রহমান হেনরীর কবিতাগুচ্ছ
রহমান হেনরীর কবিতাগুচ্ছ

কুসুমিকা


ভিতরে কুসুম। ফোটে। আকাশে কী বজ্রচেরা ডাক!
‘যাবো না, যাবো না’— তবু, চলে যাচ্ছি বিভ্রমের দিকে
অবিরাম। বিহারে-বিহারে, সত্যি, কত যে ফারাক—
বুঝাতে পারিনি কোনও ভূখণ্ডের আধা-সঙ্গিনীকে;

ভ্রমণের শখে নয়— আমরা ঘুরেছি সর্বলোকে
যোদ্ধা ও সন্তের মতো; তাতে শুধু জীবনের দায়;
ফুটিয়েছি শত শোভা বিপর্যস্ত ক্ষুধার গোলকে—
হায়, ঋষি! পুষ্পেরাও কি ধর্মে পৃথক হয়ে যায়?

বাহিরে কুসুম। পোড়ে। মর্মে খোলা অজস্র দিয়ার;
অবশেষে, দেখো: অরণ্যেই তো নামলো পাখিদল—
সকলেই যাযাবর। —ভবঘুরে ছাড়া সে, কী আর!
ঠিকানা বোঝেনি কোনও বাসনার বিচিত্র অঞ্চল।

তা হলে? বিহারে যাই, সব তীর্থ পড়ে থাক পথে;
বানপ্রস্থ সত্য হোক— সন্ন্যাসীর সংসার-শপথে!

অ-পরকীয়া


সম্বোধন শেষ হলো অল্পে-স্বল্পে: ‘এ-ই’ কিংবা ‘ওলো’তেই

কিছুটা পিছিয়ে গেলে,
আধোরাতে, এখনও তোমাকে পাই— দু’হাজার ষোলতেই

২.
বানোয়াটে সামাজিক হতে নেই; তাই কোনও ছলনা শিখিনি

আজ আরও মনে পড়ছে:
শুধু তো বন্ধনী নয়— তোমার অনেক প্রিয় গোলাপি বিকিনি

৩.
কেউ যদি প্রেম দেয়— যত্ন করে, বহুদিন, বিছানায় রাখি

তুমিও তো দিয়েছিলে!
ঢিলেঢালা, শক্ত মলাটহীন, পরস্পর বিপরীতমুখি দুটো পাখি

৪.
পর্বতগুহায় ঢুকলে, পথ হারাবার ভয়; আর ভয় স্ত্রীলিঙ্গ ফুল

দ্বিধাক্রান্ত আম্রপালি,
লাভাপ্রপাতের তাপে ভয় কেন? তুমিও কি মোমের পুতুল!

মৃত-প্রেমিকার ঠোঁটে

দৃশ্যের চমকে তীব্র আঁধারের প্রান্ত কেঁপে ওঠে—

কম্পিত কাচের মতো এ-রাতের শাড়ির আঁচলে
নিজেকে বিম্বিত দেখি: যেন মৃত-প্রেমিকার ঠোঁটে
পৃথিবীর শীতঋতু বরফের দোলনায় দোলে!

আমি সেই নিথরের সমগ্রে চুম্বন
এঁকে দিচ্ছি। গলিত লবণে আর উষ্ণতার স্বাদে
আজ কারও অস্তিত্বের গভীর প্রমাদে
আঁকা হচ্ছে: অন্য কোনও স্মৃতি-বৃন্দাবন।

তোমার মুখের মতো আবছায়া আঁধারের মুখ
উঁকি দিচ্ছে হৃৎপিণ্ডে— গোপন অতলে;
দিকে দিকে জগতের যাবতীয় জলে
মাছের মতন কিছু খুদে-প্রাণি আবারও উৎসুক:
ভূমিখণ্ডে সাম্রাজ্যের পসার ঘটাবে—

আমি যাচ্ছি আগুনগিরিতে; সঙ্গে তুমিও কি যাবে?

অর্ধপ্রাণ

এসো
স্মৃতির অমৃতে রাখো ঠোঁট
আর দেখো: বিগত ও মৃত-দিনগুলো

একটা দর্পন ছিলো— ডাইনির মত সর্বনাশী,
সময়ের চেহারা-আদল গিলে, নিঃশব্দে ফিরে গেলো
কুহকাফ নগরের পথে;

সময় পাথর হয়ে মরে যাচ্ছে পশ্চাদভাগে,
শুধু তার অগ্রভাগ সত্য ও জীবিত। আজও সেই
অর্ধপ্রাণ সময়ের উদ্ধৃত বাটিতে রেখে ঠোঁটের বিন্যাস
চুমুকে চুমুকে আমি পান করি জীবনের স্নেহ;

এসো
কালের বাটিতে রাখো ঠোঁট
আর দেখো, পেছনের দিকে কত পাথরের বিন্যস্ত বাগান!
ওখানে আবারও এক আয়নার জন্ম হবে। প্রতিফলনের মধ্যে
দেখা যাবে— আমাদের দ্বিতীয় জীবন—
.

.


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান