলোকে সুষ্ঠু বিকাশের সঠিক পথে চালানো। অর্থাৎ এক কথায় নিজস্ব গুণাবলীর প্রকৃত প্রতিফলন ঘটানো। ব্যক্তি বিশেষের বেলায় ব্যক্তিত্বের দিক ভিন্ন হতে পারে। ক্ষুধার জন্য যেমন প্রয়োজন খাদ্যসামগ্রী, জীবন চলার পথেরও তেমনি প্রয়োজন ব্যক্তিত্বের। সবাই সফল হতে পারে না বা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। ব্যক্তিত্বের গুণাবলীই তার পক্ষে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। সফল যারা তারা কাজ করার আগে চিন্তা-ভাবনা করে। প্রতিটি কাজই সে পরম নিষ্ঠার সাথে করে থাকে। তার লক্ষ্য অতীতের অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ায়। সাভারের রানা প্লাজায় কি ঘটেছিল তা শুধু বাঙালি জাতি নয় গোটা বিশ্ববাসীর জানা। সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার অবিনশ্বর স্মৃতির কথা কবি রমজান বিন মোজাম্মেল‘র রানা প্লাজা ট্র্যাজেটি কবিতায় প্রকাশ করেছেন। ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকে পড়া হাজার হাজার মানুষের হাহাকার, স্বজনহারাদের আহাজারি, আহতদের আর্তনাদ সত্যিই সকলের হৃদয় স্পর্শ করেছে। ক্রমেই লাশের তালিকা বড় হতেই চলেছে। চারিদিকে পঁচা লাশের গন্ধ যেন কিছুতেই উৎসুক জনতাকে বাধা দিতে পারেনি। সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে আমরা ‘মে দিবস’ উদযাপন করি। সত্যিই কবি খুব সংক্ষিপ্ত ভাষায় বিস্তর বর্ণনা করেছেন। এসব কষ্টের স্মৃতি কবিকে আজও কাঁদায়, ব্যথিত করে সেই আক্ষেপ তিনি প্রকাশ করেছেন। সফল ব্যক্তির প্রতিভা কোন কিছুতেই স্তব্ধ হয় না বরং দিন দিন উজ্জ্বলতর হয়। একজন ব্যক্তিত্ববান ব্যক্তির মূল্য ও গুরুত্ব সমাজ জীবনে অপরিসীম। চিন্তা চেতনার ধারাকে সুপরিকল্পিত পথে নির্দিষ্ট সীমায় নিয়ে যাওয়াই মূলতঃ সফল ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন।

চলতে ফিরতে খুব লক্ষ্য রেখে কাজে অগ্রসর হতে হবে। সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে নিজের দ্বারা কারো যেন কোন ক্ষতি সাধন না হয়। নিজের স্বার্থের চেয়ে অন্যের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। নীতি ও ব্যক্তিত্ব বজায় রাখতে হবে। সব সময় মানব কল্যাণের জন্য নিজেকে উজার করে দিতে হবে। কবি শিমুল সুলতানা হেপি, শরতের ¯œানে কবিতায় একটি শুভ্র নিটোঁল প্রেমের সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। শৈশবের শরতের শিশিরে ভেজা, শিউলি ফুলের সুগন্ধ, কাশবন এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা মনে করিয়ে প্রিয়তমকে হাওয়ার অভিনন্দন পাঠিয়েছেন।

