রহমান হাবিব এর চারটি কবিতা
চিহ্ন
দাগ থেকে যায়।
জন্মের দাগ,
আনন্দের দাগ,
হাসি, কান্না, যন্ত্রণার দাগ থেকে যায়।
সুরভিত সুবর্ণ ফুল,
দিন শেষে ঝরে গেলে
দাগ থেকে যায়।
সবাই চন্দ্র দেখে।
চাঁদের আলোয় অনেকেই
ভিজে যায় অবলীলায়।
অনেকে চাঁদের গায়ে কলংক খোঁজে,
কলংকের সাতকাহন শেষে
চাঁদের গায়ে দাগ থেকে যায়।
সকলেই ভালোবাসা চায়।
যারা পায়, পায় কি?
আর যারা পায় নাই কোনোদিন!
অর্থহীন প্রলাপে,
বেদনার বিষ বাষ্প ছড়ায় কেবল।
হতাশার ভাঁজে ভাঁজে
শুধু দাগ থেকে যায়।
চোখ
চোখের কোণে সমুদ্র নেই।তবু বেলা অবেলাতে জলের ধারা,দিনে রাতে যখন তখনইচ্ছে মতো ঝরতে থাকে।কিসের শোকে, কিসের মায়ায় কেউ জানে না।চোখের ভেতর নুন থাকে নাতবু যখন গড়িয়ে পড়ে কপোল বেয়ে,কেমন যেন নোনা লাগে।উথলে ওঠে কান্না যখনঝাপসা লাগে সকল কিছুই।চোখের মাঝে আগুন কোথায়?তবু সে চোখ ঝলসে ওঠে প্রবল ক্রোধে।চোখে বরণ রক্ত লালেকাছের মানুষ ছাই হয়ে যায়।চোখের তারায় মান থাকে কী?অভিমান, অপমানেচোখের তারায় বিষাদ আসে।সেই বিষাদে শুরুর খেলায়ভালোবাসা শেষ হয়ে যায়।
জাদুঘর
সবকিছু প্রাসঙ্গিক নয়।
কোনোকিছু সমসাময়িক নয়।
কিছু পুরান,
কিছু সত্য,
আর কিছু অনুমান,
এই নিয়ে সকল কর্মযজ্ঞ।
আমাদের বেণীমাধব,
তার পাঁজরের হাড়,
বিস্ময়ে স্তব্ধ দৃষ্টি,
লুকায়িত দীর্ঘশ্বাস,
মিলে যায় হুবহু।
কালে কালে সব ফুরিয়ে যায়।
হারিয়ে যায় কিছু,
কিছু স্মৃতি বেমালুম ভুলে গিয়ে
খুঁজে ফেরে অন্ধকারে।
আর কিছু কুড়িয়ে পাওয়া পাঁজরের হাড়,
বেণীমাধবের বুকের হাড়ের মতো,
সাজিয়ে রাখি জাদুঘরের অলিন্দে, প্রকোষ্ঠে।
লিখে রাখি নাম,
লিখে রাখি স্মারক নম্বর,
আর লিখে রাখি বিস্তারিত সব
বিজ্ঞাপনের ভাষায়।
রঙমহল
যদি ফেরো,
নিয়ে এসো কিছু সাথে করে।
যা কিছু হারিয়েছি দুজনে মিলে,
প্রেমে, ভালোবাসায়, অভিমানে, অহংকারে
তার কিছু ফিরবে না জানি।
যদি ফেরো,
ফিরে এসো তবে আঁধারের আগেই।
দুজনের যা ছিলো ধৈর্য্য, আকাঙ্খা, চেনা পদছাপ
আর্তনাদে হয়েছে বিলীন।
রাতের নির্জনে আর কেউ জাগি না।
যদি ফেরো,
সৌরভ কিছু, আর কিছু রঙ এনো।
ধূসর জীবনযাত্রায় যদি বর্ণ আসে!
বৈচিত্র্য আসে রকমারি মৃত্যতে,
সৌরভের অবশিষ্টে।
ফিরবে না জানি,
যারা যায়, তারা আর ফেরে না।