রজব বকশীর নির্বাচিত ২৫ কবিতা
Π কালো পিঁপড়ার সারি
পাতায় পাতায় কালো পিঁপড়ার সারি
স্থির হয়ে আছে
যখন পড়তে থাকি
ধীরে ধীরে ত্রস্ত পায়ে হেঁটে যায়
পাখা গজিয়ে কখনো ওড়ে
অনুভূতির সুড়ঙ্গ পথে পথে
একটি মেসেজ নিতে
কালো পিঁপড়ার সারিতে হাঁটতে থাকি
Π দিনলিপি
কেউ আমাকে বলছে কিছু মনে হয়
তোমার সপক্ষে ভাববার ডানা মেলবার জন্য
একটি আকাশ তৈরি করে নাও
কেননা সেখান থেকে আলোজল গড়িয়ে পড়বে
পৃথিবীতে শুধু নয়, মনোজগতেও
জেগে উঠবে স্বর্ণালি ফসল সম্ভার
যদিও ভোরের উল্টো পিঠে অন্ধকার জেগে থাকে
এইসব দিনলিপি পাঁচপর্বে প্রস্ফুটিত করে
রৌদ্রস্নাত ভাবনার পথ ধরে হাঁটে
তবু স্বপ্নের আকশি সূর্যমুখি হৃদয়ের গান
আনন্দ ও বিষাদের নুনঘামে সমুদ্রের ঢেউ
তার প্রতিটি স্বপ্নের সেতু নিয়ে যাবে
আগামী দিনের সূর্যদ্বার খুলে দিতে
মানবিকতায় দীপ্ত পায়রা ডানায়
Π জল
ভেজাও অদৃশ্য জলে
যে জলে আগুন আছে
সেই আগুনে পোড়ে যেতে ভালো লাগে
সান্নিধ্যের ছায়ানীড়
ভালোবাসা বলে? পিছু ছাড়ে না সহজে
অন্যরকম বন্যতা অস্তিত্বের পরতে পরতে
দোল খায়
কেমন অদৃশ্য জলে ভিজে যাই
আচমকা রঙধনু ওঠে
রোদ্দুর চুম্বনে
Π শত্রু
ভূমিষ্ঠ হওয়ামাত্র
আলো জড়িয়ে কেঁদেছিলাম খুব
সেই যে আমার চোখে বসেছিল সূর্য
যার আলোয় দেখেছিলাম
আমার মায়ের মুখ
আত্মীয় স্বজন আর পাড়াপড়শির খুশিঢেউ
এবং বিমুগ্ধ হয়েছিলাম
বাবার আজান শোনে
সেই থেকে বেসুরো জীবন
আর অন্ধকার এক নম্বর শত্রু আমার
Π আত্মাচিৎকার
আত্মাচিৎকার নিশ্বাসে তোলপাড় করে
যেন শূন্যতার মধ্যে ঝুলন্ত সময়
উভয় সঙ্কটে পড়ে
তিলে তাল বড় নাজেহাল
লাবণ্যের গভীরতা ফোটে কি ফোটে না
তবু অদম্য ইচ্ছেরা যেন দূর্বাঘাস
একটা ঘোরের মধ্যে জাগতিক স্বপ্ন মনে হয়
নদীর ওপর ঢেউ
ক্রমশ গভীরে স্থির থেকে স্থিরতর
আত্মমগ্নতার এক আয়নামহল
ওই হেরাপর্বতের গুহা থেকে প্রস্ফুটিত হয়
অবিনাশী প্রেমময় আলোকিত গান
কিংবা বোধিসত্তার নির্বাণ বাতিঘর
ওই দেখো বাঁধভাঙা আলোর জোয়ার
ফেরারি আঁধার লেজ গুটিয়ে পালায়
আর যারা মনস্তাপে শুদ্ধ হয়ে ওঠে
একসময় চঞ্চল ভ্রমরের গান গেয়েছিল
নীরবতার গহনে অন্যসুর তোলে
অন্যরকম দিগন্ত উন্মোচন করে
Π পাখিকথা
পাখিকথা মনবনে ডানা ঝাপটায়
অনুভবের মিউজিয়ামে ওড়াউড়ি
দীর্ঘশ্বাসের পালক
গল্প হয়ে ওঠে
আলোজলের স্মারকগুলো মনে হয়
হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর ধ্বংসাবশেষ
তবু ফসিল জোনাক
ঝিলমিল করে
Π ক্ষমা
রক্তের বাঁধন ছিঁড়ে যায় না যদিও
ঈর্ষাবহ্নি নিভে আসে একদিন
অন্ধকূপ থেকে ক্রীতদাস হয়ে ওঠে
সূর্যমুখি ফুলফোটা গান
বন্দির জীবন থেকে মুক্তি দেয় আলোকিত সত্য
যেমন স্বপ্নের ব্যাখ্যা কল্যাণের পথে হেঁটে যায়
ক্ষমা করো পিতামাতা
ক্ষমা করো ভাই
ক্ষমাই উত্তম
মহামিলন বাতাসে পিলপিল সময়ের ঢেউ
Π বাঁশিকথন
বাঁশির হৃদয় কাড়া সুর
সুমধুর
হেমিলনের বংশীবাদক কই?
কোথায় হে কুঞ্জবন
কোথায় যে রোম
বাঁশি হয়ে বেজে ওঠে কেউ
বেজেছিল কৃষ্ণ
নিরু
লোকমুখে জেগে ওঠে
সে কথার ঢেউ
Π এই বুকের মধ্যে
এই বুকের মধ্যে আমিও
পাথর বহন করে
চলেছি জানো না
যে পাথরে লেখা আছে
এনহোদোয়ান্নার হৃদয় নিঙড়ানো পঙক্তি
এই বুকের মধ্যে আমিও
চর্যাগীতির আবহ টের পাই
নবভিক্ষু এক
যে গীত রচনা করে গেছে কুক্কুরিপা
এই বুকের মধ্যে আমিও
ব্রহ্মপুত্রের জোয়ার ভাটা বয়ে যাই
চন্দ্রাবতীর অব্যক্ত বেদনার ঢেউ
সেই সোঁদাগন্ধি বুকে তুমি জেগে আছো
প্রিয় একটি কবিতা হয়ে চিরকাল
Π উপকথা
এই ভোরের রোদ ঝিলিক দিয়ে ওঠে
শিশির জড়ানো ঘাসে দূরের ছায়া পড়ে
কবেকার রাজকন্যার ছেঁড়া মুক্তার মালা ছড়িয়ে আছে
ইচ্ছের রাজপুত্র তা কুড়াতে গিয়ে পাথর হয়ে গেল
আচমকা ঘাসফড়িং ছুঁয়ে যায়
নীরবতার খোলস ভেঙে জেগে উঠি
আর তখন রোদের পালকি চড়ে
উধাও শিশির মুক্তার মালা
Π ভোরের গল্পগুলো কড়া নেড়ে যায়
প্রত্যহ ভোরের গল্পগুলো বন্ধ দরজায় কড়া নেড়ে যায়
কাকলীমুখর রোদফুল ফোটা হৃদয়ের গান
ঘুম ভাঙানো বৈতালী রাই বিনোদিনী
অথচ সময় মালি ফিসফিস করে
অচেতন মনের এক বাউল সম্রাট হাতছানি দেয়
যে নীরবতা পাঠান্তে অন্তর্মুখি হয়ে জেগে আছে
জানা অজানার মধ্যে সারাক্ষণ হাবুডুবু খাই
নিজেকে বুঝার চূর্ণবিচূর্ণ সৌন্দর্যভরা অন্তহীন ঢেউ
সমস্ত ছাপিয়ে গল্পগুলো আরব্য রজনী প্রস্ফুটিত করে
কখনো বণিক যোদ্ধাশাসক প্রেমিক সাধু পটুয়া ও কবি
এইসব মর্মকথা কখনো আড়ালপ্রিয় অপঠিত থাকে
তবু জীবন সুন্দর ভোরের শিশির হয়ে ঝিলমিল করে
এরপরও যদি ব্যাধি শুশ্রূষার দুহাত বাড়ায়
দুর্দিনে সমুদ্র থেকে উঠে আসা স্বপ্নের কঙ্কাল
আসলে সকল ক্ষুধা তৃষ্ণা সমর্পিত এক সংযম সংগ্রাম
কেউ দুর্বৃত্তায়নে কেউবা বৌদ্ধিক পথ অতিক্রম করে
ভুলের পাহাড় থেকে নেমে আসা অনুতপ্ত প্রেমিকের দল
মানুষকে ভালোবেসে হৃদয়ের সিংহাসনে বসতে ইচ্ছুক
Π জলপতন
জলের শব্দে বিচূর্ণ মুখ ভেসে ওঠে
হঠাৎ দুর্যোগপূর্ণ
আবহাওয়া মনের মধ্যে ঝড় তুলে
কবেকার এক ঋষি দেহে ভর করে
ঘন কুয়াশার মধ্যে দূর ঘাটে বাঁধা
নৌকার ভেতর
ছইয়ের অন্তরালে আলিঙ্গন করে
আচমকা মৌনতায়
ঘাই মারে
জলজ স্বপ্নের থেকে জাগতিক সময়ের ঢেউ
Π স্বপ্নের দোকান
দিনরাত খোলা থাকে
স্বপ্নের দোকান
রঙ বেরঙের স্বপ্ন লেনদেন করে
মৌলিক চাহিদা থেকে বিলাস দ্রব্যাদি
সবকিছু পাওয়া যায়
অর্ডার দিলেই
নারী ও কবিতা রাতে
স্বপ্নের দোকান খুলে বসে থাকে একা
আমি বকুল ফুলের মালা হাতে করে
রসিক ভ্রমর এক ছুটে ছুটে যাই
মনের গহীন বনে হিস হিস সাপ
সাপের মাথায় মণি আছে
একবুক লুকোচুরি ভালোবাসা নিয়ে
নারী ও কবিতার গভীরে বুনে যাই
Π আশ্চর্য প্রদীপ
স্বপ্নের সৌজন্য কপি পাঠিয়ে দিলাম
প্রাপ্তি স্বীকারে মেসেজ দাও
বলেছি জীবন ঘষে যতটুকু আলো জ্বলে ওঠে
তাতে আঁধার তাড়ানো অসম্ভব নয়
এই জাদুবাস্তবতা নিয়ে হেঁটে যাই
ভালোবাসার বিশ্বস্ত হাত ধরে
জীবনের নৈসর্গিক ছায়ায় জিরাই
অথবা উড়তে থাকি
চৈতন্য ডানায়
জাদু আয়নায় কালো পিঁপড়ের সারি
উঠে আসে অস্তিত্বের আশ্চর্য প্রদীপ
হৃদয় বিছানো পথে নিত্যলীলাময়
Π জিয়নকাঠি
না হয় মেঘলা চোখ বিষণ্ণ দুপুর
না হয় বাড়ানো হাতে স্বপ্ন ফোটে ঝরে
তবু মায়াবী ভ্রমণে অফুরান প্রত্যাশার ঢেউ
না হয় অনেক বাধা তবু পথচলা
সাত সমুদ্দুর তেরশত নদী পার হয়ে আসা
না হয় পাথর ভাঙা কঠিন সময়
তবু নিজেকে চেনা ও জানার সাধনা
না হয় আকাশ বলতে কিছুই নেই
তবু চৈতন্য প্রবাহে মন ছুঁয়ে যাওয়া
ঘুম ভাঙানো জিয়নকাঠি প্রেমতৃষ্ণা ও বিতৃষ্ণা
Π যে কটা ফুল ফুটেছিল
যে কটা স্বপ্নের ফুল ফুটেছিল
একটি অবুঝ শিশুকাল
সেই কবে ঝরে গেছে
আর একটি কৈশোরবেলা ডানপিটে
হেসে খেলে কেটে যায়
গারো পাহাড়ের পাদদেশে
ব্রহ্মপুত্রতীরে
দারুণ বসন্তকাল সুরভি ছড়িয়ে
দিনরাত কবিতার সাথে বসবাস
কত মধুর সময় পিছু ডেকে যায়
আসন্ন বিকেল ছুঁয়ে সন্ধ্যা এলে স্মৃতি ঝিলমিল
মায়াবী ভ্রমণশেষে ফিরে যেতে হবে
যুবতী কবিতা রেখে না ফেরার দেশে
Π বিবাদ
দুই পাহাড়ের মাঝে শুরু বাঁকা পথ
একদিন এক বীর দম্ভে হাঁটছিল
সেই পথে পড়ে থাকা লাল টকটকে
একটি আপেল তার পদাঘাতে পিষতে চাইলো
অথচ সে দেখল তা না থেতলে আরও ফুলে উঠে
দ্বিগুন আকৃতি নিয়ে বাধা দিতে সামনে দাঁড়ায়
রাগের মাথায় যতই পদাঘাত করতে থাকে
আপেলটি ক্রমাগত বড় হতে হতে
পাহাড় দাঁড়িয়ে এক সময় পথটি
এমন আটকে বসে বেরুবার সব পথ বন্ধ করে দেয়
এথেন বাতাস তার কানে কানে ফিসফিস করে
বিবাদ মিটিয়ে ফেলা কল্যাণের পথ মনে হয়
Π এটুকু আড়াল থাকা ভালো
এটুকু আড়াল থাকা ভালো
আলো নিভিয়ে জ্বালাও
দেহ মোমবাতি
যেভাবে চাঁদের উঁকি ঝুঁকি ডেকে যায়
শরীরের ভাঁজখাদে বসন্ত উৎসব
গোপনে মাতাল মন হাপিত্যেশ
শকুন ভোজন সারে পাখার আড়ালে
আর কুয়াশাচ্ছন্ন নদীর ঘাটে নৌকার উপর
খোলা পাটাতনে ঋষি প্রেমলীলা করে
এটুকু আড়াল থাকা ভালো
সম্ভ্রম আয়না হলে কেঁদে ফিরে পূর্ণিমার রাত
শোনো দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণেও ব্যর্থ দুর্যোধন
Π নিঃসঙ্গ জেলে
এক নিঃসঙ্গ জেলের কথা জানি
নদীর কিনারে থাকে
মাছ শিকার করে না
আর যখন ব্যথার জাল হাতে ছুটে এলো
নদী তখন শুকিয়ে গেছে
তাকে ছুঁয়ে ধুধুবালিচর জেগে ওঠে
দূর নদীর উত্তাল ঢেউ
এসে হৃদয়ে আছড়ে পড়ে
যদিও জীবনস্রোতে ঢেউয়ে ঢেউয়ে
সেই নিঃসঙ্গ জেলের কথা লেখা নেই
Π মাছ
জলে মাছ
আমি ডাঙায় মনের মধ্যে ডুবে আছি
মাছ আর জলাশয় একাকার হয়ে জেগে থাকে
জোয়ার ভাটার মধ্যে ভিন্নমাত্রা প্রস্ফুটিত করে
নানান ভাবনা নিয়ে গুপ্তলীলায় আমিও থাকতে পারি না
কেননা আমার মধ্যে ভিন্নতর মাছ ডুব সাঁতরে বেড়ায়
যা আমার দেহমন চৈতন্য প্রবাহ হৃৎপিণ্ড স্পর্শ করে
কত সোনালি রূপালি মাছের মতন স্বপ্নগুলো উঁকি দেয়
আনন্দ বিষাদে থাকা দিনরাত ঘাই মেরে যায়
Π প্রত্ন
দূরে আছো সেই ভালো নীরবতা প্রত্ন হয়ে গেছে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সময়ের ঢেউ
মনমাটির গভীরে পুরাকীর্তি ধ্যানমগ্ন ঋষি
হাওয়ায় নাশপাতি মদিরার ঘ্রাণ
মদিরাক্ষীর ঘুঙুরধ্বনি শোনা যায়
অনুভবের দেয়ালে মৃগশিঙ চাঁদ হয়ে ওঠে
হঠাৎ অজিন থেকে ডোরাকাটা আলো উঁকি দেয়
প্রত্নতাত্ত্বিক মনন থেকে উঠে আসে হিম হাতিধ্বনি হ্রেষা
স্তব্ধ অস্ত্র জীর্ণ কৌটা কলসি তৈজসপত্র হুক ঈষ হুঁকা
জং ধরা সিন্দুকের মৌন হাহাকার
ওই শোনো দীর্ঘশ্বাসে কার যেন বাঁশি বলে ওঠে
হৃদয় মিউজিয়ামে কাঁটার লতায় হাসে প্রফুল্ল সময়
Π বৃষ্টি এলো
মুষলধারায় বৃষ্টি এলো।
দেখি দুয়ার নদীর শানবান্ধা ঘাট
উঠোনে স্যান্ডেলগুলো নৌকা হয়ে গেল।
মন কিশোর রঙিলা মাঝি বেয়ে যায়।
আম কাঁঠালের ঝরা পাতারাও ভেলা হয়ে ভাসে
কাগজের নৌকাগুলো কল্পনার হাঁস হয়ে ওঠে।
এই প্রচণ্ড গরম ভেঙে পৃথিবী এখন এসি হয়ে গেছে।
বৃষ্টি আমাকে ভীষণ আলোড়িত করে
এই মনে কত স্বপ্ন বীজ বুনে যায়।
বৃষ্টির ফোঁটায়
পথে পথে ধূলো ডানা ভেঙে পড়ে আছে।
অনুভূতির গভীরে
না বলা অনেক কথা প্রস্ফুটিত করে
কত আনন্দ বিষাদ উঁকি দিয়ে যায়
Π রাত্রির চাঁদমুখ দেখি
আমিও রাত্রির চাঁদমুখ দেখি,ঘুমভাঙা আলোর মৌমাছি হুল ফুটিয়ে ভোরের হাওয়ায় উড়ে তাজা,উষ্ণ ও উজ্জ্বল
রোদ্দুরে শরীর মন খোলে জেগে উঠি
রাত্রির আকাশ পড়ে আছে ঘাসে, শিশির ফোঁটায়
ঝলমল উঁকি দেয়, হাওয়ার পালকিতে চড়ে যায় উড়ে,
ফের আকাশে, তীরের ঢেউ সমুদ্রের বুকে ফিরে ফিরে আসে
চোখ বুজলে আঁধারনামা, তবু কেন অন্ধ সেজে
নিজেকে বদলে নিতে চাও?ফলাফল জিরো,জিরো, এই মন
মাটিতে ফলাও সোনা, ধর্মাধর্মে ভিন্নতর স্রোত
পাতা উড়ছে,গাছের সন্ধান নৈকট্যবোধে, প্রেম ও বিরহ
সেতো বহতা নদীর উপাখ্যান এক, নানাবাঁকে ভাঙাগড়া,
জীবনের অবিচ্ছেদ্য এক একটি অধ্যায়, গ্রহণ বর্জনে
এই যাপন প্রকাশ্যে কতটুকু? ততধিক গুপ্তলীলাময়,
আঁধারে চৈতন্যোদয়, হৃদয় সঙ্গীত গায় প্রণয় নির্ঝর,
মানবিকতার সুক্ষ্ম আলো মানুষের মধ্যে আছে, উস্কে দাও
Π নিঃসঙ্গতা ডুকরে ওঠে
অচল মুদ্রার কথা ভুলে যাই
জাদুঘরের কর্নারে মিটিমিটি তারা হয়ে জ্বলে
অথচ প্রাচীন মুদ্রা কত হাতে গেছে
কত সিন্দুকে অথবা ব্যাংকে জমা পড়ে
ফের ছড়িয়ে পড়েছে
অনেক যুগের সাক্ষী এইসব মুদ্রা একদিন
কত মানুষের ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মিটিয়ে আজ অসহায় একা
অচল মুদ্রার মত কত ইচ্ছে স্বপ্ন উঁকি দেয়
এই বুকের মধ্যে ডুকরে ওঠে
কারো সময় হয়না একটু দেখার
স্বর্ণোজ্জ্বল দিনগুলো জ্যোস্নাভেজা হৃদয়ের গান
শ্বাস প্রশ্বাসে তোমার কথা মনে করে
Π জল কথন
চিরকাল রূপে গুণে ত্রিধারায় চলে
জল জন্মের কথন
ও আগুনের কুসুম সুবাসিত গান
জলে ভরা পরমা কলসি
পিপাসা মেটাও
ও বরফকুচি হিম আয়না পালক
তুষারপাতের ঝড় বয়ে যাও
প্রীতিমুগ্ধ উষ্ণতায় গলে গলে পড়ো
ও ধোঁঁয়ার ডানা কাটা মেঘরং পাখি
বৃষ্টির নূপুর পায়ে ঝড় তুলে যাও
চমকাও বিদ্যুত ফণায়
এই রহস্যের গিঁট খুলে দাও পরম পুরুষ
রজব বকশীর জন্ম ১ অক্টোবর ১৯৬৫ এ বকশীগঞ্জ, জামালপুর। পিতা হায়দার আলী ও মাতা অজিফা খাতুন। স্ত্রী জাহানারা পারভিন। তিন পুত্র আবু আবরার, রাকিব হাসান ও আবির হাসানসহ বসবাস করেন বকশীগঞ্জ। বকশীগঞ্জ খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজে সহকারি অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত। আশির দশক থেকে লেখালেখি করেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন ম্যাগাজিন,পোর্টাল, ই- পত্রিকা, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ :
ধূসর
এলবাম (১৯৯৬), ডুমুর ফুলের মউ (ছড়া : ১৯৯৭) উদ্ধত আঁধার (২০০৯), যে হাতে
পায়রা ওড়ে (২০২৩), সেইসব দরজা জানালা জেগে ওঠে (২০২৩), ছায়াসঙ্গি মায়াসঙ্গি
(২০২৪), তৃষ্ণার ধ্বনি প্রতিধ্বনি (২০২৪)।
গবেষণা গ্রন্থ :
জামালপুর জেলার মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস ( ২০০৯)।
জামালপুর জেলার ইতিহাস (২০১১)।
সংগ্রাহক: বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি গ্রন্থমালা
জামালপুর (২০১৩),বাংলা একাডেমি।
সমন্বয়ক : বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ গ্রন্থমালা
জামালপুর (২০২০),এশিয়াটিক সোসাইটি।
গীতিকার : বাংলাদেশ টেলিভিশন (২০০৯)।
বাংলাদেশ বেতার ( ২০১১)।
সম্পাদিত পত্রিকা : আরশি
পুরস্কার : বকশীগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা (২০১১)
মুক্তির রং ভালোবাসি জামালপুর সম্মাননা ( ২০১৭)