তার পাঠানো হাওয়ার প্রতিক্রিয়া খুবই দ্রুত ফিরে আসুক নতুন আঙিকে সে প্রত্যাশা করছি। অভিনন্দন কবিকে এমন কবিতা লেখার জন্য। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ভদ্রতার একটি অঙ্গ। বিপদে পড়লেই আমরা সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করি। সাধারণতঃ দেখা যায়, বিপদগ্রস্ত লোক আর নাস্তিক থাকতে পারে না। প্রশ্ন হল, সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে লাভবান হই একথা জানার পরও বিপদে না পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি কেন ? বেশির ভাগ মানুষই আমরা অকৃতজ্ঞ এটা কি এতে প্রমাণ হয় না ? বড় হবার পথ নিয়ে যতই আলোচনা করা হোক না কেন, শ্রম এবং সততাকে বাদ দিয়ে কোন আলোচনাই সাফল্য লাভ করতে পারে না। শ্রম আর সততা যাদুমন্ত্রের মত ফল দিতে পারে, সাহায্য করতে পারে আপনার ভাগ্যোন্নয়নে। জনপ্রিয়তা অর্জন করতে হলে মনে রাখার ক্ষমতা আয়ত্ব করতে হয়। কবি আজিজ আহমেদ‘র অপেক্ষা করছি কবিতায় তিনি সমাজের নরপিশাচ, হায়েনার মৃত্যুসহ সকল অবিচার ও অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা অনিয়ম, সভ্যতার নামে অসভ্য, ভালোর মুখোশে মন্দ এসব রক্তচোষাদের করুণ পরিণতি দেখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। যারা শাসনের নামে শোষণ, সেবার নামে রক্তচুষছেন তাদের ধিক্কার জানিয়ে নতুন আলোয় আলোকিত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। কবির এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা সকলেই শুভকে শুভ বলি আর মন্দকে......প্রিয় পাঠক,

বাকী শব্দটুকু না লিখলে কি খুব কষ্ট হবে বুঝে নিতে ? গান ভালবাসেনা এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। হয়তো কেউ গান গাইতে, কেউ শুনতে আবার কেউ শুনাতে পছন্দ করে। আবার এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা উপরের কোনটি নয় বরং নিজে অতি সঙ্গোপনে গুনগুন করে গান গাইতে পছন্দ করেন। আমরা সকলে জানি, গান মনের খাবার, তাই মনকে চাঙ্গা ও সতেজ রাখতে গান বা বিনোদনের বিকল্প আছে বলে আমি মনে করি না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় গান শোনা, বা শোনাবার অনেক যন্ত্র আবিস্কৃত হয়েছে বহু আগেই। শৈশবে সন্ধ্যার অন্ধকারে ভয়ে ভয়ে একা কোথাও যাওয়ার সময় উচ্চস্বরে সুরবিহীন তারে...নারে...গান গেয়ে নিজেকে সাহসের পরিচয় দেয়নি এমন মানুষের অভাব রয়েছে। যা হোক, এখানে কবি নিজে গান গাইতে না পারার জন্য অনেকটা কষ্ট বুকে চেপে রেখেছেন। তবে নিজে না গাইতে পারলে কি হবে, তিনি তো প্রতিনিয়ত গান শুনেই চলেছেন দেশ তথা দেশের গন্ডির বাইরের স্বনামধন্য গায়কদের বিখ্যাত গান। এতেই বা সান্তনা কম কিসে? কবি প্রকাশ না করলেও তার মনের অজান্তেও কিন্তু মুখ থেকে গুনগুন করে গানের আওয়াঁজ ভেসে আসে হয়তো। বইয়ের স্পর্শে হৃদয় আকাশ আলোকিত হয়, বই হাতে পেলে অনেকে মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রিয়জনকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে যদি সেটা তার পছন্দমত হয়। পূর্ণ জাগরণ কবিতায় কবি সীমারাণী বন্দ্য সকল অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি অন্যায়-অসত্যের সাথে মিতালী না করে কখনও চৈত্রের কাঠফাটা রোদ হয়ে সব পুড়িয়ে-ঝলসাতে চেয়েছেন, কখনও ক্ষমাহীন, বিদ্রোহী মেঘ, সর্বগ্রাসী জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি, প্রেমহীন নির্ভীক সৈনিক হয়ে সমাজের জরাজীর্ণতা, অজ্ঞতা, অন্যায়কে রুখতে চেয়েছেন। তিনি কারও করুণা কামনা করেননি।

ভোগ-বিলাসিতা, প্রাচুর্য্যরে আধিক্যকে তিনি অবজ্ঞা জানিয়েছেন। সকল ভেদাভেদ ভুলে তিনি গড়ে তুলতে চেয়েছেন এক নির্ভেজাল পৃথিবী। যেখানে সকলের ভাল-মন্দ থাকবে সম অধিকারের ভিত্তিতে। কবির এমন প্রত্যাশা সত্যিই জাতির জন্য কল্যাণকর। তাই তার প্রত্যাশা বাস্তবে রূপ লাভ করুক এমন কামনা করি। অপরের সমালোচনা-নিন্দা করার আগে ভেবে দেখুন আপনি তাদের চেয়ে কতটা ভালো। অপরকে সম্মান করা মানে নিজে সম্মানিত হওয়া এটা মনে রাখা দরকার। যা কিছ্ইু লিখুন সুন্দর করে গুছিয়ে নির্ভুল বানানে লিখুন যেন আপনার লেখার মধ্যে ভাষাগত কোন ত্রুটি না থাকে। যাতে পাঠকগণ অস্বস্তিবোধ না করে বরং আনন্দ পায়, মুগ্ধ হয়। মধুময় প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করতে পারলে আপনি একজন জননন্দিত সাহিত্যিক/কবি হতে পারবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।

বুদ্ধদেব বসু লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে বলেন, “এক রকমের পত্রিকা আছে যা আমরা রেলগাড়ীতে সময় কাটাবার জন্য কিনি এবং গন্তব্য স্টেশনে নামার সময় তা ফেলে দিই। আর এক রকমের পত্রিকা আছে যা স্টেশনে পাওয়া যায় না, ফুটপাতে কিনতে হলেও বিস্তর ঘুরতে হয় কিন্তু যা একবার হাতে এলে আমরা চোখ বুলিয়ে সরিয়ে রাখি না, চেয়ে চেয়ে, আস্তে আস্তে পড়ি আর পড়া শেষ হয়ে গেলে গরম কাপড়ের ভাঁজে ন্যাপথলিন-গন্ধী দিয়ে তোরঙ্গে তুলে রাখি, জল, পোকা আর অপহারকের আক্রমণ থেকে বাঁচাবার জন্য।” এটিই লিটল ম্যাগাজিনের বৈশিষ্ট্য। আমাদের দেশে লিটল ম্যাগাজিনের সংখ্যা অনেক, তবে সবই মান সম্মত না।

আর থাকলেও এদের খিন্ন আয়ু এবং প্রাপ্তি সহজলভ্য থাকে না। তারপরেও কিছু কিছু কাগজ তার চোখ-ধাধানো মূল সাহিত্য ধারায় প্রকাশিত হলেও এমন বিশিষ্টতার ঔজ্জ্বল্য নিয়ে তেমন কোন ছোট কাগজ সাহিত্যাঙ্গণে খুব একটা চোখে পড়ে না। উৎকৃষ্ট প্রচ্ছদে কড়কড়ে আমেজ আর নজরকাড়া অঙ্গসৌষ্ঠব অনেক ছোট কাগজের ভিড়েও রচয়িতা আলাদা ভাবে চেনা যায়। সুরুচির উৎকর্ষতা শুধু চেহারাতেই নয় ভেতরের সমৃদ্ধিও উল্লেখ করার মত। এ জন্য সম্পাদকের যোগ্যতা, মেধা, মনন, সাহস আর পরিমিতবোধের যে সমন্বয় দরকার তা পুরোটাই রয়েছে এ সংখ্যায়। একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী বেগবান মাধ্যম ইন্টারনেট। এটাকে আমরা বেছে নিতে চাই প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে, গড়ে তুলতে চাই লিটল ম্যাগাজিনের মিলনক্ষেত্র হিসেবে।

আমাদের সকলের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা রচয়িতা‘কে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাক এ প্রত্যাশায় করছি। 


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান