রমেন মজুমদার এর কবিতাগুচ্ছ
রমেন মজুমদার এর কবিতাগুচ্ছ

কবিতার উঠোন ভেজা


পোয়াতি আষাঢ়ের রজস্বলায় অম্বাবুচির 
প্যাড এখনো উঠোন স্যাঁতস্যাঁতে ! সারাদিন কলহ
করে জানান দেয় ও বাড়ির নন্দার মা'
সেদ্ধ ধানে বুনানের আগেই গাছ হতে লাগলো।

কে বলে বৃষ্টিরা দুর্বল! ওরা কৃপা করে ছাদে শ্যাওলা জমিয়ে দেয়, 
ক্যাত ক্যাত করে গড়ান দেয় কৈ মাছের চালি!
ভেঁজা নৌকোর খোল প্রেমপত্রের নাও
ভেসে যায় না খাওয়া দুঃখীদের ক্রোন্দিত গঙ্গায়!
টুপ করে ডুবে যায় জলাধারে নিশিকলায় সৌখিন
ঘামঝরা কাতুকুতু !
দুষ্টমীরা খিলখিল করে হাসে ভেসে যাওয়া স্রোতে।

আষাঢ়ে এক্কা দোক্কা খেলার মাঠে যুবতী
ভিজে যায় বিনুনি করা চৌকস চুলের আলফেট ,
টিপ টিপ করে জীর্ণ টিনের চাল বেয়ে
ফোটারা পরে মাটির কলসিতে!
গুঁটিতে রাখা সামিয়ানা অর্ধেক ভিজে একাকার!
দিনযাপনের ভাঙা হাড়িতে কলির আঁচড় পড়েনা
বৃষ্টি ভেঁজা দারিদ্রে ।

এখনো উঠোন ভিজে থাকা অনাহারী মুখগুলো
ভিক্ষার থালা নিয়ে কঁকিয়ে কাঁদে রাস্তায়----
একমুঠো ভাতের আশায় শিউলিরা গুপ্ত সম্পদ বাজি রাখে দরকষাকষিতে ।
আমার কবিতার উঠোন ভেঁজা, তবুও শুকায় না বারোমাসি দুঃখের করুন অভিশাপে।।

ভিজে যায় নামাবলী!


ভেজা পাতার গচ্ছিত জল আমার স্নানের
বৈতরণী শুদ্ধ করে
শব্দ মেলায় বৃষ্টির ফোঁটায়---
ইচ্ছা কল্পে ভেজায় দৈহিক আনন্দ!
মুষড়ে থাকা পাঁপড়ি গুলো প্রাণ পায় সৃস্টিতে।

মুঠো মুঠো সুখ কঁকিয়ে কাঁদে জলাধার শ্মশানে,
ভস্মের ধূলি উড়ে যায় আকাশে
মেঘেদের বাতায়নে; জল পবিত্র হয়ে বৃষ্টি নামায়
আমি স্নান করি,শুদ্ধ হই!

ভিজে ভিজে শিখে নাও পবিত্রতার এককখামার,
জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে আমার আচ্ছাদন 
জলপাতার ছোয়া সুখ ঠোঁটস্থ করে নিই শিখন্ডি হবার আগেই----
ইচ্ছে হলে এখনো ছুঁইয়ে নিই জলের গতিবেগ! 

এখনো কদম ঘেষে বকুল পল্লভ মেশামিশি করে
ভাবি প্রণয় সম্বোধনে !
টুক করে ঝরে যাওয়া শিশির দানায় সিক্ত হই,
কুড়িয়ে নেই বকুল ফুল
ঈশ্বরের আশীর্বাদে বিসর্জন দিতে।
শিউলিরা বেহায়া ধর্মের,
হওয়ার ভার সইতে পারেনা, তাই অনুভবের 
উন্মাদনায় সুগন্ধি ছড়ায় চুপি চুপি!

ঝড়ভাঙ্গা  ফুলেরা সাংঘাতিক লোভী!---সর্বদা চায়
দেবীর আশীর্বাদ লুটে নিতে, কাঠিন্য প্রাসাদের  পুঁজিত ফুলের গন্ধ দেয়ালে বারীক্ষয়ে
মৃত্তিকায় যায় গড়াগড়ি।

আর কতদিন লাগবে সাবালক হতে !
কঁচি পাতা ঝরা থেকে মুক্ত করার দায় কার?
আমরা কি চামুন্ডির মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজবো
এসিড বৃষ্টিতে !

কঁচি পাতার আকুতি ভেঁজাকন্ঠ এখনো বৃষ্টি হয়ে নামে ,ভিজে যায় পবিত্র নামাবলি!
ঘনীভূত কালো মেঘ সরিয়ে রাখি আকাশ হতে,
মিথ্যা পাপের রাজপ্রাসাদ থেকে পালিয়ে যাই
আমার মাটির ঘরে
যেখানে সুখ শান্তিতে ঘুমায়।।

সৃষ্টির উল্যাস


প্রত্যাশিত যোগফলে আবার ভাগের নমুনা,

কাঙ্খিত সুখে কবিতারা কাঁদে কঁকিয়ে!

নরাধম পাশবিক দলন করে কবিতার অক্ষর!

আপাতত তুলে রাখি

না মেলা খাতার খুনে ধরা দেবত্তর সম্পদের হিসাব!


কবিতা লিখতে চেয়েছি আমার অংকের ভবিষ্যৎ!

মিলবে সবটাই,

আক্ষরিক কালভ্রান্ত শব্দের ছকে যে বা যাহারা

আমার কবিতার মর্মার্থ না বুঝে;

না জানে তার বুকে কতটা কষ্ট জমে আছে?

তার পর সমাপ্ত করে চন্দ্রমল্লিকাকে স্বাগত জানাই।


আমার কবিতা, আমার মা ---

একটি দেশ ,একটি সৃষ্টির নির্দেশক যা'ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক অনবদ্য অঙ্কের সারলিক শব্দ!

ওরা এগিয়ে নিবে যাবে আর একটি নতুন পৃথিবী সৃষ্টির কল্পিত ভাবনায়।


ব্যত্যয়ী ভাবনার অনুকূলে গুটিকয় শব্দেরা বসুক,

প্রত্যয়ী অহংকার আপাতত তোলা থাক নামতার আদিঅক্ষরে,

যাতে দুষ্টদের দমনে নির্ঘাত একটি মাতৃসুলভ কবিতা সেটে দিবো নবসৃষ্টির ফর্মায়-----


শব্দ দিয়ে শব্দের জননীকুলকে রক্ষা করি

ওরা যত কবিতা তত নারী !

প্রজনন আতুর ঘর কবির কলমে উত্তরউত্তোর বৃদ্ধি পাক জীব ও জগতে।


আমার কবিতারা আর কত ধর্ষিত হবে? কত অঙ্কের খাতা বেহিসাবে পরে পরে মার খাবে ঘুনেদের

বন্দিপাঠশালায় ?

একটা সৃষ্টির জৈবিক চেতনা সারলিক গুনাবলিতে

স্বধর্মে দীক্ষিত হয়ে আমার মাতৃসম গোটা কবিতাই

পুণ্যধামে বিরাজিত থাকুক।

একদিন সৃষ্টির উল্যাসে মেতে থাকবে আমার

আগামী ভবিষ্যৎ।।


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান